বাংলাদেশের মাটিতে শেষ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে হয়েছিল গত বছর নভেম্বরে। এরপর দেশের মাটিতে টাইগারদের মাঠে ফেরা হয়নি। দর্শকরাও দীর্ঘ ১০ মাস বঞ্চিত ছিল ক্রিকেট আনন্দ থেকে। গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে সেই অপেক্ষার অবসান হয়েছে। ভক্তদের আনন্দে ভাসাতে ব্যাট-বল হাতে মাঠে নেমেছেন সাকিব-তামিম-মাশরাফিরা। তাই দুপুর আড়াইটায় খেলা হলেও সকাল ১০টা থেকেই স্টেডিয়াম ফটকগুলোতে ছিল দর্শকদের ভিড়। বেশ সকাল থেকেই মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের টিকিট কাউন্টারেও যথারীতি উপচে পড়া ভিড় ছিল। কারণ আফগানদের বিপক্ষে অনলাইন টিকিট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ‘সহজ ডটকম’-এ ছাড়া প্রথম ম্যাচের টিকিট শেষ হয়ে গেছে শনিবার সন্ধ্যার পরই। তবে মহা আনন্দ নিয়ে মাঠে খেলা দেখতে আসা দর্শকদের অন্যতম বিড়ম্বনার নাম নিরাপত্তা। দেশে বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজ আয়োজন পড়েছিল শঙ্কার মাঝে। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটি। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার ও বিসিবির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার আশ্বাসে ইংল্যান্ড এই সফরে আসতে রাজি হয়। আগামী ৩০শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসবে ইংলিশরা। তার আগে আফগানিস্তান সিরিজে সরকারের দেয়া আশ্বাসের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মহড়া দেখা যাচ্ছে। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে মিরপুর ২ নম্বর স্টেডিয়াম পর্যন্ত মূল সড়ক দুপুর ১২টার মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়। যে কারণে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে দর্শকদের হাঁটতে হয় অনেকটা পথ। সেই সঙ্গে মূল সড়ক বন্ধ করে দেয়াতে অন্য সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এই যানজটে মাঠে আসা দর্শকদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। একটি সূত্রে জানা গেছে, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে ১৮০০ নিরাপত্তা কর্মী। স্টেডিয়ামের ভেতরে-বাইরে রয়েছে পর্যাপ্ত পুলিশ ও র্যাব। এছাড়াও বাংলাদেশের সব গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীরা ছিল সাদা পোশাকে। স্টেডিয়ামের ভেতরে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা ও বিমানবাহিনীর সদস্যরাও নানারকম প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। রাখছে সার্বক্ষণিক নজরদারিও আর এসব পেরিয়ে মূল মাঠে টিকিট নিয়ে প্রবেশ করতে দর্শকদের অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। চার তরুণ জানালো দুপুর ১২টায় গেটে আসে তারা। কিন্তু আড়াইটাই খেলা শুরু হলেও নিরাপত্তা তল্লাশির কারণে মাঠে প্রবেশ করতে পেরেছে ৩টার পর। তবে বেশির ভাগ দর্শকই খেলা দেখার আনন্দ ও জাতীয় স্বার্থে এই বিড়ম্বনা মেনে নিয়েছেন। মাঠে আসা মনির হোসেন বলেন, ‘আমি অনেকদিন থেকেই অপেক্ষা করছিলাম কবে বাংলাদেশের খেলা দেখবো। অবশেষে দেখতে পারলাম। হ্যাঁ, নিরাপত্তা তল্লাশির কারণে অনেকক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তবে অমি মনে করি দেশের স্বার্থে এটি আমাদের সবারই মেনে নেয়া উচিত।’ অন্যদিকে এবারই প্রথম খেলার টিকিট বিক্রি হচ্ছে শুধু অনলাইনে। এবার কোনো ব্যাংক টিকিট বিক্রি করছে না। তবে অনলাইনে টিকিট বিক্রি নিয়ে দর্শকদের তেমন কোনো অভিযোগ নেই। মাঠে এসে নিয়মিত খেলা দেখেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রহুল আমিন রাজু। অনলাইনে টিকিট পাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার টিকিট পাওয়া অনেক সহজ হয়ে গেছে। আমরা খুব দ্রুতই টিকিট হাতে পেয়েছি। তবে একেবারে যে অভিযোগ নেই তাও নয়। কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতি টিকিটেই ২৫-৩০ (১০০ থেকে ৩০০ টাকার টিকিটে) টাকা অতিরিক্ত মূল্য রাখা হচ্ছে প্রসেসিং ফি হিসেবে। শুধু তাই নয়, মাত্র সাতটি আউটলেটে দেয়া হচ্ছে টিকিট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর আর টিকিট দিতে রাজি হচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। আর নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সহজ ডটকমের দেয়া শর্তগুলো মেনে ফটো আইডি নিতেও দর্শকদের পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। এসব অভিযোগের বিষয়ে সহজের এক কর্মকর্তা মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, ‘আমাদের মাধ্যমে ছাড়া প্রথম ম্যাচের টিকিট গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার পরই শেষ হয়ে গেছে। আমরা এখন শেষ দুই ওয়ানডের টিকিট বিক্রি করছি। টিকিটের জন্য আমাদের এখানে বেশ চাহিদা ছিল।’ প্রতি বছর ব্লাকারদের যে উৎপাত ছিল এবার অবশ্য কিছুটা কম। এর কারণ মাঠের আশপাশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে ব্ল্যাক হয়েছে এমন অভিযোগও করেন মাঠে আসা বেশ কয়েকজন দর্শক।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.