বোলিং অ্যাকশন নিষিদ্ধ হওয়ার পর কঠিন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানিকে। কখনো কখনো ভীষণ হতাশা ঘিরে ধরেছে দুজনকে। তবু হতোদ্যম হননি। নিজেদের শুদ্ধ করে তোলার প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছেন একাগ্রে। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর দুজন বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষা দেন ৮ সেপ্টেম্বর। কাল জানা গেছে সেই পরীক্ষার ফল। উতরে গেছেন তাসকিন-সানি। দুজনের মনে এখন চাপমুক্তির আনন্দ! তাসকিন আহমেদ
তামিম ইকবালই খবরটা দিলেন প্রথম। কাল বিকেলে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে এসে বাঁহাতি ওপেনারের মুখে রহস্যের হাসি, ‘সবই সুখবর!’ তামিম যখন কথা বলছিলেন, ড্রেসিংরুম থেকে ভেসে এল আনন্দের হুল্লোড়। মাশরাফি-সাকিবরা স্লোগান ধরেছেন—‘তাসকিন! তাসকিন!’ খানিক পরে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এলেন তাসকিন। মুখে পরিচিত সেই হাসি। এই হাসি বিশাল চাপমুক্তির। ব্রিসবেন ন্যাশনাল ক্রিকেট সেন্টারের গবেষণাগারে ৮ সেপ্টেম্বর আরাফাত সানির সঙ্গে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাসকিন। এরপর গত দুই সপ্তাহ নির্ঘুম অপেক্ষা। অবশেষে শঙ্কার মেঘ কেটেছে। কাল বিকেলে তাসকিনের বোলিং অ্যাকশনের বৈধতার ছাড়পত্র দিয়েছে আইসিসি। সুসংবাদটা তামিমের কাছ থেকে প্রথম জেনে স্বাভাবিকভাবেই এই পেসারের মনে আনন্দের হিল্লোল, ‘পরীক্ষার পর সত্যি বলতে এক দিনও ঘুমাতে পারিনি! আজ অনেক বড় দিন আমার জন্য। কদিন আগে ঈদ গেছে। ঈদের চেয়ে বেশি খুশির দিন মনে হচ্ছে আজ!’ বোলিং নিষেধাজ্ঞার দিনগুলো কতটা কঠিন ছিল, তাসকিনের চেয়ে ভালো বুঝবে কে! আনন্দের মধ্যেও জীবনের কষ্টের সেই অভিজ্ঞতা মূর্ত হয়ে উঠছে তাঁর চোখে, ‘যেদিন নিষিদ্ধ হয়েছি, তারপর শুধু রাস্তাঘাটে নয়, ঘরেও নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়েছে। সবাই অদ্ভুত অদ্ভুত সব প্রশ্ন করত, যেগুলোর উত্তর দিতে খুব কষ্ট হতো।’ এপ্রিল থেকেই তাসকিন শুরু করেন পুনর্বাসন-প্রক্রিয়া। এই পাঁচ মাসে নিজেকে শুদ্ধ করে তোলার প্রক্রিয়ায় অনেকে সহায়তা করেছেন তাঁকে। তাসকিন ধন্যবাদ জানালেন সবাইকে, ‘জাতীয় দলের কোচিং স্টাফদের সবাই খুব সহায়তা করেছেন। বিশেষ করে, মাহবুবুল আলী জাকি স্যারকে ধন্যবাদ। উনি আমার সঙ্গে পাঁচ মাস কাজ করেছেন। স্যারের কাছে ভীষণ কৃতজ্ঞ আমি।’ পরশু আফগানিস্তান সিরিজের জন্য দল ঘোষণার সময় প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন জানিয়েছিলেন, তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন বৈধ হলে তিনিও ঢুকে পড়বেন স্কোয়াডে। সেটাই হয়েছে। এখন সিরিজটা স্মরণীয় করে রাখার প্রত্যয় তাঁর, ‘আমার ভাগ্য ভালো, এই ক মাসে কোনো সিরিজ মিস হয়নি। দলের অন্যতম সেরা বোলার মোস্তাফিজ নেই। চেষ্টা করব ওর শূন্যতা পূরণের। আর জয় তো সব সময়ই স্পেশাল। নিষেধাজ্ঞা কেটে যাওয়ায় এখন সিরিজটাও জিততে পারলে আমার জন্য সেটা আরও অনেক স্পেশাল।’ কাল অনুশীলনের পর দলের সবাই উঠে গিয়েছেন টিম হোটেলে। কিন্তু তাসকিনকে কয়েক ঘণ্টার জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছে মোহাম্মদপুরে তাঁর জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে ঘুরে আসতে। অনুশীলন শেষে গাড়িতে উঠেই তাসকিনের সোল্লাসে চিত্কার: ‘আমি আজ স্বাধীন!’ এরপর বাজিয়ে দিলেন জাস্টিন বিবারের গান: ‘আই উইল গিভ আপ, নো নো…’ ‘গানটা আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করে’—তাসকিন জানিয়ে দিলেন, কঠিন সময়েও হাল ছাড়ার মানুষ তিনি নন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.