পার্লামেন্টের ভেতর ‘যৌন হয়রানি’র শিকার হয়েছেন পাকিস্তানের এক নারী এমপি। এজন্য কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া না হলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন নির্যাতিত এমপি নুসরাত সাহার আব্বাসী। এ ঘটনা সামাজিক মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করেছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে বলা হয়, ঘটনা গত শুক্রবারের। ওইদিন সিন্ধু প্রদেশের প্রাদেশিক পরিষদে প্রাদেশিক মন্ত্রী ইমদাদ পিটাফি তাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। নুসরাত সাহার আব্বাসীকে তার ব্যক্তিগত চেম্বারে যাওয়ার আহ্বান জানান। এর মধ্যে যৌন হয়রানির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। একে রক্ষণশীল পাকিস্তানে যৌন হয়রানি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এরপরই বিষয়টি সামাজিক মিডিয়ায় ঝড় তোলে। ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ গত শনিবার একটি বোতল হাতে নুসরাতের ছবি দেখা যায়। ধারণা করা হয় ওই বোতলে পেট্রল আছে। তিনি এ সময় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি আইনি ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে তিনি আত্মহত্যা করবেন। একজন মন্ত্রীর পক্ষ থেকে অমন আপত্তিকর মন্তব্য আসায় ক্ষুব্ধ নুসরাত। তিনি সঙ্গে সঙ্গে পার্লামেন্টের ভেতরে এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তখন প্রাদেশিক পরিষদের ওই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি স্পিকার। উল্লেখ্য, ডেপুটি স্পিকারও একজন নারী। তিনি এ বিষয়ে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে হতাশ হয়ে পড়েন নুসরাত সাহার আব্বাসী। বাধ্য হয়ে তিনি বোতল হাতে নিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন। ঘটনা যখন চারদিকে জানাজানি হয় তখন দলের কেন্দ্রীয় প্রধানরা পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হন। প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা হয় মন্ত্রী ইমদাদের ওপর। তিনি বাধ্য হয়ে নুসরাতের কাছে অধিবেশনের ভেতরেই ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তাকে একটি চাদর উপহার দেন। নুসরাতের প্রতি তার সম্মান প্রদর্শন হিসেবে এ চাদরটিকে প্রতীকী হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফলে মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে নুসরাত বলেছেন, বিষয়টি মিটমাট হয়ে গেছে। কিন্তু এমন যৌন হয়রানি থেকে নারীদের সুরক্ষা দেয়ার আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন থেকে যায়। তিনি বলেন, এ আইনের বাস্তবায়ন এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে। এখনো লিঙ্গগত দিক দিয়ে এবং হয়রানির দিক দিয়ে পার্লামেন্ট সদস্যরা নিরাপদ নন। উল্লেখ্য, পাকিস্তানি নারীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করে আসছেন। এখনো সেখানে পারিবারিক সম্মান রক্ষার জন্য হত্যাকাণ্ড হয়। এসিড হামলা সাধারণ একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নারীদের সুরক্ষাবিষয়ক বেশকিছু আইন পাস হয়েছে। এর কিছুটা হয়েছে প্রাদেশিক পর্যায়ে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এর পুরোপুরি বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো ফল আসবে না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.