তিনজন মানুষের উর্বরতা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা জন্ম দিয়েছেন একটি শিশু। নিউ সায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয়েছে ‘থ্রি পারসন’ ফার্টিলিটি টেকনিক। এ প্রক্রিয়ায় জন্ম নেয়া ওই শিশুটির বয়স এখন ৫ মাস। তাকে জন্ম দিতে বিজ্ঞানীরা তার মা, বাবা ও তৃতীয় একজন দাতার জেনেটিক কোড ব্যবহার করেছেন। ওই শিশুটির মায়ের জিন থেকে তাকে পুরো নতুন জেনেটিক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ নিয়েছেন মার্কিন চিকিৎসকরা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা চিকিৎসা বিজ্ঞানে, মেডিসিনের যুগে নতুন এক যুগের অবতারণা। যেসব পরিবারে বিরল জেনেটিক সমস্যা আছে এ প্রক্রিয়া তাদেরকে সহায়তা করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে নতুন ও বিতর্কিত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়। ভীষণভাবে চেক করতে হয়। এ প্রক্রিয়াকে বলে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডোনেশন। তবে এবারই প্রথম তিনজন মানুষের দেহ থেকে ডিএনএ নিয়ে শিশুর জন্ম দেননি বিজ্ঞানীরা। এ ধারা শুরু হয়েছিল ১৯৯০ দশকের শুরুতে। কিন্তু এবার যে প্রক্রিয়ায় এটা করা হয়েছে তা নতুন ও উল্লেখ করার মতো। উল্লেখ্য, জীবদেহে মাইটোকন্ড্রিয়া হলো ক্ষুদ্র একটি অঙ্গ। এটি খাদ্যকে ভেঙে শক্তি উৎপাদন করে। এ জন্য একে কোষের পাওয়ার হাউজও বলা হয়। কিছু নারীর মাইটোকন্ড্রিয়াতে জেনেটিক সমস্যা থাকে। তা তার দেহ থেকে সন্তানের দেহে প্রবাহিত হয়। এবার যে শিশুটিকে জন্ম দেয়া হয়েছে তার মা জর্ডানের নাগরিক। ওই পরিবারটিতে রয়েছে ‘লেই সিনড্রোম’ নামের একটি জেনেটিক সমস্যা। গর্ভে শিশু ধারণের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সমস্যা। এরই মধ্যে ওই নারীর চারবার গর্ভপাত হয়ে গেছে। দু’বার মৃত সন্তান প্রসব করেছেন। এর মধ্যে একটি শিশুর বয়স হয়েছিল আট মাস। লেই সিনড্রোম কী লেই সিনড্রোম হলো নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়ুবিক একটি মারাত্মক বিশৃঙ্খল। নতুন জন্ম নেয়া ৪০ হাজার শিশুর মধ্যে কমপক্ষে একজনের দেহে এটা দেখা যায়। শিশুর এক বছর বয়সের মধ্যে এ সমস্যাটি দৃশ্যমান হয়। এতে শিশুর চলাচল ধীর গতির হয়। মানসিক বিকাশ বিলম্বিত হয়। ব্রেন বিকশিত করে যেসব টিস্যু সেগুলোর ক্ষতি করে। এ সমস্যা নিয়ে যেসব শিশু জন্মগ্রহণ করে তারা দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে মারা যায়। বিশেষ করে শ্বাসযন্ত্রের জটিলতায় এটা বেশি ঘটে। এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছেন বিজ্ঞানীরা। মার্কিন বিজ্ঞানীদের একটি দল এ জন্য মেক্সিকো সফর করেছেন। কারণ, সেখানে এ রকম পরীক্ষা চালানোর বিরুদ্ধে কোনো আইন নেই। নেই কোনো নিষেধাজ্ঞা। সেখানে তারা মায়ের ডিম্বাণু থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডিএনএ সংগ্রহ করেন। একজন সুস্থ ডিম্বাণু দাতার দেহ থেকে সংগ্রহ করেন সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া। সেই মাইটোকন্ড্রিয়া শিশুটির পিতার শুক্রাণুর সঙ্গে নিষিক্ত করা হয়। এতে যে শিশুটির জন্ম হয়েছে তার সঙ্গে ওই তিনজনের সাদৃশ্য খুব কম। এ পদ্ধতিতে শিশুটিকে জন্ম দিয়েছেন নিউ ইয়র্ক সিটির নিউ হোপ ফার্টিলিটি সেন্টারের মেডিকেল ডাইরেক্টর ড. জন ঝাং ও তার সহকর্মীরা। তারা এ পদ্ধতিতে ৫টি ভ্রুণ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কাজ করেছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.