হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা ঠেকানো যাচ্ছে না। রোধ করা যাচ্ছে না ফ্লাইট বিপর্যয়। প্রায় প্রতিদিনই বাতিল হচ্ছে হজ ফ্লাইট। গতকাল রোববারও বিমানের আরো একটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এ নিয়ে ৪ঠা আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ১৮টি হজ ফ্লাইট বাতিল হলো। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাব-ধর্ম মন্ত্রণালয় বেশ বিরোধে জড়িয়েছে। ভিসা হওয়া সত্ত্বেও হজযাত্রীদের ফ্লাইট না দেয়ার অভিযোগ মন্ত্রণালয়ের। অপরদিকে রিপ্লেসমেন্টসহ হজ অফিসের ধীরগতির অভিযোগ করছে হাব। এ জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ও হজ পরিচালকের অপসারণ চেয়েছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। অপরদিকে টিকিট সিন্ডিকেট ও ট্রলিব্যাগে দুর্নীতি ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার কারণে হাবের কমিটি ভেঙে প্রশাসক নিয়োগের দাবি হজ ওমরা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের।সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৬ই আগস্ট পর্যন্ত যাত্রীর অভাবে বিমানের ৯টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। পরবর্তীতে ১৭ই আগস্ট ৩টি ও ১৮ই আগস্ট ২টি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়। এরপর প্রথমবারের মতো ১৯শে আগস্টের ২টা ২০ মিনিটের সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এসবি- ৫৪২৫ এবং বাংলাদেশ বিমানের ১৩টা ৫ মিনিটের ফ্লাইট বিজি-১০৫১ বাতিল হয়। গতকাল রোববার বিমানের ১৩টা ৪৫ মিনিটের বিজি-৫০৫৫ ও সৌদিয়ার ১৬টা ০৫ মিনিটে এসবি-৫৭২৭ ফ্লাইটটি বাতিল হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিমানের ১৬টি ও সৌদিয়ার ২টি সহ ১৮টি ফ্লাইট বাতিল হয়। এতে প্রায় ৮ হাজার হজযাত্রীর ক্যাপাসিটি লস হয়েছে। এ লস কাটিয়ে উঠতে নতুন করে শ্লট পেতে হবে, অন্যথায় এসব হাজীর সৌদি আরব যাত্রা অনিশ্চিত হতে পারে। ফ্লাইট বিপর্যয় ঠেকাতে গত বৃহস্পতিবার বিমান মন্ত্রণালয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক শেষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানিয়েছিলেন, শনিবার থেকে কোনো হজ ফ্লাইট খালি যাবে না। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। যদিও বলা হচ্ছে ইতিমধ্যে প্রায় ৭৫ হাজার হজযাত্রীর ভিসা প্রস্তুত হয়ে গেছে। কিন্তু এজেন্সিগুলো নানা অজুহাতে হজযাত্রীদের ভিসা দিচ্ছে না। গত শনিবার পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৫৫৮ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছে। তাদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার ২৭০৫ ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী ৪২ হাজার ৮৫৩ জন। তাদের বহন করতে ১৩৮টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে। ওদিকে হাবের অভিযোগ, হজ অফিস রিপ্লেসমেন্টসহ ভিসার জন্য ডিও প্রদানে গড়িমসি করছে। তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ও হজ পরিচালকের অপসারণ দাবি করেছে। হাবের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামও দিয়েছিল। এ বিষয়ে হাব মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহ গতকাল জানান, রাতে ধর্মমন্ত্রীর বাসায় হজ সমস্যা সমাধানে বৈঠক হওয়ার কথা আছে। আশা করা যায় বৈঠকের পর একটা কিছু হবে। ওদিকে হজে টিকিট সিন্ডিকেট, মানবপাচার, আইডি কার্ডে অর্থ আত্মসাৎ ও ট্রলিব্যাগ দুর্নীতিসহ হজ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম সৃষ্টির জন্য হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) নির্বাচিত বর্তমান কমিটিকে দায়ী করেছে হজ ওমরা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। একই সঙ্গে এই কমিটি ভেঙে প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানানো ?হয়েছে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও হাবের সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিন আহমেদ, সদস্য মো. নুরুল হক, মো. বশির উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। অপরদিকে নতুন করে ২০ হাজার কোটা বরাদ্দের মাধ্যমে হজযাত্রী পাঠানোর দাবি জানিয়েছে হাব সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব রেজাউল করিম উজ্জ্বল। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘নতুন ২০ হাজার হজযাত্রী পাঠানোর লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনায়’ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। রেজাউল করিম বলেন, নতুন করে ২০ হাজার কোটা বরাদ্দ করে হজযাত্রী পাঠাতে হবে। যদি আমাদের এ দাবি মেনে নেয়া না হয় তাহলে আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট পালন করা হবে। তিনি বলেন, ২৮শে জুলাই সরকারি কোটা বেসরকারি কোটায় পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও হাবসহ ৯ সদস্য কমিটির দুর্নীতির অভিপ্রায়ে প্রায় ২০দিন লেগেছে ৪ হাজার ৮০০ কোটা পূরণ করতে। তাদের কোটা বাণিজ্য এবং সিন্ডিকেটের কারণে বেশকিছু ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। বর্তমান এ সংকটের জন্য হাবসহ ৯ সদস্যের কমিটি দায়ী। এ কমিটি ১ হাজার ৭০০ বেসরকারি কোটা বিক্রি করেছে। তাই এ কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে। সংগঠনের আহ্বায়ক রুহুল আমিন মিন্টু বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুর্নীতিবাজ কমিটি বাতিল এবং নতুন ২০ হাজার কোটা বরাদ্দ দিতে হবে। এছাড়া নবায়ন হজযাত্রী পাঠানোর ব্যবস্থা না করলে কঠোর আন্দোলন করা হবে। হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, হাব ৭০০ টাকার ব্যাগ ১৯০০ টাকা করে নিয়ে প্রায় ১৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাই ব্যাগ বাণিজ্যের ১৩ কোটি টাকা এজেন্সির মালিকদের ফেরত এবং ১৭০০ হাজী অবৈধ বণ্টনের তদন্তের মাধ্যমে ঘুষ কেলেঙ্কারির তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। আর এজন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে তদারকি করতে হবে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে যেন হজ নিয়ে আর কোনো ধরনের দুর্নীতি না হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.