নেশার টাকা জোগাড় করতে না পেরে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া এবং একপর্যায়ে দুই বছরের শিশুপুত্র হাসানুর সরদারকে আছাড় মেরে হত্যা করলো বাবা। পৈশাচিক এই ঘটনা ঘটেছে গতকাল দুপুর ২টার দিকে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরাঘোনা গ্রামে। ঘাতক বাবা হারুনার রশিদকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে গ্রামবাসী। একমাত্র শিশুসন্তানকে হারিয়ে বাড়িটিতে চলছে শোকের মাতম। গ্রামবাসী ও পুলিশ জানায়, ২০১৪ সালের প্রথম দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরাঘোনা গ্রামের আরশাফ সরদারের ছেলে হারুনার রশিদ (২৮) এর সঙ্গে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার হাজরাকাটি গ্রামের দরিদ্র আবুল হোসেনের মেয়ে সালমা বেগমের (২১) সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মাদকাসক্ত হারুনার রশিদ ও তার স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় ঝগড়া লেগেই থাকতো। নেশার টাকার জন্য হারুন মাঝে মাঝে স্ত্রীকে মারপিটও করতো। এলাকাবাসী আরো জানায়, মাগুরাঘোনা গ্রামের হারুনার রশিদ সরদার (৩০) এলাকাকায় মাদকাসক্ত হিসাবে পরিচিত। শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে সে মাদক সেবনের জন্য তার স্ত্রী সালমা খাতুনের (২৫) কাছে টাকা চায়। সালমা তাকে টাকা দিতে অস্বীকার করলে হারুন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হারুন মায়ের পাশে থাকা দুই বছরের শিশু সন্তান হাসানুর সরদারকে উঠানে নিয়ে আছাড় মারে। এক আছাড়েই ঘটনাস্থলে শিশুটি মারা যায়। এ সময় স্ত্রী ও বাড়ির লোকজনের আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে ঘাতক পিতা হারুন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। প্রতিবেশীরা এ সময় তাকে আটক করে স্থানীয় মাগুরাঘোনা পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ঘাতক পিতা হারুনকে গ্রেপ্তার ও নিহত শিশুর লাশ উদ্ধার করে। মাগুরাঘোনা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্দ্রজিৎ মল্লিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে এ ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। পরিবারের সদস্যরা জানান, শুক্রবার দুপুরে নেশা করার জন্য হারুনার রশিদ তার স্ত্রীর সালমা বেগমের কাছে টাকা দাবি করে। এ সময় সালমা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া শুরু হয়। একপর্যায় সালমা বেগমের কোলে থাকা তাদের দুই বছরের শিশুপুত্র হাসানুর সরদারকে ছিনিয়ে নেন হারুন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শিশুটির দুই পা ধরে ঘরের দেয়ালের সঙ্গে আছাড় দেয় হারুন। দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথেই শিশুটির মৃত্যু হয়। ঝগড়ার খবর শুনে আগে থেকেই প্রতিবেশীরা এসে ওই বাড়িতে জড়ো হয়েছিল। শিশুটিকে আছাড় মেরে পালিয়ে যাওয়ার পর কয়েকজন প্রতিবেশী ঘাতক হারুনার রশিদকে ধরে ফেলে। তাকে গণপিটুনি দিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশ আসলে হারুনকে পুলিশের কাছে তুলে দেয় গ্রামবাসী। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ডুমুরিয়া থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম জানান, শিশুটির লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ রাতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। হত্যার দায়ে তার মাদকাসক্ত বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.