৩৯ ঘণ্টার ব্যবধানে আরো একটি ম্যাচ, তার ওপর দুপুরের প্রচণ্ড দাবদাহ, ভেজা মাঠ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতটা কঠিন পরিস্থিতিতে খেলছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। কিন্তু এএফসি অনূর্ধ্ব- ১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশের কিশোরীদের কাছে কোনো বাধাই যে বাধা নয়, সেটা খুব ভালোই বুঝতে পারলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। চাইনিজ তাইপেকে হারিয়ে আগের ম্যাচেই চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। গতকাল আমিরাতকে ৪-০ গোলে হারিয়ে জমানো উৎসবই করলো মেয়েরা। এ ম্যাচেও আলাদা করে নজর কাড়লেন কৃষ্ণা রানী। কৃষ্ণা এই ম্যাচেও করেছেন দুই গোল। একটি করে গোল করেছেন তহুরা ও আনুচিং। সবমিলিয়ে টুর্নামেন্টে কৃষ্ণার গোল ৮। আর ৫ ম্যাচে ২৬ গোল করলো বাংলাদেশের মেয়েরা। চাইনিজ তাইপেকে হারিয়ে আগেই চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশ। একটি ম্যাচ বাকি থাকাতে ওইদিন উৎসবে মাতেনি মেয়েরা। আমিরাতকে হারিয়েই জয়োৎসবের লক্ষ্য ছিল দলের। সেটা খুব ভালোমতোই হলো ক্যারিবীয় ক্রিকেটার ড্যারেন ব্রাভোর সেই বিখ্যাত চ্যাম্পিয়ন চ্যাম্পিয়ন গানটির সঙ্গে। উৎসব এই মেয়েদেরই মানায়। তারা যে এখন কেবল নিজেদের গ্রুপের চ্যাম্পিয়নই নয়, অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ে এশিয়ায় মেয়েদের শীর্ষ আটটি দলের একটি। এখন পরের ধাপে খেলার পালা। আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে নিয়েই যাবে বাংলাদেশের মেয়েরা। শুধু এখন তাদের প্রয়োজন ঠিকঠাক যত্নের। এজন্য বাফুফেকে একটু উদার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সানজিদা আক্তার। ‘পুরুষ ফুটবল দলকে শতভাগ সুবিধা দিতে পারলে, আমাদেরও শতভাগ সুবিধা দিতে হবে। আমরা প্রমাণ করেছি, আমাদের ২০ ভাগ সুবিধা দিলে চলবে না। সত্যিই তাই। নিকট অতীতে এদেশের ফুটবলে যতটুকু সফলতা এসেছে, তার পুরোটাই এসেছে এসব মেয়েদের হাত ধরে। পরপর দুই বছর এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ চ্যাম্পিয়নশিপের আঞ্চলিক পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মেয়েরা। এরপরও মেয়েদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে এই আসরে গ্রুপ সেরা হওয়ার পরও আর্থিকভাবে এদের সুবিধা দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন বাফুফের মহিলা উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরন। গ্রুপ সেরা হওয়ার পরই ব্যক্তিগত তহবিল থেকে কিরন মেয়েদের পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়েছেন। ১৭ই সেপ্টেম্বর মেয়েদের দেয়া সংবর্ধনায় আরো বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাফুফের এই সদস্য। দলটির কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনও চান মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা। এসব মেয়েদের বেশির ভাগ উঠে এসেছে গরিব পরিবার থেকে। ওরা ফুটবল খেলে পরিবারকে যদি কোনো ধরনের সাপোর্ট দিতে না পারে, তবে পরিবারগুলো হয়তো বেশিদিন ওদের ফুটবল খেলতে দিবে না। ছোটনের কথার রেশ ধরে দলের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার মারিয়া মান্ডা বলেন, আমার পরিবার আমার ছোট বোনের বিয়ের কথা ভাবছে। হয়তো কিছুদিনের মধ্যে আমার বিয়েও দিয়ে দিবে। তবে সব পরিবার যে একই রকম সেটাও না। এই যেমন সানজিদার বাবা নিজে জুতা না পরে মেয়েকে বুট কিনে দেন। তার কাছে মেয়ের খেলাটাই আগে। তহুরার চাচা আতিয়ার বলেন তার ভাতিজি যতদিন চাইবে ততোদিনই ফুটবল খেলতে পারবে। জন্ডিস থেকে সেরে উঠে এই তহুরা গতকালও দারুণ এক গোল করেছেন। কৃষ্ণার গোল দুটি ছিলো দেখার মতো। প্রথম কর্নারটিতেই আসে গোল, মারজিয়ার কর্নারে দারুণ এক হেড করে দলকে এগিয়ে দেন অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকার। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য চিত্রটা বদলায়, গোল মিসের হতাশা কাটিয়ে ৫১ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় বাংলাদেশ। সানজিদার কর্নারে কৃষ্ণা রানী প্লেস করে বল জড়িয়ে দেন কাছের পোস্টে। এর পাঁচ মিনিট পর আনুচিং করেন দলের তৃতীয় গোল, কৃষ্ণা রানীর ক্রস ডিফেন্সে ক্লিয়ার হয়ে বক্সের ওপরে পড়লে তা এগিয়ে দেন মারিয়া মান্ডা। তাকে পাহারা দেয়া খেলোয়াড়কে কাটিয়ে মাটি কামড়ানো শটে তৃতীয় গোল করেন এই ফরোয়ার্ড।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.