ফুটবল তাঁর পেশা। ভালোওবাসেন। তবে এর পাশাপাশি সম্ভবত ইবনে বতুতার চেতনাও নিজের মধ্যে ধারণ করেন অ্যারিস্টাইড বান্স। এত বেশি দেশে ঘুরেছেন, মাঝে মাঝে ভ্রমও হতে পারে, বুরকিনা ফাসোর এই স্ট্রাইকার আসলে খেলার জন্য ঘোরেন, নাকি ঘোরার জন্য খেলেন? পেশাদার ফুটবল শুরু করেছিলেন এই শতাব্দীর শুরুতে, ২০০০ সালে। তার মানে ক্যারিয়ারে ১৭ বছর চলছে। এরই মধ্যে বান্সের পাসপোর্টে পড়ে গেছে জার্মানি, বেলজিয়াম, দুবাই, ইউক্রেনসহ ১২টি ভিন্ন দেশের সিল! গায়ে চড়িয়েছেন ২০টি ভিন্ন ক্লাবের জার্সি। এমনই অবস্থা, বান্স নিজেই ভুলে গেছেন কতগুলো ক্লাবে আসলে খেলেছেন, ‘(ক্লাবের সংখ্যা) ১২টি বা এ রকম কিছু একটা হবে। একটু আধটু ঘোরাঘুরি করেছি আমি। অভিজ্ঞতাও হয়েছে অনেক।’ দেশের জার্সিতে অবশ্য ২০০৩ সালে অভিষেকের পর থেকেই আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। এর পেছনেও অবশ্য একটা গল্প আছে। খেলতে পারতেন আইভরি কোস্টের হয়েও, তাঁর জন্মই সেখানে। ২০০২ সালে গৃহযুদ্ধের সময় সেখান থেকে পালিয়ে বুরকিনা ফাসোর রাজধানী ওয়াগাদুগুতে আসেন। তাঁর প্রথম ‘বিদেশ’ ভ্রমণ সেটি, বান্সের নিজের চোখেই যা ‘জীবন বাঁচানোর জন্য’! এক বছর পরই বুরকিনাবের জার্সিতে অভিষেক! এরপর থেকে এমনই আলো ছড়াচ্ছেন, ৩২ বছর বয়সী স্ট্রাইকার এখন দেশটির মানুষের কাছে ফুটবল আইকন। নতুন করে তাঁকে নিয়ে আলোচনাও বুরকিনাবের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে। গত শনিবার আফ্রিকান নেশনস কাপে তিউনিসিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে শেষ চারে উঠেছে বুরকিনা ফাসো, তাতে বড় অবদান বান্সের। মাঠে নেমেছিলেন ৭৫ মিনিটে, ম্যাচ তখনো গোলশূন্য। ছয় মিনিট পরই বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শটে দলের প্রথম গোলটি এনে দেন বান্স। পোস্ট বাধা হয়ে না দাঁড়ালে গোল পেতে পারতেন আরেকটি। লম্বায় ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি। শারীরিক গড়নে রীতিমতো দানবীয়। চুলের ছাঁটটাও অদ্ভুত। সব মিলিয়ে ভিড়ের মধ্যেও আলাদা করে চোখে পড়ার মতো। তবে শারীরিক গড়ন নয়, বান্সকে ঘিরে বেশি আলোচনা তাঁর ‘ভ্রমণ পিপাসা’র জন্য। সান্তোস (ব্রাজিলের নয়, বুরকিনা ফাসোর ক্লাব) থেকে শুরু পথচলা, এরপর ইউরোপে ঢোকা বেলজিয়ামের লোকেরেন হয়ে। তারপর থেকে অনেকটা ‘পথ হারিয়ে কোন ক্লাবে যাই’ অবস্থা। তা এত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সব সময় যে ভালো ছিল তা-ও নয়। বান্সের মুখেই শোনা যাক, ‘কিছু কিছু দেশে ভাগ্য পাশে ছিল না। যেমন দুবাই। যখন গেলাম, শুরুতে সবকিছু ভালোই ছিল। কিন্তু চার মাস পর আমার বেতন নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। ওখানে খুব ভালোই ঝামেলায় পড়েছিলাম।’ ভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষার সঙ্গে মানিয়ে নিতেও নাকি ঝামেলা হয় না—ইংরেজি আছে না! বান্স বলেন, ‘দোকানে, শপিংয়ে গেলে খুব বেশি সাহায্যের দরকার হয় না। আর শপিং ছাড়া তো খুব একটা বাইরেও যাই না। ঘরেই থাকি সব সময়। অনুশীলন-ঘর-অনুশীলন-আবার ঘর…আর মাঠে যখন থাকি ভাষার দরকারই খুব একটা পড়ে না।’ তবে এত ঘোরাঘুরি, এত অভিজ্ঞতা থেকে একটা আক্ষেপ জন্মেছে বান্সের মনে। সেটি নিজের পেশা নিয়েই, ‘যতক্ষণ আপনি ভালো খেলবেন, মানুষ আপনার খোঁজখবর করবে। এজেন্টরাও যোগাযোগ করবে। কিন্তু যখন নিয়মিত খেলার সুযোগ আর পাবেন না…এজেন্টের কলও আসবে না।’ তা না আসুক, তবু টুর্নামেন্টের পর নতুন ক্লাবে যাওয়ার কথাই ভাবছেন বর্তমানে আইভরি কোস্টের আবিদজানের এই স্ট্রাইকার। তবে তার আগে দেশের জার্সিতে একটা লক্ষ্য পূরণের ইচ্ছা তাঁর—তিন বছর আগের আক্ষেপ ভোলানো। সেবার প্রথম আফ্রিকান নেশনস কাপের শিরোপার খুব কাছে গিয়েও নাইজেরিয়ার কাছে হারে বুরকিনা ফাসো। সেই দুঃখই যেন বান্সকে করে দেয় আরও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, ‘২০১৩ সালে ফাইনালে উঠেও কাপটা জিততে পারিনি। এবার আমাদের ভালো করতেই হবে।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.