কাবা শরীফ এমন একটা জায়গা যার উপর দিয়ে আজ পর্যন্ত কোন পাখি উড়ে যায়নি, দুনিয়া কোন বিমানও তার উপর দিয়ে যেতে পারেনি। কুদরতী দৃষ্টিকোণ থেকেও তার অবস্থান এমনই যে, তার উপর চন্দ্র ও সূর্যও অবস্থান করতে পারে না। কুরআন এবং বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে,গোটা পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু ঐ স্থান যেখানে খানায়ে কা’বা শরীফ ।মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এ এক বিষ্ময়কর সৃষ্টি। মুসলমানদের কেবলা কাবা শরীফ।
প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলমান কাবাঘর তাওয়াফ করতে মক্কা গমন করেন। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে ফেরেশতারা কাবাঘর নির্মাণ করেন। কাবাঘরকে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা আল-ইমরানের ৯৬ আয়াতে বলেন, “নিশ্চই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের ইবাদত রূপে নিরূপিত হয়েছে, তা ঐ ঘর যা মক্কাতে অবস্থিত”।
কাবাঘরটি আল্লাহ তায়ালার আরশে মুয়ালস্নাহর ছায়াতলে সোজাসুজি বাইতুল মামুরের আকৃতি অনুসারে স্থাপন করেন। হযরত আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.) উভয়ই আল্লাহ তায়ালার কাছে ইবাদতের জন্য একটি মসজিদের পার্থনা করেন। আল্লাহ তায়ালা তাদের দোয়া কবুল করেন এবং বাইতুল মামুরের আকৃতিতে পবিত্র কাবাঘর স্থাপন করেন। এখানে হযরত আদম (আঃ) সন্তুষ্টচিত্তে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করতে থাকেন (শোয়াব-উল-ঈমান, হাদিসগ্রন্থ) এর অনেক তফসিরবিদের মতে, মানব সৃষ্টির বহু আগে মহান আল্লাহ তায়ালা কাবাঘর সৃষ্টি করেন”।
হফসিরবিদ মজাহিদ কলেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাইতুলল্লাহর স্থানকে সমগ্র ভুপৃষ্ঠ থেকে দু’হাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন” মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে হযরত আবুযর গিফারী হতে বর্ণনা হয়েছে, রাসূল (সঃ) তার একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, “বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ হলো মসজিদে হারাম। এরপরের মসজিদ হলো মসজিদে আকসা। মসজিদে হারাম নির্মাণে ৪০ বছর পর মসজিদে আকসা নির্মিত হয়”।
হযরত আদম (আঃ) কাবাঘর আল্লাহর আদেশে পুনঃনির্মাণ করেন। এরপর বহুদিন অতিক্রম হলো। শত শত বছর অতিবাহিত হলো। আল্লাহর বান্দারা কাবাঘর জিয়ারত করতো, আল্লাহর কাছে হাজিরা দিতো এ কাবাঘরে সমবেত হয়ে। কাবাঘরে এসে মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও অংশীদারহীনতা ঘোষণা দিত। “লাব্বাইক আলস্নাহুম্মা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়ামাতা, লাকাওয়ালা মুলক, লাশারিকা, লাকা লাব্বাইক”।
এভাবে চলতে চলতে দিন গত হতে থাকলো। এরপর হযরত শীস (আঃ) কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করলেন। দিন দিন একাতুবাদের সংখ্যা বাড়তে থাকলো। এরপর কাবা শরীফ নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করেন হযরত ইব্রাহীম (আ;)। হযরত ইব্রাহীম (আ•) হযরত ইসমাইল (আ•) কে সাথে নিয়ে কাবাঘর নির্মাণ বা পুননির্মাণ করেন। হযরত ইব্রাহীম (আ•) কাবাঘর সংস্কার করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আজ্ঞাবহ কর,। আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর, আমাদের হজ্বের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চই তুমি দয়ালু। হে প্রতিপালক! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের কাছে একজন পয়গম্বর প্রেরণ করম্নন।
যিনি তাদের কাছে তোমাদের আয়াত তেলাওয়াত করবেন। তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন এবং পবিত্র করবেন। নিশ্চই তুমি মহাপরাক্রমশালী”। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর বংশ হতে হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-কে শেষ নবী ও রাসূল হিসাবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। এরপর কয়েকশ’ বছর গত হলো। পবিত্র কাবাঘর সংস্কার করলো আমালিকা সম্প্রদায়। তারপর আরো শ’ শ’ বছর কিংবা হাজার হাজার বছর পরে কাবাঘর সংস্কার করলো মক্কার জুরহাস সম্প্রদায়। আরবের অর্থাৎ মক্কায় যে সকল গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতিপত্তি ছিল, তাদের দায়িত্ব থাকতো কাবা শরীফ রক্ষণাবেক্ষণের। এ দায়িত্ব পালনকে তারা সম্মানিত ও গর্বের মনে করতো। শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হলো। কাবা শরীফ ও কাবাঘরকে সংস্কার করলেন মোযার সম্প্রদায়। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) নবুয়্যত প্রাপ্তির ৫ বছর আগে কাবাঘর সংস্কার করে মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশ।
এ কোরাইশ বংশেই মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ৫৭০ খ্রীঃ • জন্মগ্রহণ করেন। কোরাইশরা কাবা শরীফ সংস্কারের পর হাযরে আসওয়াত স্থাপন নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। সকলের সম্মতিক্রমে আল্লাহর রাসূল কাবাগৃহে হাযরে আসওয়াদ কাবা শরীফে স্থাপন করেন। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জীবিত অবস্থায় ৬৪ হিজরীতে আব্দুল্লাহ ইবনে জোবায়ের (রাঃ) কাবা শরীফ সংস্কার করেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭৪ হিজরীতে কাবা শরীফ সংস্কার করেন।সুদীর্ঘ ১৪শ’ বছরে কাবাগৃহে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয়নি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.