খ্যাতির বিড়ম্বনার স্বাদ এবার ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন তিনি। এই বিড়ম্বনায় নিজের বাড়িতে বসেও একদণ্ড নিজের মতো কাটাতে পারছেন না। রাত নেই, দিন নেই সকাল-দুপুর সব সময় দর্শনার্থী আসছেন, কথা বলতে চাইছেন, তাঁর অটোগ্রাফ চাইছেন।
কেউ কেউ আবার একধাপ এগিয়ে সেলফি তুলতে চাইছেন ফেসবুকে শেয়ারের জন্য। এই দর্শনার্থীদের কেউ বন্ধু, কেউ স্বজন আবার কেউ বা নিতান্তই ভক্ত। দূর-দূরান্ত থেকে তাঁরা ছুটে আসছেন প্রিয় খেলোয়াড়কে একটু চোখের দেখা দেখতে, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে।
এসবের বাইরে আছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা। ক্যামেরার ক্লিকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আসছে ফোন। মেয়েভক্তরা চেয়ে বসছেন ফোন নম্বরও।
আইপিএল-জয়ী কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান এখন খ্যাতির বিড়ম্বনায় রীতিমতো নাজেহাল। অনেকদিন পর সাতক্ষীরার তেঁতুলিয়ায় গ্রামের বাড়িতে এসে বাবা-মা-পরিবারের সঙ্গে কোথায় একটু একান্তে সময় কাটাবেন। প্রাণ ভরে আম-কাঁঠাল-লিচু খাবেন তা না, তিনি এখনো রয়েছেন ভক্ত-দর্শনার্থীদের মধ্যমণি হয়ে।
মুস্তাফিজের এলাকায় তারালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল ইসলাম ছোট বললেন, ‘আমি নিজেও তার এই দেখা করার বিষয়টি মনিটর করছি। দর্শনার্থী মানুষের এত চাপ যে ঘুমাতে যেতে রাত ২টা বাজে। আবার ভোর না হতেই বাড়িময় লোকজন। সবাই মুস্তাফিজের সঙ্গে কথা বলবে। কাউকে তো না করা যায় না। তাই আমরা বাধ্য হয়েছি ওর সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে একটু কড়াকড়ি করতে।’
মুস্তাফিজের ভাই মোকলেছুর রহমান পল্টু বলেন, ‘সবার চোখ এড়িয়ে সে বাড়ির ধারে একটি মাছের ঘেরে গিয়ে নিরিবিলি বসে গল্প করে। এটা জানাজানি হওয়ার পর সেখানেও শুরু হয়েছে ভিড়। এতে ওর কষ্ট হচ্ছে, ছোট মানুষ তো। বয়স সবে ২০ বছর ৫ মাস। তাই কিছুটা কড়াকড়ি করেছি আমরা।’
‘আমরা সবার সঙ্গে পরামর্শ করে মুস্তাফিজের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করেছি সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত’-বললেন মোকলেছুর রহমান।
গত দুই মাস ভারতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলেছেন মুস্তাফিজ। প্রচুর পরিশ্রম হয়েছে, খাওয়া আর ঘুম হয়নি ঠিকমতো। মুস্তাফিজের ওজনও এ কারণে কমে গেছে। দীর্ঘদিন বাবা-মায়ের কাছ থেকে দূরে ছিলেন। এসব কারণে তাঁর কিছুটা নিরিবিলি বিশ্রাম দরকার। সে কারণেই এই কড়াকড়ি আরোপ করেছে পরিবার।
তারালি ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘মুস্তাফিজ আমাদের জাতীয় সম্পদ। ওর নিরাপত্তা আমাদের কাছে খুব জরুরি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দুজন গ্রাম পুলিশ নিয়োগ দিয়েছি তাঁর বাড়িতে। পালাক্রমে তাঁরা ডিউটি করবেন।’
মুস্তাফিজুর রহমানের বাড়ি যাওয়ার কাঁচা রাস্তাটি পাকা করে ঢালাই দেওয়া হবে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এই কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। এ ছাড়া মোবাইল নেটওয়ার্কের জন্য একটি কোম্পানি জরিপও চালিয়েছে বলে জানান তিনি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সব ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.