পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। আজ সোমবার দুপুরে নবান্নে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে রামকৃষ্ণ মিশনে আইএসের হুমকি, তিস্তা থেকে ইলিশ- সব বিষয়েই কম-বেশি কথা বললেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার।
বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর পূর্ণ আস্থার কথা ব্যক্ত করেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার এবং মমতা অচিরেই এই সমস্যার সমাধান করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সোমবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এমনটাই জানালেন নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশাল জয়ের পর এদিন বাংলাদেশ সরকারের তরফে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য প্রশাসনিক কার্যালয় নবান্নে আসেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। সাক্ষাৎ শেষে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে আমরা এসেছিলাম। পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয়বারের জন্য বিশাল জয় নিয়ে ক্ষমতায় আসা মমতা সরকারের সর্বাঙ্গীণ উন্নতির লক্ষ্যে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছি।’
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেন, রামকৃষ্ণ মিশনে হুমকির পর থেকেই এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে নিরাপত্তা নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে একটা সমঝোতা আছে। হাইকমিশনার বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশনের হুমকি বিষয়ে জোরদার ব্যবস্থা নিয়েছি। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে তিনি যথেষ্ট কার্যকরী ব্যবস্থা বলেও আস্থা প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে দিল্লির সঙ্গে আমাদের কী আলোচনা চলছে, তা এদিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অবহিত করেছি আমরা।’
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে বলেন, “এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ সফরে গিয়ে তিস্তার ব্যাপারে বলেছিলেন, ‘আমার ওপর আস্থা রাখুন।’ আমরা এদিনও উনার ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থার কথা ব্যক্ত করেছি। আশা করি উনি যথাসময়ে ব্যবস্থা নেবেন।”
এদিকে নবান্ন সুত্রে খবর, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে ফের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমার উপর আস্থা রাখুন,ঠিক সময়েই তিস্তার সমাধান হয়ে যাবে।’
পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের ইলিশ রপ্তানি প্রসঙ্গে সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী হাসতে হাসতে বলেন, ‘এদিন ইলিশ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তা ছাড়া এখানকার বাজারে তো দেখলাম প্রচুর ইলিশ উঠেছে।’ এরপর তিনি বলেন, ‘তবে আমরা নিশ্চয়ই ইলিশ রপ্তানি করতে চাই। তার জন্য পোর্ট ফ্যাসিলিটি বাড়াতে হবে। না হলে ইলিশ আনতে আনতেই তো পচে যাবে।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলাদেশের যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলেও জানান সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ওনাকে বলেছি, আপনার যখন সময় হবে বাংলাদেশে আসবেন। বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ রইল।’
বাংলাদেশের হাইকমিশনার আরো বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে গতবারের থেকে অনেক বেশি আসন পেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেছেন। বিশাল মানুষের রায়ে উনি ক্ষমতায় এসেছেন। তাই মানুষের দাবি মেনে তিস্তা চুক্তিকে উনি এগিয়ে নিয়ে যাবেন সেই আস্থা ওনার প্রতি আমাদের পূর্ণ মাত্রায় রয়েছে।’
সোমবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই সৌজন্য সাক্ষাতে ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরী, কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার জকি আহাদ এবং কাউন্সিলর মিয়া মুহাম্মদ মইনুল কবির।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.