নিউট্রিনো আলোর চেয়ে দ্রুতগতির!
ইউরোপ তথা গোটা বিশ্বে পদার্থ বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় ল্যাবরেটরির নাম সার্ন। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের কাছে অবস্থিত এটি। সেখানে কাজ করা পদার্থবিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে থাকেন। তাতে তারা বলেছেন, নিউট্রিনো নামের একটি কণা নাকি আলোর চেয়েও দ্রুত গতিতে চলতে সক্ষম। তাদের এই তথ্যই আইনস্টাইনের তত্ত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। যদিও প্রতিবারই আইনস্টাইনের কথা সত্য প্রমাণিত হয়। আর তার এই দাবিই হলো বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ভিত এবং এটার উপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে পদার্থ বিজ্ঞানের অন্যান্য অনেক তত্ত্ব।
সার্নের বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা তিন বছর ধরে গবেষণা করেছেন। এসময় তারা জেনেভার সার্ন ল্যাবরেটরি থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দূরে থাকা ইটালির রোমের কাছে মাটির নীচের গ্রান সাসো ল্যাবরেটরিতে নিউট্রিনো পাঠিয়েছেন। এবং দেখতে পেয়েছেন, আলোর চেয়েও দ্রুতগতিতে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউট্রিনো। সংখ্যার হিসেবে, নিউট্রিনো আলোর চেয়ে ৬০ ন্যানোসেকেন্ড বেশি দ্রুতগতির। তার মানে হল, এক সেকেন্ডকে যদি একশো কোটি ভাগ করা হয়, তবে তার ৬০ ভাগ যতটুকু সময় হবে ঠিক ততটুকু সময় আগে নিউট্রিনো রোমের ল্যাবরেটরিতে গিয়ে পৌঁছায়।
আইনস্টাইন কিন্তু আইনস্টাইন
বিজ্ঞানীরা যখন শুরুতে নিউট্রিনোর এই ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত হন তখন তারা বিশ্বাস করতে পারেননি। তাই তারা সম্ভাব্য সব ধরণের সতর্কতা অবলম্বন করে বারবার একই পরীক্ষা করেছেন। কিন্তু একই ফলাফল পান।
কিন্তু যেহেতু প্রাপ্ত এই তথ্য পদার্থবিজ্ঞানীদের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় তত্ত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে তাই বিষয়টা নিয়ে যেন বিশ্বের অন্যান্য বিজ্ঞানীরা আরো গবেষণা করেন সেজন্য সার্নের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক সেমিনারে তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে। এদিকে, বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে যেন বিজ্ঞানীরা সহজেই গবেষণাটি দেখতে পারেন সেজন্য একটি ওয়েবসাইটেও প্রতিবেদনটি রাখা হয়েছে।
গবেষণা যাচাই
সেমিনারে প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে গিয়ে সার্নের বিজ্ঞানী দারিও, তাদের গবেষণা প্রতিবেদনটি যাচাই বাছাই করে দেখতে মার্কিন ও জাপানি বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, অ্যামেরিকার ‘ফার্মিল্যাব’ ও জাপানের ‘টিটুকে’ নামের দুটি গবেষণা কেন্দ্র একই বিষয় নিয়ে কাজ করছে। ফার্মিল্যাবের এক বিজ্ঞানী অধ্যাপক জেনি থোমাস বলছেন সার্নের বিজ্ঞানীদের তথ্য যদি আসলেই সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে পদার্থবিজ্ঞানে তার প্রভাব হবে অনেক বড়।
নিউট্রিনো কী?
সার্নের এক বিজ্ঞানী বলছেন, নিউট্রিনো সাধারণত পরমাণু চুল্লিতে তৈরি হয়ে থাকে। ১৯৩৪ সালে প্রথমবারের মতো নিউট্রিনোর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া পর থেকে এখন পর্যন্ত এটা শুধু বিজ্ঞানীদের অবাকই করে যাচ্ছে। এ কারণে অনেকে নিউট্রিনোকে ‘ভুতুড়ে কণা’ বলে থাকে।