তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টা ঘটনার পর পরই এমনকি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে এখন সবচাইতে আলোচিত নাম ফেতুল্লাহ গুলেন। আজ রোববার দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বব্যাপী সবচাইতে বেশি আলোচিত হয়েছে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত এই ধর্মগুরুর নাম। এ ছাড়া হাফিংটন পোস্ট জানায়, অনলাইনে সবচাইতে বেশি খোঁজা হয়েছে ফেতুল্লাহ গুলেনকেই।
এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, এক সময় ‘উদারনৈতিক ইসলামী চিন্তাবিদ’ হিসেবে পরিচিত গুলেনের আদর্শেই তুরস্ককে গড়ে তোলার ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। অথচ সেই গুলেনই আজ কাঠগড়ায়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন খোদ প্রেসিডেন্টই।
এদিকে দ্য ইনডিপেনডেন্ট জানায়, ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টা নিয়ে গুলেনকে কাঠগড়ায় তুললেও এই গুলেনের সঙ্গে একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এরদোগানের। গোলমালটা শুরু হয় ২০০৮ সালে এরদোয়ান ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার তদন্ত শুরুর পর থেকে। প্রেসিডেন্টের ধারণা ছিল,তদন্ত শুরুর পিছনে গুলেনেরই হাত ছিল। যদিও সেই অভিযোগ কখনো প্রমাণিত হয়নি। তার পর থেকেই দুজনের দূরত্ব ক্রমে বাড়তে থাকে।
এদিকে এরদোয়ানের দল একেপি পার্টি (একে পার্টি হিসেবেও পরিচিত) এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টার কেন্দ্রে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ কিছু গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর মধ্যে বেশ কয়েকজন দেশটির সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এ ছাড়া একেপি পার্টির কিছু সদস্যও জড়িত এই ষড়যন্ত্রে। আর এই গোষ্ঠীর মাথা আমেরিকায় বসে থাকা ফেতুল্লাহ।
সতের বছর আগে তুরস্ক ছেড়ে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত হন ফেতুল্লাহ গুলেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়াতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। তাঁর অনুগামীদের মতে, উদারনৈতিক আধুনিক মুসলিম ধর্মে বিশ্বাসী তিনি। নিজে মুসলিম হলেও পোপ জন পল দ্বিতীয় এবং অন্য খ্রিস্টান ধর্মগুরুদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রয়েছে তাঁর।
তুরস্কে তাঁর অনুসারীরা ‘গুলেনিস্ট’ নামে পরিচিত। তাঁরা তাঁদের ধর্মীয়মতকে ‘হিজমত’ নামে অভিহিত করে। আর এই হিজমত গোষ্ঠী একাধিক সমাজকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। তবে এরদোয়ানের ‘ইসলামী মতাদর্শ’ নিয়ে দ্বন্দ্বও রয়েছে গুলেনের সঙ্গে।
তবে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান সন্দেহভাজন ফেতুল্লাহ গুলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় নিজ বাসায় সাংবাদিকদের ছোট্ট একটি দলকে তিনি এই বিষয়ে সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে বর্ষীয়ান এই ইসলামি চিন্তাবিদ এবং ধর্মীয় নেতা দাবি করেন, সবই ছিল এরদোয়ানের দুর্বল পরিকল্পনা।
গুলেনের এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাদ্যম দ্য গার্ডিয়ান। সাক্ষাৎকার ছেপে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, তাঁর এমন সাক্ষাতকার বিরল। সাক্ষাৎকারে গুলেন বলেছেন,প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যে অভিযোগ এনেছেন তা বিশ্ববাসী বিশ্বাস করবে বলে আমি মনে করি না। এমন অভ্যুত্থান পরিকল্পনা করে ঘটানো হয়ে থাকতে পারে। তবে এ জন্যই এটা ঘটানো হয়ে থাকতে পারে, যাতে গুলেনপন্থিদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনা যায়।
গুলেনের এই কথাটির ব্যাখ্যা দিয়ে গার্ডিয়ান একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। যাতে উল্লেখ করা হয়,ফেতুল্লাহ গুলেন এবং তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এরদোয়ানের সরকারই পরিকল্পিতভাবে এ অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করেছে।
গুলেন আরও বলেন,‘তিনি বরাবরই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কে যখনই অভ্যুত্থান হয়েছে তখনই তিনি ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত হয়েছেন।’
গুলেন উল্লেখ করেন, ‘যত যা ই হোক সেনাশাসন কখনও সঠিক পথ নয়। তুরস্ক এখন গণতন্ত্রের পথে আছে। জনগণ সেটা প্রমাণ করেছে। দেশকে সেখান থেকে পিছনে ফেরানো যাবে না।’
এদিকে গুলেনের সাক্ষাৎকারের পর তাঁর গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা আলিপ আসলানদোগান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তুরস্কের ঘটনার পর ফেতুল্লাহ গুলেনের নিরাপত্তায় উচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টার পর আলিপ আসলানদোগান বলেন, ‘ তাঁর (গুলেন) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সব শুনে তিনি জানিয়েছেন, এর আগে যেসব অভ্যুত্থান ঘটেছে তার সঙ্গে এ অভ্যুত্থান চেষ্টা তুলনা করা যায় না। এবার যে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা হয়েছে তা দুর্বলভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে। দুর্বলভাবে পরিচালনা করা হয়েছে। সব কিছু দেখে মনে হয় সবই ছিল এরদোগানের হাতের কাজ।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.