চট্টগ্রামে ভগ্নিপতিকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ শ্যালক বাবুল ধরের কাছ থেকে পরকীয়ায় আসক্ত থাকার নতুন তথ্য পেয়েছে। এ ঘটনায় নিহত ভগ্নিপতি অঞ্জন ধরের স্ত্রী প্রিয়াংকা ধর নিজেই ভাই বাবুলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
তবে এ সময় বাবুল ধর থানার ওসিকে জানিয়েছেন, তার ভগ্নিপতি অঞ্জন পরনারীতে আসক্ত ছিল। আর সেই কারণে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বোন প্রিয়াংকাকে মারধর করতো। যদিও তার বোন এ নিয়ে কখনো কিছু মুখ ফুটে বলেনি ভাইকে। দুলাভাইয়ের স্বর্ণের দোকানে কাজ করার কারণে বাবুল বিষয়টি টের পেয়েছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন।
অন্যদিকে গতকাল সকালে প্রিয়াংকা ধর স্বামীকে খুনের ঘটনায় বাসায় বিলাপ করছিলেন। তিনি এ সময় নিজের ভাই সম্পর্কে বলেন, ‘আমি তো তাকে বোনের সুখের জন্য আমাকে বিধবা করতে বলিনি। কেন সে এই কাজ করতে গেল। এখন আমি সব হারালাম।’
কোতোয়ালি থানা পুলিশ জানায়, স্বামী অঞ্জন ধরকে (৩৫) খুনের দায়ে স্ত্রী প্রিয়াংকা ধর তার নিজ ভাইয়ের বিরুদ্ধে ঘটনার দিন সোমবার রাতেই মামলা দায়ের করেছেন। কেবল আসামি করা হয়েছে ওই বাবুল ধরকেই। এ ঘটনায় বাবুল ধরের পাশাপাশি প্রিয়াংকা ধরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি বেশ রহস্যজনক মনে করছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।
তাদের মতে, ভগ্নিপতি অঞ্জন ধরকে হত্যার ঘটনায় প্রথমে শ্যালক বাবুল বলেছিল বোনকে নির্যাতন করতো। সেই কারণে তাকে খুন করেছে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে দুলাভাই নাকি পরনারীতে আসক্ত ছিল। এই ব্যাপারে বোন প্রিয়াংকা আবার বলেছেন, নির্যাতন করতো সত্যি।
তবে পরনারীর বিষয়টি তার অজানা। এ কথার প্রেক্ষিতে বাবুল ধর বলেছেন, ভগ্নিপতির দোকানে কাজ করার সুবাধে তিনি পরনারীর সঙ্গে মোবাইলে প্রায়ই কথা বলতে দেখতেন। আর এই ক্ষোভ থেকে দুলাভাইকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন।
থানার একজন এসআই বলেন, এই ঘটনায় বোন প্রিয়াংকা ও ভাই বাবুল ধরকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব বেরিয়ে আসবে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন গত রোববার সকালে তার বোন ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয়। এ সময় বাসায় বাবুল ও তার ভগ্নিপতি ছাড়া আর কেউ ছিল না। তখনই সে শোবার ঘরে ঢুকে ভগ্নিপতিকে ছুরিকাঘাতে খুন করে। পরে লাশটি বস্তাবন্দি করে রাখে।
এরপর বাসার বাইরে তালা দিয়ে রক্তমাখা কাপড়চোপড় একটি খালে ফেলে দিয়ে আসে। বোনকে ফোন করে জানিয়ে দেয়, তার ভগ্নিপতি একটি কাজে মানিকছড়ি গেছেন। স্কুল ছুটির পর যাতে সন্তানদের নিয়ে তিনি (বোন) যেন বাবার বাসায় চলে যান।
এদিকে রাতে বাসায় ফিরে অঞ্জনের স্ত্রী দরজায় তালা দেখে সন্তানদের নিয়ে আবার পাথরঘাটায় বাবার বাসায় চলে যান। বাসায় তালা লাগিয়ে বাবুল চাবিটি নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিল। সকালে পুলিশের সঙ্গে গিয়ে সে নিজেই তালা খুলে দেয়।
নগর পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার আবদুর রহীম বলেন, আমরা জানার চেষ্টা করছি পরকীয়ার বিষয়টি কতটা সত্যি। ধরা দেয়ার পর বাবুল নিজেই আমাদের বলেছে, ভগ্নিপতি অঞ্জনের পরনারীর প্রতি আসক্তি বেড়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে তার বোনকে নির্যাতন করতো। বিষয়টি সে মেনে নিতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও নানা তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে। তাছাড়া অঞ্জনের মোবাইল ফোন রেকর্ড কিংবা কললিস্ট, এসএমএস চেক করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।