প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য কাজ করছে বর্তমান সরকার। উন্নত বাংলাদেশে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও উন্নত রাষ্ট্রে করে তুলতে কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে দেশে হতদরিদ্রের হার ১২ ভাগের নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। ২০৪১ সালে ৮ থেকে ১০ ভাগের ওপর প্রবৃদ্ধি নিয়ে যাবে সরকার। দেশের মানুষের খাবার, পুষ্টি, বিশুদ্ধ পানি ও শতভাগ স্যানিটেশন নিশ্চিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
দেশের প্রতিটি মানুষ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমসহ অন্যান্য বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেন তিনি।
নির্বাচিত প্রতিনিধি ও নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের নিজ নিজ এলাকায় কতজন দরিদ্র, গৃহহারা, হতদরিদ্র, বয়োবৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী আছে, তাদের তালিকা বানান। আমরা তাদের ঘর-বাড়ি করে দেব। সারাজীবন যেন ভালোভাবে থাকতে পারে, সে ব্যবস্থা করে দেব। এখানে দারিদ্র্য বলতে কোনো শব্দ থাকবে না। দরিদ্রের হার শূন্যতে নামিয়ে আনতে চাই। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় এমন সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্বের প্রতিটি দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও নিপীড়িত জনগণের পাশে থাকার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নীতি হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদে জিরো টলারেন্স। আমরা সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেব না। সন্ত্রাসে এদেশের ভূখণ্ড ব্যবহারে করতে দেব না। এমনকি প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাস চালানোর জন্য এ ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেব না।
তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সৃষ্টির জন্য ১৪৫টি সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমানে ৫৫ লাখ মানুষ ভাতা পাচ্ছে। অনগ্রসর হিজড়া, বেদে, হরিজনদের ভাতা দেয়া হচ্ছে। চা শ্রমিকদের অনুদান দেয়া হচ্ছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া দারিদ্র্যমুক্ত করতে হলে শুধু ভাতা দিলেই চলবে না। ক্ষুদ্রঋণের পরিবর্তে ক্ষুদ্র সঞ্চয় চালু করা হয়েছে। স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে। পরিবারভিত্তিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের পাশাপাশি দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামছুল হক ও শেরে বাংলা একে ফজলুল হকসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের সদস্যদেরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
এছাড়া জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী ও কামরুজ্জামানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ আন্দোলন সংগ্রামে নিহতদের স্মরণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে আগত দেশী-বিদেশী রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, এদেশের যা অর্জন, তার সবই আওয়ামী লীগ এনে দিয়েছে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ গণঅভ্যুত্থান ও ৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামসহ নানা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে এদেশের মানুষের মুক্তি এনে দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যার নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই সংগঠনের প্রাণ। তাদের ত্যাগ ও পরিশ্রমেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। তারাই সংগঠনকে ধরে রেখেছেন।
এর আগে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি শান্তির প্রতীক পায়রা উড়ান।
১০টা ১৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদের উপস্থাপনায় পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। দুপুর একটা ২২ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য শুরু করেন। দুপুর ২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য শেষ করেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.