স্টেডিয়ামপাড়ায় হকি আর আর্চারি যেন পড়শি। মুখোমুখি দুই ফেডারেশন—গ্যালারির পশ্চিমে হকি, পূর্বে আর্চারি। নীল টার্ফে এত দিন সাদা বল নিয়ে হকিস্টিক হাতে ছোটাছুটি করেছেন জিমি, চয়ন, মিমোরা। এবার সেই নীলের ওপর একাগ্রতায় দাঁড়িয়ে তির ছুড়বেন তামিমুল-শ্যামলীরা। ঢাকায় আজ শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক সলিডারিটি আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ ঘিরে পুরো স্টেডিয়ামেই তাই উৎসবের আমেজ।
৬০ আর ৭০ মিটার দূরত্বের নিশানা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে মাঠের মাঝখানে। কাঠের মার্কিং বোর্ডগুলো নিয়ে ফেডারেশনের কর্মীরা দৌড়াদৌড়িতে ব্যস্ত। বাংলাদেশের কোচ নিশীথ দাস ব্যস্ত আর্চারদের শেষ মুহূর্তের অনুশীলন নিয়ে।
বেলা দুইটায় অনুশীলনে চলে আসে ভুটান ও সুদান। ঘণ্টাখানেক পর বাংলাদেশ দলও তির-ধনুক নিয়ে মাঠে উপস্থিত। শেষ বিকেলে তড়িঘড়ি করে আসে লিবিয়া ও ইরান। বাকি দলগুলোর গত রাতেই পৌঁছানোর কথা। যদিও গতকাল পর্যন্ত ভিসা না পাওয়ায় পাকিস্তানের আসা অনিশ্চিতই বলা যায়। করাচিতে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘জ্বলন্ত ফ্লেয়ার’ নিক্ষেপের ঘটনার পর ভিসা পাওয়া নিয়ে আয়োজকেরা আরও বেশি সংশয়ে। যদিও বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপল আশাবাদী, ‘আমরা পাকিস্তানকে আনতে পারছি না, কারণ এখন পর্যন্ত তাদের ভিসা নিশ্চিত হয়নি। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করব তাদের জন্য।’
আগামী নভেম্বরে ঢাকায় হবে এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ। ৩২ দেশের ওই প্রতিযোগিতার একটা মহড়া হিসেবে দেখা হচ্ছে এবারের আন্তর্জাতিক সলিডারিটি চ্যাম্পিয়নশিপকে। অন্তত ফেডারেশনের সম্পাদক সেটাই মনে করছেন, ‘এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ড্রেস রিহার্সেল হয়ে যাচ্ছে এটি। আমরা এখন ১৭টি দেশ নিয়ে টুর্নামেন্ট করছি, ৩২ দেশ নিয়ে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ করতে পারব।’
ঘরের মাঠে এমন একটা টুর্নামেন্ট হচ্ছে ভেবে ভীষণ রোমাঞ্চিত বাংলাদেশ দলের আর্চার শ্যামলী রায়, ‘বাংলাদেশে প্রথম এমন বড় আসর হচ্ছে দেখে খুব আনন্দ হচ্ছে।’ গত আগস্টে রিও অলিম্পিকে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। তবে মুখিয়ে আছেন বাংলাদেশে ভালো কিছু করার, ‘রিও অলিম্পিকে যাওয়ার আগে যেমন স্কোর করছিলাম এখনো তেমন করছি। কোনো ত্রুটি রাখছি না অনুশীলনে। তারপরও আমি রিওতে যেটা করতে পারিনি সেটা এখানে করার চেষ্টা করব।’
অনুশীলনে নিয়মিতই গড়ে ৩২০ স্কোর করছেন নড়াইলের তরুণী। এই স্কোর দিয়েই সোনা জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। বাংলাদেশকে নিয়ে দারুণ আশাবাদী কোচ নিশীথ দাসও, ‘টুর্নামেন্টটা আমরা উপভোগ করতে চাই। এটা নিয়ে বাড়তি চাপ নেই আমার। কারণ আর্চারদের পারফরম্যান্স ভালো, স্কোরিং ভালো করছে। আশা করি, বাংলাদেশ নয়টা পদকের মধ্যে অন্তত পাঁচ-ছয়টা জিততে পারবে।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.