নিজেদের হস্তক্ষেপবাদী পররাষ্ট্র নীতির অবসানের ঘোষণা দিলেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। ওয়াশিংটনে প্রথম বিদেশি নেতা হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার প্রাক্কালে এ কথা বললেন তিনি। তার ভাষ্য, দেশে দেশে গিয়ে নিজেদের আদর্শ স্থাপনের দিন আর নেই। ওয়াশিংটনে রিপাবলিকানদের উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে মে বলেন, দুই দশকের ব্যর্থ পররাষ্ট্র নীতির দ্বার বন্ধ হলো। এ পররাষ্ট্র নীতির কারণেই বৃটেনকে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে জড়াতে হয়েছে। তিনি অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, নিজেদের মতো করে দুনিয়াকে আর কখনই সাজানোর চেষ্টা করা উচিত হবে না বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের। এ খবর দিয়েছে স্কাইন নিউজ। খবরে বলা হয়, সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের ‘উদারনৈতিক হস্তক্ষেপবাদে’র তত্ত্ব থেকে প্রস্থানের ছাপ ছিল তেরেসা মের বক্তব্যে। ১৯৯৯ সালে শিকাগোতে এক ভাষণে ব্লেয়ার বলেছিলেন, বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ একনায়কদের চ্যালেঞ্জবিহীন ছেড়ে দেয়া উচিত হবে না বৃটেনের। সেখান থেকে এখন অনেকটাই পৃথক বর্তমান বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের অবস্থান। নিজ স্বার্থ ভিত্তিক পররাষ্ট্র নীতির দিকে ফিরবেন তিনি। মে বলেন, পশ্চিমা মূল্যবোধ ও ধ্যানধারণা বিশ্বমঞ্চে অবশ্যই তুলে ধরতে হবে বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রকে। কিন্তু এটি যে কোনো কিছুর মূল্যে হতে পারে না। তিনি সতর্ক করে দিয়ে আরো বলেন, ‘এর মানে অতীতের ব্যর্থ নীতিতে ফিরে যাওয়া হতে পারে না। আমাদের নিজেদের মতো করে দুনিয়াকে পুনর্গঠন করার চেষ্টা করতে গিয়ে সার্বভৌম রাষ্ট্রে আমেরিকা ও বৃটেনের হস্তক্ষেপের দিন ফুরিয়েছে। আমাদের এখন অবশ্যই শক্তিশালী, বুদ্ধিমান ও বাস্তবিক হতে হবে।’ গতকাল ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসার কথা মে ও ট্রাম্পের। এতে তারা পররাষ্ট্র নীতি নিয়েই আলোচনা করবেন। পাশাপাশি, ইইউ থেকে বৃটেনের প্রস্থানের পর পরই দ্রুত একটি বাণিজ্য চুক্তি করার সম্ভাবনা নিয়েও দুই নেতা আলোচনা করতে পারেন। এ বৈঠকের প্রাক্কালে তেরেসা মে পরিবর্তিত পররাষ্ট্র নীতির যে ইঙ্গিত দিলেন, তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাবনার সঙ্গেও কিছুটা মিলে যায়। ট্রাম্প বলেছিলেন, মার্কিন সেনাবাহিনীকে কিছুতেই ইরাকে পাঠানো উচিত হয়নি। কারণ, ওই যুদ্ধ পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে তোলে। ফিলাডেলফিয়ায় বৃহস্পতিবার এক ভাষণে, তেরেসা মে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের ‘বিশেষ সম্পর্কে’র প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই সম্পর্ক আধুনিক বিশ্বকে সংজ্ঞায়িত করেছে। লাখো মানুষের মাঝে স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধ এনে দিয়েছে। তবে ট্রাম্পের অবস্থানের বিরুদ্ধে গিয়ে রাশিয়ার ব্যাপারে বেশ কড়া বক্তব্য দিয়েছেন মে। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে সঠিক কাজ হবে যোগাযোগ বাড়ানো, কিন্তু সতর্ক থেকে। তিনি বলেন, পুতিনের সঙ্গে সংঘাত এড়ানো সম্ভব। কিন্তু পূর্বাঞ্চলীয় ইউরোপের দেশগুলোকে পুতিনের প্রভাব বলয়ে যেতে দিলে এর পরিণতি কী হবে, তা নিয়েও সতর্ক করে দেন মে। পাশাপাশি ইরান নিয়েও বক্তব্য দেন তেরেসা মে। তিনি যখন ইরানের ‘ক্ষতিকর প্রভাবে’র নিন্দা জানান, রিপাবলিকান দর্শনার্থীরা দৃশ্যত ভালোভাবেই তা গ্রহণ করেন। তবে মে সতর্ক করে দেন, গত বছর ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের যে পরমাণু চুক্তি হয়েছিল, সেটি ভেস্তে দিয়ে দেশটির ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপে ট্রাম্পের যে পরিকল্পনা, তাতে বৃটেনের সমর্থন নেই।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.