রাজনীতিতে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েই নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠের বিরোধী দল বিএনপিও নানা হিসাব কষতে শুরু করেছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে- এমনটাই মনে করছেন দলটির সব স্তরের নেতাকর্মী। নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই দলীয় মনোনয়ন পেতে সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতারা। সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি ছাত্রদলের সাবেক অর্ধশত নেতা নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিগত সময়ে ছাত্রদলের সাবেক অনেক নেতা মনোনয়ন পাওয়ায় তারা আশাবাদী হয়ে উঠছেন।
অতীতে দলের অনেক নেতা এমপি-মন্ত্রী হয়ে অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও দলের দুর্দিনে তাদের রাজপথে দেখা যায়নি। আগামী নির্বাচনে এসব সুবিধাবাদী মনোনয়ন দৌড়ে ছিটকে পড়তে পারেন। গত আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ায় অনেক তরুণই হাইকমান্ডের নজর কাড়তে সক্ষম হন। ভবিষ্যতে দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া যায়- এমন মেধাবী ও মাঠপর্যায়ে জনপ্রিয় সাবেক ছাত্রনেতাদের একটি তালিকা তৈরি করছে হাইকমান্ড। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্র জানায়, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ছাত্রদলের সাবেক অনেক নেতাই মনোনয়ন পেতে কাজ শুরু করেন। ওই সময় তারা এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করেন। কিন্তু বিএনপি ওই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তবে থেমে নেই তাদের প্রস্তুতি। এতদিন কিছুটা থমকে থাকলেও নির্বাচনী বাতাস শুরু হওয়ায় তারা আবারও গা ঝাড়া দিয়ে ওঠছেন। নিয়মিত এলাকায় যাচ্ছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং ঈদে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার-ব্যানারে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ড. আসাদুজ্জামান রিপন ঢাকা-৪ ও ৫ আসনের যে কোনো একটি থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার সমসাময়িক অনেক সাবেক ছাত্রনেতা এমপি এমনকি মন্ত্রী হলেও ড. রিপন ক্ষমতা থেকে দূরেই রয়ে গেছেন। এবার তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী। যুগান্তরকে এ সাবেক ছাত্রনেতা বলেন, চেয়ারপারসন নতুন ধারার রাজনীতি ও নতুন ধারার সরকার গঠনের যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন তা তরুণ নেতাদের আরও উদ্দীপ্ত করেছে। আগামী নির্বাচনে তরুণদের মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে চেয়ারপারসন অগ্রাধিকার দেবেন বলে আশা করি। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রুহুল কবির রিজভী কুড়িগ্রাম অথবা বগুড়া কোনো একটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।
ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক আহ্বায়ক বর্তমানে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম ঢাকা-১০ থেকে মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন। সাবেক ছাত্রনেতা মীর সরফত আলী সপু মুন্সীগঞ্জ-১, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল বারী বাবু লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে মনোনয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। জানতে চাইলে বাবু যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করছি। হাইকমান্ড যদি মনোনয়ন দেন তাহলে জয়ী হতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমানে যুবদলের সহসভাপতি ফরহাদ হোসেন আজাদ পঞ্চগড়-২ থেকে দলের টিকিট পাওয়ার লক্ষ্যে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছেন। এলাকায় দলীয় যে কোনো কর্মসূচি পালন করছেন। এ আসনের সাবেক এমপি মোজাহার হোসেন সম্প্রতি ইন্তেকাল করায় সামনের নির্বাচনে আজাদ দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। যুগান্তরকে আজাদ বলেন, বিগত আন্দোলনে নেতাকর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। মনোনয়ন পেলে সবার সহযোগিতায় এ আসনটি বিএনপি নেত্রীকে উপহার দিতে পারব বলে আশা করি।
বিএম কলেজের সাবেক ভিপি ও ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুল হক নান্নু ঝালকাঠি-২, ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন ভোলা-৪, ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল ফরিদপুর-২, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম সিরাজগঞ্জ-৫ (কামারখন্দ-চৌহালী) থেকে মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন।
আলিম যুগান্তরকে বলেন, ২০০১ সাল থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিগত আন্দেলনসহ কেন্দ্রীয় যে কোনো কর্মসূচি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পালন করে যাচ্ছি। ভবিষ্যৎ তরুণ নেতৃত্বের প্রতি চেয়ারপারসনের যে আগ্রহ তাতে আগামী নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন। নয়ন যুগান্তরকে বলেন, আগামীতে নির্বাচনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্ততি রয়েছে। এলাকার সাধারণ মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। হাইকমান্ড মনোনয়ন দিলেও নির্বাচনে জয়ী হব বলে আশা করি।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব দীর্ঘদিন রয়েছেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে। পাবনার ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন তিনি। ছাত্রদলের একসময়ের ব্যাপক আলোচিত নেতা সানাউল হক নিরু আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তৎপর হয়েছেন। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল নরসিংদী-৪ থেকে মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন। সাবেক ছাত্রনেতা বজলুল বাসিত আনজু ঢাকা-১৫, মোস্তফা খান সফরী চাঁদপুর-২, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু ঝিনাইদহ-১, হায়দার আলী লেলিন ভোলা সদর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি তাইফুল ইসলাম টিপু নাটোর-১, আসাদুজ্জামান পলাশ ও আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন মাদারীপুর-৩, আমিরুজ্জামান খান শিমুল ঝিনাইদহ-৩ থেকে মনোয়ন পেতে এলাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাসান মামুন পটুয়াখালী-৩ দশমিনা-গলাচিপা থেকে এবং একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জানতে চাইলে মামুন যুগান্তরকে বলেন, আগামীতে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে দল ও সরকার পরিচালনার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন দলের হাইকমান্ড। সেই লক্ষ্য পূরণে আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে তরুণ নেতারা প্রাধান্য পাবে বলে আশা করি। নির্বাচনের জন্য অনেক আগ থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। দল মনোনয়ন দিলে জনগণের বিপুল ভোটে জয়লাভ করব বলে আশা করি।
সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে আবদুল লতিফ জনি ফেনী-৩, আবদুল বারী ড্যানি নেত্রকোনা-২, মুনির হোসেন পটুয়াখালী-১, মনিরুজ্জামান মনির পটুয়াখালী-২, আবদুল মতিন নওগাঁ-২, অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬, তকদির হোসেন জসিম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫, মামুন হাসান ঢাকা-১৪, বিল্লাল হোসেন তারেক চাঁদপুর, রাজশাহী কলেজের সাবেক ভিপি সাইফুল ইসলাম মার্শাল চাঁপাই-২, সাবেক ছাত্রনেতা কামাল আনোয়ার ঠাকুরগাঁও-৩, এসএম জাহাঙ্গীর ঢাকা-১৮, আবদুল আওয়াল খান কুমিল্লা-৪, ওবায়দুল হক নাসির টাঙ্গাইল-৮, আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল রাজশাহী-৬, শফিকুল হক মিলন রাজশাহী-৩ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন বাহার পটুয়াখালী সদর, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা আ. হালিম খোকন বাগেরহাট-৪, এএসএম শহিদুল্লাহ ইমরান নেত্রকোনা-৫, এজমল হোসেন পাইলট নেত্রকোনা, ওয়ারেছ আলী মামুন জামালপুর সদর থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন নেত্রীও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন। রাবির সাবেক ছাত্রনেত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১, রেহেনা আক্তার রানু ফেনী-২, নিলোফার চৌধুরী মনি জামালপুর-৫, শাম্মী আক্তার হবিগঞ্জ-৪ থেকে দলের মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন। জানতে চাইলে রানু যুগান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসনের নিজ এলাকা ফেনী থেকে নির্বাচন করা যে কোনো নেতার জন্য গর্বের। ফেনীর মেয়ে হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। দলীয় চেয়ারপারসন মনোনয়ন দেবেন বলে আশা করি। ছাত্রদলের অনেকে এরই মধ্যে নির্বাচন করেছেন : ছাত্রদলের সাবেক অনেক নেতাই এর আগেও দলের মনোনয়ন পেয়েছেন।
সংসদ সদস্য এমনকি মন্ত্রীও হয়েছেন কেউ কেউ। তাদের বেশিরভাগই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন। যারা বিগত সময়ে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের মধ্যে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শামসুজ্জামান দুদু, ফজলুল হক মিলন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাবেক আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিখোঁজ এম ইলিয়াছ আলী, নাজিমউদ্দিন আলম, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, খায়রুল কবির খোকন, সেলিমুজ্জামান সেলিম, এসএম জিলানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সাবেক ভিপি শিরিন সুলতানা, ইডেন কলেজের সাবেক ভিপি হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.