সারা দেশে রেলের ১৭৬১টি লেভেলক্রসিংয়ে কোনো গেটকিপার বা কর্মী না থাকায় মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই রেলে কাটা পড়ছে সাধারণ মানুষ। বাদ যাচ্ছে না প্রাইভেটকার এমনকি গণপরিবহনও। বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। রেলওয়ের ট্রাফিক ও সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে জানা গেছে সারা দেশে রেলপথ রয়েছে ২ হাজার ৮৩৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে লেভেলক্রসিং রয়েছে ২ হাজার ৫৪১টি। তবে এই ক্রসিংগুলোর মধ্যে অনুমোদন রয়েছে মাত্র ৭৮০টির। বাকি ১ হাজার ৭৬১টি লেভেল ক্রসিং কোনো গেটকিপার না থাকায় অনুমোদনহীন ও অরক্ষিত রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ লেভেল ক্রসিংগুলোতে রেল কর্তৃপক্ষ শুধু ‘সামনে রেলক্রসিং, সাবধানে চলাচল করুন’ সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে তাদের দায় এড়াতে চেষ্টা করেছেন। এর বাইরে কিছুই করতে পারছে না। ফলে দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কর্মকর্তারা জানান, শুধু অনুমোদনহীন লেভেলক্রসিংগুলোই মৃত্যুফাঁদ নয়, অনুমোদিত ৭৮০টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে গেটকিপার আছে মাত্র ২৪২টিতে। বাকি ৫৩৮ টি লেভেল ক্রসিংয়ের অনুমোদন থাকলেও কোনো গেটকিপার নেই। শুধু কর্মী দিয়ে সিগন্যাল কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এগুলোও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে। জানা গেছে, রাজধানী ও এর আশপাশের ৩৫ কিলোমিটার রেলপথে ৫৮টি লেভেলক্রসিংয়ের ২৩টিরই কোনো অনুমোদন নেই। এ কারণে ট্রেনগুলো নির্ধারিত গতিতে চলতে পারে না। যার ফলে গত ৩ বছরে শুধু রাজধানীতেই রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৪টি। মারা গেছেন ২৩ জন। তারপরও টনক নড়ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। রেলওয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ৩ বছরে সারা দেশে লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে হাজারটি। এতে মারা গেছে দেড় শতাধিক মানুষ। আহত হয়েছে চারশ’রও অধিক। লেভেল ক্রসিংয়ে রেলরক্ষী না থাকায় ঝুঁঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। অবৈধ ও অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত শতাধিক মামলা করেছে। কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় রেলের প্রায় ২৪ হাজার কর্মী সংকট ছিল। গত দুই থেকে তিন বছরে রেলে ৯ হাজার কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চলতি বছর অনেক গেটকিপার নিয়োগ দেয়া হবে। এ নিয়োগ সম্পন্ন হলে গেটকিপারের সমস্যা মিটে যাবে। তবে অনেক স্থানে অবৈধ লেভেলক্রসিং গড়ে উঠেছে, এগুলো আর মতামত গ্রহণ করে তৈরি করা হয়নি। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জানান, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অনুমোদন না নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় রেলপথের যে কোনো স্থানে লেভেলক্রসিং তৈরি করছে স্থানীয় জনসাধারণ। এবং নগরের ভেতর অনুমোদনহীনভাবে লেভেল ক্রসিং তৈরি করছে সিটি করপোরেশন। রেলওয়ের পক্ষ থেকে অনুমোদনহীন লেভেলক্রসিং নির্মাণে কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় দিন দিন বেড়েইে চলছে অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ লেভেলক্রসিংয়ের এসব মৃত্যুকূপ। কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু রেলওয়ে ও রেল মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্থানীয় জনসাধারণ দিন দিন লেভেলক্রসিং বৃদ্ধি করেই চলেছে, তাই সব লেভেলক্রসিংয়ে গেটকিপার দেয়াও সম্ভব না। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি মন্ত্রণালয়কে দেখিয়ে দেন। যোগাযোগ করা হলে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, রেলের ব্যাপক উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে আমরা দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রকল্প দুটি হলো- লেভেল ক্রসিংয়ের মান উন্নয়ন ও গেটকিপার নিয়োগ। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ১০৩৮ জন ও রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে ৮৫১ জন গেটকিপার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। লেভেলক্রসিং নির্মাণ ও গেটকিপার নিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়ে গেলে আশা করছি অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ের কোনো সমস্যা থাকবে না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.