মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সরকার অন্ধকারে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। তিনি বলেন, দেশটির শ্রমবাজার এখনো উন্মুক্ত হয়নি। তারা কী করতে চায় এ ব্যাপারে কিছু জানি না। মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুদের কাউকে টাকা না দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাজার উন্মুক্ত হলে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো। গতকাল রাজধানীর ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সম্প্রতি লেবানন এবং জর্ডান সফর করেন মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। এই সফরের সফলতা তুলে ধরে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম শামছুন নাহার, দপ্তরসমূহের প্রধান এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, জর্ডানে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশি গৃহকর্মীদের সঠিক প্রশিক্ষণ, ত্রুটিমুক্ত মেডিকেল চেকআপ, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, কর্মস্থলের পরিবেশ গৃহকর্মীদের সুরক্ষা, দক্ষকর্মী তৈরিতে সাম্প্রতিককালে গৃহীত পদক্ষেপ, জর্ডানে পুরুষকর্মী গমনের সুযোগ সৃষ্টি এবং সব খাতে (বিশেষ করে কৃষি ও নির্মাণ খাতে) বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য উন্মুক্তকরণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রতিনিধি দলের লেবানন সফরকালে দেশটির শ্রমমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশি কর্মীরা দেশটিতে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। তারা বাংলাদেশি কর্মীদের পছন্দ করে, কেননা বাংলাদেশি কর্মীরা অনেক আন্তরিক। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী জানান, লেবাননে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রে সেদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী সর্বনিম্ন মজুরির বিধান প্রযোজ্য হবে এবং নতুন বেতন উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরপরই কার্যকর হবে। নতুন সর্বনিম্ন্ন মজুরি কার্যকর করা হলে পুরুষকর্মীরা ৪০০ মার্কিন ডলার এবং নারীকর্মীরা ২৫০ মার্কিন ডলার পাবেন। নুরুল ইসলাম বিএসসি আরও বলেন, দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের বিষয়ে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেছেন এবং বিনা ভিসায় অবস্থানকারী মহিলাকর্মীদের জরিমানা পরিশোধ ছাড়াই দেশে প্রত্যবর্তনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেছেন। মন্ত্রী বলেন, দেশ দুটি মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করে এবং বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে যে, জর্ডান এবং লেবাননে বাংলাদেশি কর্মীরা তুলনামূলকভাবে ভালো আছেন। এদিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার ব্যাপারে আমরা অন্ধকারে রয়েছি। তারা কবে থেকে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবে সে সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য নেই। বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া শুরু করলে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো। এর আগে যেন কোনো ব্যক্তি মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য কাউকে টাকা না দেয়। তিনি বলেন, গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ ঘোষণা করে মালয়েশিয়া। এর ঠিক আগের দিনই ঢাকা ও কুয়ালালামপুরের মধ্যে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। মালয়েশিয়ার বাজারে শ্রমিক পাঠাতে সিন্ডিকেটের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, কোনো সিন্ডিকেট করতে দেয়া হবে না। মালয়েশিয়ার কাছে আমরা ৭৩৫টি এজেন্সির একটি তালিকা পাঠিয়েছি। সৌদি আরবের শ্রমবাজর সম্পর্কে নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য বাড়ছে। আশা করি, সৌদিতে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা কেটে যাবে। বাংলাদশি শ্রমিকদের ওপর মন্দার কোনো প্রভাব পড়বে না। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবে শ্রমিক পাঠাতে অভিবাসন মূল্য নির্ধারণ করা হবে। নির্ধারিত সে মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মন্ত্রী জানান, মন্দার কারণে সৌদির আরবের ওজহার কোম্পানি বন্ধ হওয়ায় সেখানে কর্মরত প্রায় ১৫শ বাংলাদেশি শ্রমিক গত আট মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তারা সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের সমস্যা মেটাতে বাংলাদেশ সরকার ৫৭ লাখ টাকা পাঠিয়েছে। এছাড়া এসব শ্রমিককে অনেককেই সৌদির অন্য কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নারী শ্রমিকদের ওপর হয়রানি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, সকল অভিযোগ সঠিক নয়। বাড়ির প্রতি টান ও ভিন্ন খাদ্যাভাসের কারণে নারীশ্রমিকরা দেশে ফিরতে চান। তবে কিছু কিছু নারীশ্রমিক হয়ানির স্বীকার হন বলে স্বীকার করেন প্রবাসী কল্যাণ সচিব বেগম শামছুন্নাহার। সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিদেশগামী কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় সর্র্বনিম্ন করা হবে এবং তার জন্য মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। গত ৫-১৪ই আগস্ট পর্যন্ত জর্ডান ও লেবানন সফর করেন মন্ত্রী। মন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম শামছুন নাহার, অতিরিক্ত সচিব মো. আজাহারুল হক, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সেলিম রেজা, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস এনডিসি, মন্ত্রীর একান্ত সচিব মু. মুহসিন চৌধুরী এবং সিনিয়র সহকারী সচিব শোভা শাহনাজ। উল্লেখ্য, বর্তমানে জর্ডানে ১ লাখ ২৫ হাজার এবং লেবাননে ১ লাখ ৪২ হাজারেরও বেশি কর্মী বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.