‘আয়নাবাজি’ মুক্তির দিনই দেখতে গিয়েছিলাম বড় পর্দায়। প্রথমদিন থেকেই হাউজফুল ছিল ছবিটি। যার ধারাবাহিকতা এখনও চলমান, আমার পরিচিত অনেকেই এখন পর্যন্ত এই ছবি দেখার জন্য হলের টিকিট পাননি। আমাদের দেশের ছবির মান নিয়ে অনেক কথন আছে, প্রায় ছবিই অন্য দেশের ছবির ফর্মুলার প্রতিচ্ছবি। প্রথম যখন আয়নাবাজি’র ট্রেইলার দেখেছিলাম, তাতে মনে হয়েছিল ভিন্ন ধর্মের কোন একটা ছবি হতে পারে যা পরে প্রমাণিত হলো। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দুর্দান্ত অভিনয় এবং যার কথা না বললেই নয় তিনি হলেন অমিতাভ রেজা, যার পরিচালনায় পরিচালিত ‘আয়নাবাজি’। বিজ্ঞাপন জগতের অন্যতম খ্যাতনামা পরিচালক হিসেবে খুবই পরিচিত মুখ তিনি। তার দক্ষতার নতুন অধ্যায় প্রমাণ করেছেন প্রথম ছায়াছবিটি পরিচালনা করে। এই ছবিটি প্রমাণ করেছে বর্তমান যুগে কোনো ছায়াছবিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে সুন্দর সিনেমাটোগ্রাফি এবং সমাজের প্রেক্ষাপট এবং মেটালিক গল্পকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা ও দর্শককে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাসপেন্সে ধরে রাখা যায়। প্রধান চরিত্রের অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী যাকে ঘিরেই মূল গল্পটি নির্মিত তার অভিনয়ের দক্ষতার প্রশংসা করতেই হয়। তবে আমার মতে এডিটিং সুন্দর ছিল। তবুও কিছু কিছু অংশে বা দৃশ্যে আরো দক্ষতা থাকলে হয়তো আরো সুন্দর হতো। এই ছবিতে কিছু নবীন অভিনেত্রী-অভিনেতা ছিলেন যাদের উপস্থিতি অল্প সময়ের জন্য থাকলেও চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন যার মধ্যে নবীন অভিনেত্রী ইফাত ত্রিশা। তিনি অনেক বিজ্ঞাপনে পারফরম করেছেন এবং প্রায় সময় করে থাকেন। এখন চলে যাই ‘আয়নাবাজি’ দেখে আমার কিছু ভাবনার কথায়। আমরা আয়নায় দেখতে পাই শুধু প্রতিচ্ছবি, কিন্তু দেখতে পাই না প্রতিচ্ছবির পেছনের বাস্তবতা, যেমনটা সমাজের অনেক নামীদামি ব্যক্তিদের লুকিয়ে থাকা অতি ধূর্ততা। এটি একটি সামাজিক ব্যাধিও বটে। যা আমরা অন্ধকারের জগতে ক্ষমতাধর লোকদের প্রতিও ভীষণভাবে আকৃষ্ট হতে পারি। শুধু তাই নয়, সমাজের অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও কিন্তু প্রশাসনিক ক্ষমতাধরদের অতি কাছের বা ডান হাত হয়ে থাকে। বৈচারিক দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে। অধিকতর দুর্বল ও নীরিহ ব্যক্তিরাই সাজা ভোগ করে যেটা আঙ্গিক হিসেবে ছবিটিতে দেখানো হয়েছে। আমাদের দেশেও এমন ঘটনা বিরল নয়। আসল অপরাধীর সাজা ভোগ হলেও তার নামধারী সাদৃশ্য অন্য কেউ জেলহাজতে কাটিয়েছে। অধিক অর্থের বিনিময়ে এসব কাজে ব্যবহার করা হয় নিরীহ ব্যক্তিকে, অনেক সময় দরিদ্রদের টাকার লোভ দেখিয়েও এসব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও এ ধরনের ঘটনা অন্যতম। এই ছবিতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় আমার মনে হলো, আমাদের আইন ব্যবস্থা দুর্বল এবং যথোপযোগী প্রয়োগ হয় না বলেই শুনে আসছি। কিন্তু এখনো আইনের প্রতি শ্রদ্ধা উচ্চস্তরে রয়েছে। যেমনটা দেখানো হয়েছিল কোন ক্ষমতাবান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও অপরাধের কারণে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। যদিও দেখানো হয়েছিল কৌশলে নিজের সাদৃশ্য কাউকে ব্যবহার করে অন্য কাউকে জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এক সময় মূল অপরাধীকেই শাস্তি পেতে হয় এবং সাদৃশ্য ব্যক্তি কৌশলে নিজেকে বাঁচিয়ে নেয়। এখানে উল্লেখযোগ্য লক্ষ্যণীয় বিষয় বা বার্তাটি ছিল আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত একটা নাটক, এই নাটকের বলি হতে হয় সাধারণ মানুষ যাদের সামনে দেখানো হয়। কিন্তু যারা ব্যবহার করছে নাটকে সাজানোর জন্য তারা কখনই ধরা দিতে চায় না। এই বার্তাটি হয়তো লেখক, পরিচালক দিতে চেয়েছেন নীরিহ এবং দরিদ্র মানুষের সতর্কতার বাণী হিসেবে। কিভাবে প্রয়োজনের সময় তাদের ব্যবহার করা হয় এবং বলি হতে হয় প্রয়োজনের ক্ষেত্রে। সর্বোপরি ‘আয়নাবাজি’ একটি সুপরিকল্পিত পরিচ্ছন্ন ইঙ্গিতপূর্ণ সুঅভিনয় ও সাসপেন্সে ভরপুর ব্যতিক্রমধর্মী একটি ছায়াছবি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.