পুলিশের এস আই সোহেল রানা গ্রেপ্তার হওয়ায় খুলনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। বেরিয়ে এসেছে তার নারী কেলেঙ্কারিসহ চাঁদাবাজির চাঞ্চল্যকর তথ্য। বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশের এস আই সোহেল রানা। ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তাদের নারী দিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে চাঁদাবাজি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান এই অফিসার। এ ছাড়া প্রতিদিন প্রকাশ্যে মদপান করে খুলনা শহরে মাতলামি করা ছিল ওপেন সিক্রেট। পুলিশের মাঝে রমণী বিলাসি হিসাবে পরিচিত ছিল এসআই সোহেল। তিনি যখন যে জেলায় চাকরি করেছেন সেই জেলায় নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়তেন। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তার সখ্য রয়েছে। একাধিক সূত্র জানায়, ২০০৬-০৮ সাল পর্যন্ত যশোরে কর্মরত থাকাকালে চোরাচালান, মাদক সিন্ডিকেটের সখ্য গড়ে তুলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এসআই সোহেল। যশোরে একের পর এক নারী কেলেঙ্কারি ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তিনি মাদারীপুর বদলি হন। সেখানে গিয়ে আবার একটি বিয়ে করেন। খুলনায় যোগদান করার পরেও তার অনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকে। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তোয়াক্কা করতেন না। খুলনা থানার এসআই থাকাকালে আলোচিত উজ্জ্বল সাহা বাপ্পি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন সোহেল রানা। এ সময়ে এই হত্যা মামলা এক হিমায়িত মৎস্য রপ্তানিকারকের ছেলের নাম আসে। ওই শিল্পতির কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল গাড়ি উপহার নিয়ে আবারো আলোচনায় আসেন এই অফিসার। মামলা থেকে ওই শিল্পপতির ছেলেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এ ছাড়া ওই শিল্পপতির ছেলেকে গ্রেপ্তার না করে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে দিতে সহায়তা করেন বলে জানা গেছে। এদিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) নিরালা ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সোহেল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নারী দিয়ে একজন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে ফাঁদে ফেলে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির মামলায় সোমবার রাতে সোহেল রানাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় খুলনা থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলা মঙ্গলবার রাতে থানা থেকে মহানগর গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়েছে। এদিকে, গ্রেপ্তারকৃত অন্য চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে গতকাল আদালত বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তবে এসআই সোহেল রানা অসুস্থ হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক) প্রিজন সেলে ভর্তি থাকায় তার রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি। সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রমজান আলীর দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ইন্সপেক্টর নাফিউর রহমান জানান, খুলনা মহানগর হাকিম আয়শা আক্তার মৌসুমীর আদালত শুনানি শেষে গ্রেপ্তারকৃতদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর মধ্যে স্বপ্না আক্তার ওরফে রুনা ও সীমার ৫ দিন করে, রাজু শেখের ৩ দিন এবং বিকাশ এজেন্ট মো. আবদুল হামিদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, গত ১৪ই আগস্ট খুলনার দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. রমজান আলীকে গ্রেপ্তারকৃত স্বপ্না আক্তার ওরফে রুনা বিপদে পড়ার কথা বলে কৌশলে ডেকে নেন। পরে নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার ১৭নং রোডের ২৯৫ নম্বর বাড়ির একটি রুমে নিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে বের হয়ে যান স্বপ্না। কিছুক্ষণ পর সীমা, স্বপ্না, রাজু শেখ, মহিন আরা বেগম এবং নিরালা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সোহেল রানাসহ কয়েকজন ঘরে ঢুকে তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে সীমাকে নগ্ন করে তার পাশে দাঁড় করিয়ে এসআই সোহেল রানা নিজের মোবাইলে তা ভিডিও করেন। পরে এসআই সোহেল রানা পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কথা বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে রমজান আলীর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। না দিলে রেকর্ডকৃত ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখানো হয়। এ অবস্থায় রমজান আলী তার স্ত্রীর মাধ্যমে এসআই সোহেল রানার নির্দেশনা অনুযায়ী খুলনা সদর থানা সংলগ্ন বিকাশ এজেন্ট আবদুল হামিদের নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। আরো ১০ হাজার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই রমজান আলী বাদী হয়ে এসআই সোহেল রানাসহ ৯ জনকে আসামি করে খুলনা সদর থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন। নগরীর আপার যশোর রোডের এশিয়া স্টিল নামে স্টিল ফার্নিচারের মালিক রফিকুল ইসলামকেও ৫ই আগস্ট একইভাবে ফাঁদে ফেলা হয়। তাকেও কৌশলে নিরালার ওই বাড়িতে ডেকে নিয়ে নারী দিয়ে ছবি তুলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখানো হয়। পরে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় তিনিও সোমবার এসআই সোহেল রানাসহ ৬ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন। দুটি মামলায় এসআই সোহেল রানাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.