প্রতিটি জাতীয় জনমত জরিপে নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের ভরাডুবির সব লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে পরিষ্কার হচ্ছে পরাজিত হলে বিনা প্রতিবাদে ট্রাম্প ফলাফল মেনে নেবেন না। তিনি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনব্যবস্থা দুর্নীতিতে ভরা। ফলাফল আগে থেকেই ঠিক করা আছে, তথ্যমাধ্যম, করপোরেট আমেরিকা ও ওয়াল স্ট্রিট হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে হিলারি ক্লিনটনের হাতে জয় তুলে দিতে। গত শনিবার নিউ হ্যাম্পশায়ারে এক জনসভায় ট্রাম্প বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির যে খবর বেরিয়েছে, তা নির্বাচনের ফল ছিনিয়ে নেওয়ার এক ছলমাত্র। দুর্নীতিগ্রস্ত তথ্যমাধ্যম হিলারি ক্লিনটনকে জয়ী করতে চায়, সে কারণেই তারা এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। একই জনসভায় ট্রাম্পের অভিযোগ সমর্থন করে অ্যালাবামার রিপাবলিকান সিনেটর জেফ সেশন্স বলেন, নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ট্রাম্পের এই বক্তব্য তাঁর একনিষ্ঠ সমর্থকদের মধ্যে সাড়া জাগাতে পেরেছে। তাঁরাও মনে করেন নির্বাচনব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত। পলিটিকোর সর্বশেষ জাতীয় জরিপ অনুসারে, ৭৩ শতাংশ রিপাবলিকান মনে করেন নির্বাচনের ফল ‘চুরি’ হতে পারে। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ মনে করেন এ বছরের নির্বাচনে ভোট নিয়ে কারচুপির আশঙ্কা রয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার ক্রিস সিলিজা জানিয়েছেন, হারলে ট্রাম্প এই নির্বাচনের ফলাফল নাও মানতে পারেন। সারা জীবন তিনি যেকোনো মূল্যে জয়ী থাকতে চেয়েছেন। এখন তিনি তাঁর ব্যবসায়ী জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রফিটির জন্য লড়ছেন। সেটি হাতছাড়া হলে নতমস্তকে মধ্যমঞ্চ ছেড়ে সরে দাঁড়াবেন, তা মনে হয় না। তাঁর সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ ও ষড়যন্ত্র-তত্ত্বে বিশ্বাসী সমর্থকেরাও নীরবে প্রস্থান করবেন বলে মনে হয় না। সালোন পত্রিকার বব সেসকা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের অনেক সমর্থক প্রয়োজন হলে অস্ত্র হাতে ট্রাম্পের পক্ষে লড়তে প্রস্তুত। দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা ডেমোক্রেটিক ভোটারদের ভয় দেখানো শুরু করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে ভার্জিনিয়ার পালমিরায় ডেমোক্রেটিক পার্টির একটি অফিসে একদল সশস্ত্র যুবককে পাহারা দিতে দেখা গেছে। ট্রাম্পের সমর্থক এই যুবকেরা বলেন, অনেক রিপাবলিকান সমর্থক ভীত যে তাঁদের ভোট দিতে দেওয়া হবে না। এসব লোককে সাহস জোগাতেই তাঁরা টহল দেওয়া শুরু করেছেন। সেসকা মনে করেন, এই টহলদারির আসল লক্ষ্য হলো ডেমোক্রেটিক ভোটারদের মনে ভয় জাগানো, তাঁদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখা। নির্বাচনের আগেই এর ফলাফল প্রত্যাখ্যানের এই চেষ্টা আমেরিকার রাজনৈতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেসের রিপাবলিকান স্পিকার পল রায়ান মনে করেন এই চেষ্টা অব্যাহত থাকলে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর প্রবল নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাঁর মুখপাত্র অ্যাশলি স্ট্রং জানিয়েছেন, আমেরিকার নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর পল রায়ানের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তিনি মনে করেন, এখানে বড় ধরনের কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। হিলারির মুখপাত্র ববি মুক নির্বাচনে কারচুপির সব আগাম অভিযোগ খারিজ করে বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ না তুলে ট্রাম্পের উচিত হবে নভেম্বরের নির্বাচনে সুস্থ ভোটে তাঁর সমর্থকদের উৎসাহিত করা। গণতন্ত্রের জন্য নিরাপদ ও সম্পূর্ণ স্বচ্ছ পরিবেশে ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করা একটি পূর্বশর্ত। প্রেসিডেন্ট ওবামাও ট্রাম্পের ‘নির্বাচন ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত’—এই অভিযোগ বাতিল করে দিয়েছেন। ‘পুরো ব্যাপারটাই হাস্যকর’, তিনি বলেছেন। হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে নির্বাচন যাতে নির্বিঘ্নে শেষ হয় সে জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যদি নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে সে প্রশ্নের সুরাহার জন্য আদালতের আশ্রয় নিতে হবে। বড় ব্যবধানে হিলারির জয় হলে সে প্রশ্ন ওঠে না, কিন্তু হিলারির সঙ্গে তাঁর প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান সামান্য হলে তিনি নতুন করে ভোট গণনার দাবি করতে পারেন। এর ফলে নির্বাচনের ফল ঘোষণা বিলম্বিত হতে পারে। ২০০০ সালে জর্জ বুশ ও আল গোরের মধ্যে ফ্লোরিডার কয়েকটি নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ভোট পুনর্গণনা নিয়ে এক মাসেরও বেশি সময় ব্যয় করতে হয়। তাতেও সে প্রশ্নের সুরাহা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট ৫-৪ ভোটে জর্জ বুশকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। তাঁর সমর্থকদের আপত্তি সত্ত্বেও আল গোর সে রায় মেনে নিয়েছিলেন। অতি আশাবাদী ব্যক্তিরাও মনে করেন না ট্রাম্প আল গোরের দেখানো সে পথ অনুসরণ করবেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.