অভিবাসন নয়, বাজেটঘাটতি নয়, এমনকি ইসলামিক স্টেটও (আইএস) নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাঁচ সপ্তাহ আগে বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছে যৌনতা। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ও আগে বিল ক্লিনটন যেসব নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন, তার প্রতিটিতে সাহায্যকারীর ভূমিকা পালন করেছেন স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। সে প্রশ্ন যদি এখন তোলা হয়, তা মোটেই অপ্রাসঙ্গিক হবে না। প্রথম বিতর্কে তিনিই জিতেছেন, ট্রাম্প মুখে এমন কথা বললেও কোনো কোনো উপদেষ্টা তাঁকে জানিয়েছেন কথাটা সত্যি নয়। আর তাঁর বিপর্যয়ের কারণ, হিলারিকে আক্রমণের বদলে তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগের জবাব দিতেই ট্রাম্পকে অধিকাংশ সময় ব্যয় করতে হয়েছে। এই সমালোচনার মুখে ট্রাম্প বলেছেন, বিল ক্লিনটনের কেলেঙ্কারিগুলো তিনি তুলতে পারতেন, কিন্তু বিতর্কে বিল ও হিলারির কন্যা চেলসি ক্লিনটন উপস্থিত থাকায় সৌজন্যবশত সে কথা তোলেননি। কিন্তু দ্বিতীয় বিতর্কে সে কথা তোলা হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনি সেবার আরও আক্রমণাত্মক হবেন। বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় এ নিয়ে সাবধান করে দিচ্ছেন ট্রাম্প। প্রথম বিতর্কে হিলারি ১৯৯৬ সালের বিশ্বসুন্দরী ভেনেজুয়েলার অ্যালিসিয়া মাচাদোর প্রসঙ্গ তুলে ট্রাম্পকে নাস্তানাবুদ করেছিলেন। খেতাব জয়ের কিছুদিন পর মাচাদো মুটিয়ে গিয়েছিলেন, সে অপরাধে প্রতিযোগিতার আয়োজক ট্রাম্প তাঁকে শূকরের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। এতেই শেষ নয়, সাংবাদিক-দর্শকদের উপস্থিতিতে ব্যায়াম করে দেখাতে বাধ্য করেছিলেন। ব্যাপারটা সেখানেই শেষ হতে পারত, কিন্তু বিতর্কের পর চার দিন হয়ে গেছে, এখনো ট্রাম্প ও তাঁর কোনো কোনো উপদেষ্টা মাচাদোকে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। যেমন, সাবেক রিপাবলিকান স্পিকার ন্যুট গিংরিচও তাঁকে মোটা বলে ঠাট্টা করেছেন। ট্রাম্পের সাবেক প্রচারণা ব্যবস্থাপক কোরি লাওন্ডাউস্কি মাচাদোকে এক খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে, আরকানস অঙ্গরাজ্যের গভর্নর থাকার সময় বিবাহিত বিল ক্লিনটন জেনিফার ফ্লাওয়ারস নামে এক বার বা শুঁড়িখানার গায়িকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর হোয়াইট হাউসের শিক্ষানবিশ ২২ বছর বয়সী মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে অসংগত সম্পর্কের অভিযোগে মার্কিন কংগ্রেসে তিনি অভিশংসনের সম্মুখীন হয়েছিলেন পর্যন্ত। ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা বলছেন, বিল ক্লিনটনের কাজের নিন্দা করার বদলে হিলারি বরাবর তাঁর স্বামীর পক্ষ নিয়েছিলেন। ট্রাম্পের ভাষ্য, হিলারি বস্তুত এসব ঘটনায় স্বামী বিলের সাহায্যকারীর ভূমিকা পালন করেন। ন্যুট গিংরিচ ও নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডলফ জুলিয়ানি বলেছেন, এ কারণে পরবর্তী বিতর্কে সে প্রসঙ্গ তোলা মোটেই অসংগত হবে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ট্রাম্প নিজে এবং তাঁর এই দুই উপদেষ্টা প্রত্যেকেই বহু নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে জড়িত। ট্রাম্প নিজে তিনবার বিয়ে করেছেন, বিবাহিত থাকা সত্ত্বেও গোপন প্রণয় চালিয়ে গেছেন। নারীদের ব্যাপারে তাঁর তাচ্ছিল্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি সুবিদিত, প্রথম বিতর্কে সে সবের কিছু উদাহরণ হিলারি দিয়েছিলেন। ক্লিনটন শিবিরও অবশ্য বসে নেই। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরের বিতর্কে এ প্রসঙ্গ উঠলে তার মোক্ষম জবাব দেওয়ার জন্য হিলারি প্রস্তুত। তবে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন দেশের সামনে থাকা জরুরি চ্যালেঞ্জগুলো আলোচনার বদলে পুরোনো কাসুন্দি ঘাঁটা হবে বোকামি ও ক্ষতিকর। কংগ্রেসে ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের সমর্থকেরাও তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন ক্লিনটনের কেলেঙ্কারি নিয়ে অতিরিক্ত ঘাঁটাঘাঁটি না করতে। তাঁরা বলছেন, বিল ক্লিনটনের নারীঘটিত কেলেঙ্কারি সবার জানা, এ নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি করলে নারী ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন আরও কমবে। জর্জিয়ার প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর ডেভিড পারডু বলেছেন, বিল ক্লিনটন কবে কী করেছেন, এখন তা নিয়ে কথা বলা অর্থহীন। দেশের মানুষ জানতে চায় অর্থনীতি ও নিরাপত্তা প্রশ্নে কোন প্রার্থী কী করবেন। সন্দেহ নেই, হিলারি নিজে নারীদের নিয়ে বিপক্ষ শিবিরের এই কথা চালাচালি বেশ উপভোগ করছেন। নারী ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন এমনিতেই কম, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জন নারী ভোটার ট্রাম্পের বিপক্ষে। এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোক্ত করতে হিলারির শিবির নারী ভোটারদের লক্ষ্য করে একাধিক টিভি বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। সদ্য প্রকাশিত এক বিজ্ঞাপনে ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা বলেছেন, হোয়াইট হাউসে আমরা এমন একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চাই, যিনি শিশুদের জন্য হবেন রোল মডেল। ট্রাম্প ও হিলারি পরবর্তী বিতর্কে মুখোমুখি হবেন ৯ অক্টোবর। মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইস ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিতর্ক হবে টাউনহল ধাঁচের। যে দুজন সঞ্চালক এখানে থাকবেন, তাঁদের একজন নারী, একজন পুরুষ। তাঁদের উত্থাপিত প্রশ্নগুলো আসবে ইন্টারনেট থেকে পাওয়া মার্কিন নাগরিকদের প্রশ্ন থেকে। এখানকার অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র হলঘরে অনেক বেশি অন্তরঙ্গ পরিবেশে অনুষ্ঠিত সে বিতর্কে যৌনতা অথবা নারীঘটিত কেলেঙ্কারির কথা তুললে তা হয়তো ট্রাম্পের নিজের জন্যই খুব স্বস্তিকর অভিজ্ঞতা হবে না। এদিকে প্রথম বিতর্কের পর জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত একাধিক জনমত জরিপের ফলাফল আসতে শুরু করেছে। এর প্রতিটিতে হিলারি ট্রাম্পের তুলনায় ১ থেকে ৫ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। বিতর্কের আগের দিন পর্যন্ত ট্রাম্প কয়েকটি জরিপে ১ বা ২ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। কাজেই দ্বিতীয় বিতর্কেও তিনি যদি পা হড়কে পড়েন, তাহলে ফের উঠে দাঁড়ানো তাঁর জন্য কঠিন হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.