রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটকের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কোনো ‘সদুত্তর’ দিতে না পারায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। গতকাল সংসদ সচিবালয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে টেলিটক নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, বৈঠকে অবৈধ কল টার্মিনেশন, অবৈধ ভিওআইপিতে টেলিটকের সিমের ব্যবহার শীর্ষে, অনিবন্ধিত সিম বন্ধসহ বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ব্যাপারে টেলিটকের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। প্রত্যেকটি খবরের বিষয়ে টেলিটক বলেছে, গণমাধ্যমে যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো ‘সঠিক নয়’ এবং পত্রিকা বরাবরে প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ বলেন, টেলিটক তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খবরের ব্যাপারে একই ধরনের উত্তর দিয়েছে। তারা বলেছে পত্রিকাগুলো তাদের পাঠানো প্রতিবাদলিপি ছাপায়নি। তিনি বলেন, কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যদি তারা প্রতিবাদলিপি না ছাপায় আর খবরগুলো সঠিক না হয়ে থাকে, তাহলে টেলিটক লিগ্যাল অ্যাকশনে কেন গেল না? এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। সদুত্তর না পাওয়ার অর্থ কী তাহলে? অনেক প্রশ্ন করা হয়েছে, উত্তর ঠিকমতো আসে নাই। গত ২১শে জুলাই সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে ডাক ও টেলিযোগা প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানান, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় জড়িত থাকার দায়ে মোবাইল অপারেটরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিম জব্দ হয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান টেলিটকের। গত এক বছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটরের ১০ হাজার ৮০৫টি সিম জব্দ করা হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টেলিটকের নতুন ‘বিজনেস প্লান’ তৈরী করা এবং প্রতিষ্ঠানটিকে কীভাবে লাভজনক করা যায় সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবকে কমিটির পরবতী বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, টেলিটক ইজ ইন অ্যা ব্যাড সেইপ। এটাকে গুড সেইপে আনা যায় কিনা সেটা মূল বিষয়। সবরকম প্রটেকশন তার আছে, তাহলে কেন সেটা কাজ করছে না। ৪০ লাখ সিম থেকে ২০ লাখ অনিবন্ধিত, যেগুলো ব্লক করা হয়েছে। তাহলে সংযোগ বাড়ানোর জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আদৌ কি কোনো বিজনেস প্ল্যান আছে? টেলিটককে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে নেয়ার প্রস্তাবও কমিটিতে এসেছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এটা নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সুপারিশ করা হয়নি। আমরা আরো ডিটেইল আলোচনা করবো। পরে কমিটি সুপারিশ করবে। অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠেয় কমিটির আগামী বৈঠকে টেলিটক নিয়ে আলোচনা হবে বলেও জানান ইমরান আহমেদ। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, টেলিটক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা নিরসনের লক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সক্রিয় রয়েছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে টেলিটকের সার্বিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে অফিস অটোমেশন, প্রক্রিয়া সহজীকরণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমের ফলে টেলিটকের ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ড্যাসবোর্ড’ নামে যে ওয়েববেজড সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে তা উপজেলা পর্যায়ে যুক্ত করা এবং সেখানে উপজেলভিত্তিক সব প্রকল্প সংযুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিজিটাল ল্যাবগুলোকে জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করা হয়। ইমরান আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটি সদস্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, শওকত হাচানুর রহমান (রিমন) এবং হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া অংশ নেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.