শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। ৭০ বছর বয়সে এসে বুঝলেন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা। তাই নাতি- নাতনীদের সঙ্গে ভর্তি হয়েছেন স্কুলে। বরাদ্দ পেয়েছেন সরকারি বই। এখন তারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিশুদের সঙ্গে তারাও ক্লাস করছেন। রপ্ত করছেন বর্ণ অক্ষর জ্ঞান। শিশুরা এমন বয়স্ক ছাত্র পেয়ে তারাও খুশি। শিক্ষার যে কোনো বয়স নাই প্রমাণ করলেন এই সব বয়স্ক ব্যক্তি। সাংসারিক কাজকর্ম শেষে স্কুলের সময় প্রতিদিন তারা নাতি-নাতনীর হাত ধরে স্কুলে চলে আসেন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জেনাজুল ইসলাম জানান, স্কুলে লেখাপড়া করার জন্য প্রথমে ৪ জন বয়স্ক ব্যক্তি তার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি তাদের আগ্রহকে আমলে নিয়ে স্কুলে ভর্তি করিয়ে নেন, বরাদ্দ দেন তাদের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির বই। সেই বই পেয়ে তারা প্রতিদিন স্কুলে এসে শিশুদের সঙ্গে লেখাপড়া শুরু করে দেয়। তাদের লেখাপড়ার আগ্রহ দেখে আরো ৫ জন বয়স্ক ব্যক্তি সেই স্কুলে ভর্তি হয়। এখন স্কুলটিতে ৫০ থেকে ৭০ বছরের কোঠায় ৯ জন বয়স্ক ব্যক্তি শিশুদের সঙ্গে লেখাপড়া করছে। আগামীতে আরো বয়স্ক ছাত্র ভর্তির সম্ভাবনার কথা জানান তিনি। স্কুলে ভর্তি হওয়া বয়স্ক ছাত্র ইলিয়াস, সিদ্দিক ও বদিউজ্জামান জানান, পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে তারা লেখাপড়া করতে পারেননি, টিপসই ছিল তাদের প্রধান অবলম্বন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যখন তাদের স্বাক্ষর করার জন্য কলম কাগজ দেয়া হয়, তখন তারা লজ্জায় পড়তেন। কর্মকর্তা তাকিয়ে থাকতেন তাদের দিকে। লজ্জা বোধ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাদের মধ্যে লেখাপড়ার আগ্রহ তৈরি হয়। সেই আগ্রহে তারা অক্ষর জ্ঞান রপ্ত করতে স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে প্রাইভেট পড়েন গৃহশিক্ষকের কাছে। স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ছাত্ররা হলেন- সিদ্দিক মিয়া (৬৫), আছাদুল ইসলাম (৭০), বদিউজ্জামান (৭০), আঃ লতিফ (৫০), বাদশা মিয়া (৫৫), শাহিনুর আলম (৫০), লাল মিয়া (৪৮), আবু বক্কর (৭০), ইলিয়াস আলী (৭০) এরা সবাই মাহমুদপুরের বিভিন্ন পাড়ার বাসিন্দা। এলাকাবাসী বলছেন শিক্ষার যে কোনো বয়স নেই তাই প্রমাণ করলেন এলাকার ৯ জন বয়স্ক শিক্ষার্থী। তাদের দেখাদেখি আরো অনেকে স্কুলে আসবে, সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূর হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.