মুহূর্তেই আনন্দ উৎসব পরিণত হলো শোকে। বিয়ের আসরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় তখন চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। রক্তে সয়লাব পুরো উৎসবস্থল। এখানে ওখানে পড়ে আছেন আহতরা। ছিটকে পড়ে আছে নিহতদের বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। তার মাঝে বাঁচার আকুতি নিয়ে আর্তনাদ করছেন আহতরা। হৃদয়বিদারক এ ঘটনা ঘটেছে সিরীয় সীমান্তের কাছে তুরস্কের শহর গাজিয়ানটেপে। তুরস্কে একে তো ১৫ই জুলাইয়ের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর মানুষজনের মধ্যে এক রকম চাপা আর্তনাদ, অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক প্রিয়জনের জন্য নির্বাক হয়ে গেছেন অনেক স্বজন, তার মধ্যে এমন হামলায় তুরস্ক জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এক শোকের আবহ। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান জানিয়েছেন, এই আত্মঘাতী হামলাটি চালিয়েছে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী এক শিশু। আর হামলার পেছনে ছিল জঙ্গি সংগঠন আইএস। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি ও বিবিসি। গাজিয়ানটেপের গভর্নর আলী ইয়েরলিকায়া এক বিবৃতিতে এই হামলার কথা নিশ্চিত করেছেন। হামলায় কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৬৯। এর মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। ফলে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তিনি এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন, যে বা যারাই এ হামলার জন্য দায়ী হোক তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) এমপি মেহমেদ এরদোগান বলেছেন, এ হামলার জন্য কে বা কারা দায়ী তা পরিষ্কার নয়। তবে এটা আত্মঘাতী হামলা হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। এ ধরনের হামলা চালিয়ে থাকে আইএস অথবা কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)। গাজিয়ানটেপের সাহিনবে জেলায় ওই হামলা হয়েছে। এ এলাকায় কুর্দিদের বসবাস। ফলে এখানে কুর্দিদের এমন হামলা চালানোর আশঙ্কা কম। এক্ষেত্রে চোখ যাচ্ছে আইএসের দিকে। ওই এলাকার একেপি পার্টির এমপি সামিল তায়ার বলেছেন, প্রাথমিক তথ্যে মনে হচ্ছে এ হামলার জন্য দায়ী আইএস। কারণ, এ এলাকায় বহুসংখ্যক কুর্দির বসবাস। এখানে কুর্দিদের হামলা চালানোর কথা নয়। তাছাড়া, ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিপুল সংখ্যক কুর্দি। কুর্দিপন্থি পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি) বলেছে, ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে তাদের বহুসংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিল। এর বেশির ভাগই নারী ও শিশু। তুরস্ক পার্লামেন্টে গাজিয়ানটেপের প্রতিনিধিত্ব করেন উপ-প্রধানমন্ত্রী মেহমেদ সিমসেক। তিনি বলেছেন, এসব হামলার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসীরা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চায়। আমরা তাদের এ উদ্দেশ্য সফল হতে দিতে পারি না। এ হামলাটি আত্মঘাতী হওয়ার আশঙ্কা বেশি বলে তিনি মত দেন। পরে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এই আত্মঘাতী হামলাটি চালিয়েছে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী এক শিশু। তার পেছন থেকে হামলার মূল হোতা হিসেবে কাজ করেছে আইএস। এরদোগান জানিয়েছেন, হামলায় আহত ৬৯ জনের মধ্যে ১৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত লিখিত বিবৃতিতে এরদোগান বলেছেন, আইএস, পিকেকে’র কুর্দি জঙ্গি এবং যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারীদের মধ্যে ‘কোনো পার্থক্য’ নেই। তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের দেশ ও জাতির একটিই বার্তা দেয়ার রয়েছে। তা হলো- ‘তোমরা কখনও সফল হবে না।’ উল্লেখ্য, সিরিয়া সীমান্ত থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তরে এই গাজিয়ানটেপ শহর। ফলে এ স্থানটি যুদ্ধকবলিত সিরিয়ার মানুষের জন্য একটি উপযুক্ত স্থানে পরিণত হয়েছে। তারা বিভিন্ন সময়ে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে সেখানে আশ্রয় নিচ্ছেন। এ বছরে তুরস্কে বেশ বড় দুটি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। তাতে নিহত হয়েছেন বহু মানুষ। কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা রাজধানী আঙ্কারায় দুবার হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে আইএসের আত্মঘাতী বোমারুরা ইস্তাম্বুলের প্রাণকেন্দ্রে পর্যটকদের ওপর দুবার হামলা চালিয়েছে। ১৫ই জুলাইয়ের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর তুরস্ক এখনও স্থিতাবস্থায় ফেরেনি। ওই অভ্যুত্থানের জন্য প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের সরকার দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে বসবাসকারী তুরস্কের ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকে। গুলেন অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ওদিকে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জোর আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক। এরই প্রেক্ষিতে কয়েক দিনের মধ্যে অভিযোগ তদন্তের জন্য তুরস্কে আসার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ের একটি দলের। ওদিকে বৃহস্পতিবার এক বোমা হামলায় তুরস্কে নিহত হয়েছেন ১২ জন। এ জন্য তুর্কি নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা দায়ী করেছে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)কে। ১৫ই জুলাইয়ের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর এ দলটি তুরস্কে তাদের হামলা জোরালো করেছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.