মাত্র কয়দিন হয়েছিল মোটরসাইকেল চালানো শিখেছিলেন রাসেল। পুরো নাম ইমামুল হক রাসেল। যাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের ‘সাংগঠনিক সম্পাদক’ বলে চিনতেন। সেই রাসেলের মৃত্যুর খবরটা যেন গতকাল বাতাসের আগেই ছড়িয়েছে দুর্ঘটনার পর পরই। সদা হাস্যোজ্জ্বল ছেলেটি এতো তাড়াতাড়ি হারিয়ে যাবে তা কখনও ভাবতে পারেননি তার সহপাঠীরা। গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দায় যখন তার লাশ পড়ে থাকে তখন বন্ধুদের চিৎকারে ভারি হয়ে উঠছিলো আশপাশের পরিবেশ। ভীষণ চটপটে ছিল রাসেল। ছিল অতি আবেগ প্রবণ। মাকে খুব ভালোবাসতো। আর তাই মাকে চমকে দিতে গতকাল ভোর সকালে পাহাড় ঘেরা চবি ক্যাম্পাস থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে রওনা হন গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে। কিন্তু ক’দিন আগে শেখা মোটরসাইকেল চালানোর সেই ড্রাইভিং যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জন্য উপযুক্ত হয়নি তা কখনই টের পাননি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর শ্যামলা রংয়ের ছেলেটি। নোয়াখালীর গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে ফেনীতে রাসেলের মোটরসাইকেলটিকে একটি ট্রাক ধাক্কা দিলে মুহূর্তেই সে ছিটকে পড়ে রাস্তা থেকে। এই সময় গুরুতর আঘাত পায় মাথায়। রক্ত ঝরতে থাকে শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে। থেঁতলে যায় নানা অংশ। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে নেয়া হয় ফেনী সদর হাসপাতালে। সেখানে পরিস্থিতির অবনতি হলে আনা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১২টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাসেলের মৃত্যু সংবাদের পর পরই হাসপাতালে ছুটতে থাকেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী। ভিড় করেন মহানগর ও ক্যাম্পাস শাখা ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী। সেখানে গিয়ে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। বন্ধুদের অনেকে কাঁদছেন। কেউবা চোখের জলে শেষবারের মতো দেখে নিচ্ছিলেন তার রক্তাক্ত মুখটি। রাসেলের বন্ধুরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পাওয়ার পর বাড়ি থেকে টাকা এনে সে ডিসকভার ব্র্যান্ডের সর্বশেষ মোটরসাইকেলটি কেনেন। ২০০৯-১০ সেশনে কাঙ্ক্ষিত বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয় এই মেধাবী ছাত্র। এরপর জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। গতানুগতিক ধারার রাজনীতি পরিবর্তন আনতে রাসেল ক্যাম্পাসে কাজ করছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কথা হয় রাসেলের বন্ধু ইশতিয়াকের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। কলা ভবনের ঝুপড়ি, কখনও ছাত্রী হলের সামনে বন্ধুরা সবাই মিলে আড্ডা দিয়েছি। সে মাতিয়ে রাখতো সবাইকে। কিন্তু এভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে চলে যাওয়ায় সবার মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার মা বারবারই মূর্ছা যাচ্ছেন। রাসেলের অপর বন্ধু পাভেল বলেন, রাসেলের মন খুব নরম ছিল। সে সেদিন বলেছিল মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি যাবে। গতকাল সকালের দিকে সে রওনা করে। খবরটি যখন পাই তখন মোবাইলে এসএমএস আসে আরেকজনের কাছ থেকে। খবরটি পেয়ে আর থাকতে পারিনি। দৌড়ে চলে এসেছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে একটি ছেলের মৃত্যু কোনো বাবা মা মেনে নিতে পারবেন না। কত কষ্ট করে তাকে পড়ালেখা করিয়েছে। প্রাণবন্ত ছেলেটির মৃত্যুতে যেন বারবারই ভেসে উঠছে তার মুখায়বের ছবি। আফসোস!
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.