সিলেটের কলেজছাত্রী জাফরিনের মৃত্যু আত্মহত্যা নাকি অন্যকিছু এমন প্রশ্ন সামনে রেখেই তদন্ত চলছে। নিজ ঘরে আত্মহত্যা করে থাকলে কেন তিনি এ পথ বেছে নিয়েছিলেন, কারা তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছে এ প্রশ্নও এখন সামনে এসেছে। তাই সবার দাবি ঘটনা সঠিক তদন্তে যা প্রকৃত সত্য তাই যেন বেরিয়ে আসে। এর সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তার যেন সঠিক বিচার হয়। গত ৪ঠা মে ঘরের কড়িকাঠের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগানো মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় জাফরিনের। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার আলিমপুরের মো. নুরুল হক ওরফে রুনু মিয়ার মেয়ে জাফরিন। এ ব্যাপারে প্রথমে একটি অপমৃত্যুর মামলা হলেও পরে জাফরিনের পিতা রুনু মিয়া মেয়ের আত্মহত্যার পেছনে যারা জড়িত তাদের বিচার দাবি করে আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্ত চলছে। জাফরিনের পরিবারের দাবি, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি জাফরিন নাসরিনের সঙ্গে এমসি কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র ও সুহেল নামে পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তির সখ্য গড়ে ওঠে। তিনি নিজেকে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বলেও পরিচয় দেন। এমনকি তাকেও যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখান। এজন্য সুহেলের হাতে জাফরিন নগদ ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং পরে সুহেলের মামা ও মায়ের উপস্থিতিতে আরো ২৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কারও তুলে দেন। এই স্বর্ণালঙ্কার খোয়া যাওয়ায় এক সময় পরিবারের জেরার মুখে জাফরিন সবকিছু পরিবারকে জানিয়ে দেন। সুহেলকে সেগুলো ফেরত দেয়ার জন্যও বলেন জাফরিন। সুহেল তা ফেরত দিতেও রাজি হন। পরে জাফরিনের পরিবার জানতে পারে সুহেল ভুয়া নাম পরিচয় দিয়েছেন। এবং তার ঠিকানাও ভুল। এ ঘটনায় জাফরিনের বাবা ২০১৬ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি বিদেশ নিয়ে যাওয়ার মিথ্যা প্রলোভন এবং টাকা আত্মসাতের ঘটনায় একটি মামলা করেন। জাফরিনের সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথন রেকর্ডও পুলিশের হাতে তুলে দেন তিনি। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে সুহেলের আসল নাম লিটন। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গুলডোবা ইউনিয়নের ককুরশি গ্রামের মৃত সুজন মিয়ার ছেলে তিনি। মা ও মামার সঙ্গে বুবিরবাক গ্রামে থাকেন। পুলিশ লিটনকে না পেয়ে তার মামা ওসমান গনিকে আটক করে। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। এদিকে স্বর্ণালঙ্কার ফেরত দেয়ার নির্ধারিত দিনে লিটনের ফোন বন্ধ পান জাফরিন। পরে এক অপরিচিত ব্যক্তি ওই নম্বর থেকে তাকে ফোন করে জানান, লিটন সিলেটের কামালবাজার এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন জাফরিন। এরই একপর্যায়ে গত ৪ঠা মে শবে মেরাজের রাতে তিনি আত্মহত্যা করেন। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। এদিকে জাফরিনের পিতা নুরুল হক গত ২৫শে আগস্ট মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনায় লিটন, তার মা ও মামার বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে মোগলাবাজার থানা মামলা নেয়নি। পরে ২৯শে আগস্ট তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। পরে আদালতের নির্দেশে মোগলাবাজার থানা ৮ই সেপ্টেম্বর নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। বর্তমান মামলাটি তদন্তাধীন। জাফরিনের স্বজনদের দাবি তদন্তে সত্য ঘটনাটি বেরিয়ে আসুক। যারাই জাফরিনের মৃত্যুর জন্য দায়ী তাদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.