ফুসফুসে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে গত এপ্রিল মাস থেকে লন্ডনে চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছিলেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। চিকিৎসার পর গতকাল সকালে ঢাকা এসে পৌঁছেছেন তিনি। সেখানকার চিকিৎসক তাকে দেশে ফিরে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পরামর্শ দিয়েছেন। পারিবারিক আবহে হাসি-খুশি ও আনন্দে সময় কাটাতে বলেছেন। দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসা চলছিল তার। গত ১৫ই এপ্রিল লন্ডনের উদ্দেশে যান তিনি। সেখানে রয়্যাল মার্সডেন হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা শুরু হয়। এদিকে লন্ডনের বিমানবন্দরে সৈয়দ শামসুল হককে বিদায় জানাতে এসেছিলেন বিশিষ্ট নাট্যজন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। এরপর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক লন্ডন এসেছিলেন ফুসফুসে কর্কট রোগের চিকিৎসার জন্য। প্রায় চার মাস চিকিৎসার পর ফিরে যাচ্ছেন প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে। উল্লেখ্য, সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭শে ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প তথা সাহিত্যের সব শাখায় নিজেকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। প্রতিটি শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য তাকে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়। তিনি মাত্র ২৯ বছর বয়সে সাহিত্যিকদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। প্রখ্যাত এ সাহিত্যিক সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও হালিমা খাতুন দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে প্রথম। বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক এ লেখক ব্যক্তিজীবনে প্রথিতযশা লেখিকা ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হকের স্বামী। সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালের মে মাসে। ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায়। সেখানে ‘উদয়াস্ত’ নামে তার একটি গল্প ছাপা হয়। সৈয়দ শামসুল হকের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলে। সেখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে। এরপর ১৯৫০ সালে গণিতে লেটার মার্কস নিয়ে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এ পর্যন্ত সৈয়দ শামসুল হক বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৬) ছাড়াও একুশে পদক (১৯৮৪), আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৯), অলক্ত স্বর্ণপদক (১৯৮২), আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ (১৯৮৩) অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.