রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশাকে (১৫) নির্মমভাবে হত্যার পর প্রথমে গাইবান্ধায় বোনের বাড়ীতে আশ্রয় নেয় ওবায়দুল খান। (২৯)। পরে সেখান থেকেও সটকে পড়ে এই যুবক। গ্রেফতার এড়াতে টানা চারদিন উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়ায় ওবায়দুল, পেশায় যে একজন কাটিং মাস্টার।
বুধবার সকাল ৮টার দিকে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সোনারায় বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
রিশার সহপাঠীদের বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই এই বখাটে যুবককে গ্রেফতার করে আইন-শৃংখলা বাহিনী।
কীভাবে ধরা হলো এই ঘাতককে? ওবায়দুলকে গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের বর্ণনা দেন নীলফামারীর পুলিশ সুপার (এসপি) জাকির হোসেন খান।
তিনি বলেন, পুলিশ ও র্যাবের যৌথ অভিযানে স্থানীয় এক ব্যক্তির সহায়তায় ওবায়দুলকে ধরা সম্ভব হয়েছে।
এসপি জানান, ওবায়দুলকে ধরতে সোনারায় ও এর আশপাশের বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে মঙ্গলবার রাত থেকে অভিযান চালানো হয়। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওবায়দুলকে ডোমার সোনারায় বাজারে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন ওই এলাকার এক মাংস ব্যবসায়ী দুলাল হোেসেন। তাকে একটি চায়ের দোকানে বসিয়ে রেখে পুলিশকে খবর দেন তিনি।
স্থানীয় সেই মাংস ব্যবসায়ীর তথ্য পেয়ে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা সেখানে গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
এদিকে, নীলফামারী পুলিশের এডিশনাল এসপি (সার্কেল) ফিরোজ আহমেদ জানান, ওবায়দুলকে ধরতে মঙ্গলবার রাতব্যাপী অভিযান চালায় পুলিশ। ডোমার থানার ওসি আহমেদ রাজিউর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকার রমনা থানার উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেনসহ একদল পুলিশ এ অভিযান পরিচালনা করে।
রাত ৮টার দিকে ওবায়দুলকে ধরতে ডোমার ব্র্যাক অফিসে হানা দেয় পুলিশ। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সে পালিয়ে যায়।
এ সময় ডোমার ব্র্যাক অফিসের অফিস সহকারী সাহাদাত হোসেন ও পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার শাখার ব্র্যাকের অফিস সহকারী ও ওবায়দুলের দুলাভাইয়ের ছোটভাই খুশবুকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
ভোর রাতে সুযোগ বুঝে আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে ওবায়দুল ডোমার থেকে নীলফামারী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ অবস্থায় ডোমার উপজেলার নীলফামারী ডোমার সড়কের খানাবাড়ী এলাকা হতে স্থানীয় একজনের সহায়তায় তাকে আটক করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল ফুটওভার ব্রিজে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী রিশাকে ছুরিকাঘাত করে ওবায়দুল। তার পেটের বাম পাশে ও বাম হাতে ছুরিকাঘাত করা হয়।
টানা চার দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মারা যায় রিশা।
এ ঘটনায় রমনা থানায় রিশার মা তানিয়া হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্সের বৈশাখী টেইলার্সের কাটিং মাস্টার ওবায়দুল খানকে (২৯) আসামি করা হয়।
অন্যদিকে খুনিকে গ্রেফতারের দাবিতে রিশার সহপাঠীরা বুধবারসহ টানা চারদিন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। তারা ক্লাস বর্জন করে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করতে থাকে। আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন সোমবার শিক্ষার্থীরা রিশার খুনিকে ধরতে আইন-শৃংখলা বাহিনীকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.