খতিব আবদুল জাহিদ মুকুল। গিভেন্সি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লি.-এর কর্ণধার। তিনি নিজ খরচে পরিচালনা করেন গাজীপুরের বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র। দেশি বা বিদেশি কোনো দাতার দান নেন না এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য। ব্যক্তিজীবনে স্বচ্ছতার অধিকারী এই লোকটি ঘুণাক্ষরেও জানতেন না মৃত্যুর আগে কেউ তাকে ডিপোজিটের নমিনি করে গেছেন। তবে অ্যাকাউন্ট খোলার ২০ বছর পর ওয়ারিশরা যোগাযোগ করেছেন বাবার রেখে যাওয়া টাকার জন্য। সত্যতা যাচাইয়ের পর তাদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছেন সবগুলো টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার আদমজীনগরের আফির উদ্দিন শিকদার ঢাকা জিপিও-তে একটি ডিপোজিট করেন। যার নম্বর ৮২৩৬। তবে ১৯৯৬ সালে নিজের ছেলেমেয়েদের বাদ দিয়ে এই অ্যাকাউন্টের একমাত্র নমিনি করে যান খতিব আবদুল জাহিদ মুকুলকে। মৃত্যুকালে দুই স্ত্রী এবং ও ১১ ছেলেমেয়ে রেখে যান তিনি। নমিনি খতিব জাহিদ মুকুল মানবজমিনকে বলেন, ১৯৮৪ সালে নারায়ণগঞ্জের মৃত. আফির উদ্দিন শিকদার একটি ডিপোজিট করেন। যাতে আমাকে নমিনি করেন। কিন্তু এই খবর আমার জানা ছিল না। লোকটি ২০১৩ সালে মারা যান। এই ২০ বছরের জমানো টাকা সুদ আসলে এখন হয়েছে ৩৮ লাখ ৯০ হাজার ৩৭১ টাকা। কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠিত বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র (বপুক) একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এটি আমি নিজ খরচে পরিচালনা করে থাকি। কোনো দেশি-বিদেশি দানশীলের দান গ্রহণ করা হয় না। কিছুদিন আগে আমার অফিসে ৩/৪ জন লোক এসে আমার সঙ্গে দেখা করে। তারা বলে তাদের বাবা মারা যাওয়ার আগে একটি অ্যাকাউন্টে অনেকগুলো টাকা জমা করে গেছেন। যার একমাত্র নমিনি আমাকে করে গেছেন। তখন তাদের আশ্বস্ত করে বলি টাকা জমা করে গেলে আপনারা সেটা পাবেন। পরে অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে ১৪ জন ওয়ারিশের মধ্যে ১৩ জনের হাতে টাকাগুলো বণ্টন করে দেই। একজন ওয়ারিশ দেশের বাইরে থাকায় তার হাতে টাকা তুলে দেয়া সম্ভব হয়নি। মৃত আফির উদ্দিনের মেয়ে রোকসানা আফাজ রিনা মানবজমিনকে বলেন, আমার মা দুইজন। আমি বড় মায়ের মেয়ে। সব ভাইবোনদের আমি ঠিকমতো চিনি না। কারণ তাদের সঙ্গে আমাদের খুব একটা যোগাযোগ নেই। বাবা কেন আমাদের ছেড়ে একজন অপরিচিত লোককে নমিনি করলেন সেটা তিনিই ভালো জানেন। তবে মৃত্যুর আগে আমাদের বলে গেছেন ঢাকা জিপিও-তে এই টাকা রাখা আছে। সেই সূত্র ধরে জিপিও-তে যোগাযোগ করে অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে গিয়ে খতিব আবদুল জাহিদ মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে তিনি আজ (গতকাল) টাকা তুলে আমাদের ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। জিপিও’র সিনিয়র পোস্ট মাস্টার আজাদুল ইসলাম বলেন, মৃত আফির উদ্দিন শিকদার আমাদের অ্যাকাউন্ট হোল্ডার ছিলেন। যার নমিনি ছিলেন বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান খতিব আবদুল জাহিদ মুকুল। তিনি আজ (গতকাল) এসে ডিপোজিটের টাকা উত্তোলনের জন্য আবেদন করেন। পরে তাকে টাকা পেমেন্ট করা হয়। পরে তিনি ওই টাকা ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টন করে দেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.