আশুলিয়ার গাজীরচট বসুন্ধরা এলাকায় র্যাবের অভিযানে লাফ দিয়ে পালাতে গিয়ে আহত নব্য জেএমবির অর্থদাতা আবদুর রহমান ওরফে নাজমুল হক ওরফে আইনুল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। শনিবার রাতে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আবদুর রহমান জেএমবির উচ্চ সারির একজন নেতা এবং অর্থের মূল যোগানদাতা। র্যাব এর আগে দুই নারী জঙ্গিকে আটক করেছিল। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অর্থের যোগানদাতা হিসেবে চিহ্নিত করেই তাকে গ্রেপ্তার করতে আশুলিয়ায় ওই বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় তার বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, বেশ কিছু জিহাদি বই, দেশীয় অস্ত্র, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক ব্যাটারি, ইন্টারনেট মডেম ও নগদ ৩০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এদিকে অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ জানান, নব্য জেএমবির অর্থদাতা আব্দুর রহমান ওরফে নাজমুল হক ওরফে আইনুল হক সপরিবারে আশুলিয়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস করছেন বলে গোপন সংবাদ পায় র্যাব। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর কয়েকটি টিম শনিবার বিকেলের দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল বসুন্ধরার টেক এলাকায় শাহীন মৃধার ৫ তলা ভবন ও ভবনের আশপাশে এলাকা ঘিরে ফেলে তাকে আটক করতে। এ সময় আব্দুর রহমান র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ৫ তলার জানালার গ্রিল কেটে লাফিয়ে নিচে পরে কৌশলে পালাতে গিয়ে আহত হয়। পরে র্যাব সদস্যরা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। তিনি আরো জানান, নব্য জেএমবি অর্থদাতা আবদুর রহমানের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে বাসার বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত প্রায় ৩০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক, নাইট ভিশন বাইনুকুলার, মোবাইল জ্যামার, উদ্ধার করা হয়েছে। এবং জঙ্গি আবদুর রহমানের স্ত্রী ও দুই ছেলে তার এক শিশু কন্যা ও বাড়ির কেয়ার টেকারকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনার সময় মোবাইল জ্যামারটি তার সঙ্গে থাকতো। তার কাছ থেকে যে সকল তথ্য পাওয়া গেছে তা থেকে জানা যায় ইতিপূর্বে নব্য জেএমবিরা যেখানে হামলা চালিয়েছে নাশকতার সকল অর্থের যোগান সে-ই দিয়েছে। কোথায় কীভাবে অর্থ সরবরাহ করা হতো তার একটি তালিকাও পাওয়া গেছে। প্রতিটি অভিযানেই সে নিজে অংশগ্রহণ করতো এবং ঘটনাস্থলের আশপাশে অবস্থান করতো। এ ছাড়াও উদ্ধারকৃত বেশ কিছু মানচিত্রে দেখা গেছে যেখানে যেখানে নাশকতা চালানো হয়েছে তা সুন্দরভাবে মার্কিং করা রয়েছে। ৬ মাস আগে আয়নুল নামে এখানে বাসা ভাড়া নেয় আবদুর রহমান। সে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভে চাকরি করেন বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীদেরকে। তার বিষয়ে প্রতিবেশীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভে চাকরি করে এ হিসেবেই আমরা তাকে চিনি। তাছাড়া সে ৬ মাস আগে এখানে ভাড়া এসেছে আমাদের সাথে তেমন সর্ম্পকও নেই। খবর পেয়ে ঢাকা-১৯ আসনের সাংসদ ডা. এনামুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, আবদুর রহমান র্যাবের তালিকাভুক্ত জঙ্গি। জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবির নাশকতারমূল অর্থদাতা। র্যাব আরো বলেন, তদন্ত অব্যাহত রয়েছে ঘটনার সঙ্গে অন্য কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। উল্লেখ্য, শনিবার বিকালে আশুলিয়ার বাইপাইল বসুন্ধরা এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। অভিযানের সময় আবদুর রহমান বারান্দায় চলে যায়। পরে দরাজা আটকে দিয়ে বারান্দার গ্রিল কেটে ৫ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হলে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.