নারী হওয়াতে অস্ত্র বিক্রিতে ভালো সুবিধা পাওয়া যায়। তাদেরকে সন্দেহ করা যায় না। পুলিশের চোখ এড়িয়ে বোরখা কিংবা ভারী কোন কাপড় পরে সহজে পার করে দেয়া যায় একে-৪৭ থেকে দেশীয় পিস্তল। অস্ত্র বিক্রি করে মাসে আয় হয় ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। ঠিক এভাবেই ধরা পড়ার পর নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে কথাগুলো বলছিলেন ২০ বছরের তরুণী শামছিদা। বিবাহিত। তার স্বামীও অস্ত্র ব্যবসায়ী। গত ৫ বছর ধরে স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে জড়িত অপরাধ জগতের সঙ্গে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। গত মঙ্গলবার রাতে অস্ত্র বিক্রির সময় নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে শামছিদা। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশের কাঞ্চননগর এলাকায়। পিতার নাম বাছা মিয়া। আর স্বামীর নাম আবু তৈয়ব। এই তৈয়বও ধরা পড়েছে গোয়েন্দাদের হাতে। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকা থেকে অস্ত্রসহ ধরা পড়ার পর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম কার্যালয়ে। সেখানে একঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এই সময় অস্ত্র বিক্রিতা শামছিদ নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। তার আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে এই অস্ত্র ব্যবসায়ী দম্পতিকে আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এই সময় তাদের কাছ থেকে একটি এলজি ও দুই রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। ধরা পড়ার পর শামছিদা তার স্বামী আবু তৈয়বকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নগরীতে অস্ত্র ব্যবসা করে আসছে বলে পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বায়েজিদ বোস্তামী থানার মসজিদ কমপ্লেক্সের বিপরীতে বিসমিল্লাহ কসমেটিকসের সামনে অভিযান চালানো হয়। এই সময় তারা অস্ত্রসহ আটক হয়। অস্ত্রগুলো বিক্রির জন্য সেখানে অপেক্ষা করছিল। বায়েজীদ থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, শামছিদ অনেক দিন থেকেই অস্ত্র বিক্রি করে। অর্ডার অনুযায়ী সন্ত্রাসীদের জন্য সে দেশীয় পিস্তল ও গুলি সরবরাহ করে। মূলত তার স্বামীর হাত ধরেই সে এই অপরাধ জগতে এসেছে। তিনি আরো বলেন, শামছিদের সঙ্গে নগর সন্ত্রাসীদের অনেকের যোগাযোগ রয়েছে। এসব অস্ত্র কোথা থেকে আসে, কোথায় যায় এই ব্যাপারে সে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে অনেক তথ্য দিয়েছে। আটক হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে শামছিদ অস্ত্র ব্যবসা নিয়ে নানা তথ্য দিয়েছে পুলিশকে। সে জানিয়েছে, প্রতি মাসেই নাকি নগরীতে ছোট পিস্তল বিক্রি হয় গড়ে ১০ থেকে ১২টি। ছিনতাইকারী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবকরা তার কাছ থেকে এসব অস্ত্র কিনে। বান্দরবান ও মহেশাখালীর দুর্গম পাহাড় থেকে এসব অস্ত্র নগরীতে ঢুকছে প্রতিনিয়ত। কেবল সেই নয়, তার মতো এমন অন্তত আরো ১০ থেকে ১২ জন নারী রয়েছে যারা অস্ত্র বিক্রির সঙ্গে জড়িত। শামছিদ জানায়, ধরা পড়ার ঝুঁকি নিয়ে গত ৫ বছর ধরে সে এই ব্যবসা করে আসছে। স্বামী আবু তৈয়বের কাছ থেকে অস্ত্রগুলো নিয়ে সে জায়গামতো পৌঁছে দেয়। এই ক্ষেত্রে পুলিশের সন্দেহের চোখ এড়াতে অনেক সময় সে নিজেই চলে যায়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.