বিয়ের দিনে শুভেচ্ছা জানানোর লোকের অভাব হয় না। তাদের পাল্টা ধন্যবাদও দিতে হয় বর বা কনেকে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর একটি গির্জায় বিয়ের আসরের পাত্রীটি সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ দিলেন কেবল একজনকে। অথচ সেই মানুষটাও তাঁর একেবারেই অচেনা ছিল একসময়। কনের নাম হিদার ক্রুয়েগর। বয়স ২৭ বছর। বেশ কয়েক বছর আগে তাঁর যকৃতে মারাত্মক অসুখ ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা বললেন, আয়ু বড়জোর আর কয়েক মাস। হিদার বলেন, ‘ওঁরা আমাকে তাড়াতাড়ি বললেন, যকৃৎ প্রতিস্থাপন করতে হবে। কিন্তু কে দেবে? আর সেই দাতা খুঁজে বের করার জন্য পর্যাপ্ত সময়ও নেই। তখন আমি অনুভব করতাম, শরীরটা কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।’ গল্পে তখনই আবির্ভাব ঘটল নায়কের। তিনি ক্রিস ডেম্পসি। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ের ফ্রাঙ্কফোর্ট এলাকায় চাকরি করেন। কীভাবে যেন খবর পেয়ে যান হিদারের জন্য যকৃৎ লাগবে। মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীতে বছর চারেক কাজের অভিজ্ঞতা আছে ক্রিসের। তিনি জানেন, বিপদ দেখলে পালাতে নেই। তাই মনস্থির করে ফেললেন, হিদারের পাশে দাঁড়াবেন। হিদারের সঙ্গে কখনো দেখাই যে হয়নি ক্রিসের। তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে দেখলেন, যকৃৎ দিতে পারবেন কি না। তারপর সাক্ষাৎ চাইলেন। হিদার বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করি। পুরো প্রক্রিয়াটা কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা করি। খাবারের বিলটা ক্রিসই দিয়েছিল!’ কয়েক দিন পরই দুজন ভর্তি হলেন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। প্রতিস্থাপনের জন্য ক্রিসের যকৃতের প্রায় অর্ধেক অপসারণ করতে হলো। কোনো সমস্যা ছাড়াই প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হয়েছিল। এরপর ক্রিস ও হিদার পরস্পর আরও কাছাকাছি এলেন। এত কাছে যে গত সপ্তাহে হিদারের বিয়ের আসরে হাজির হলেন ক্রিস। অতিথি নয়, বর হিসেবে। পাত্র ছাড়া কি বিয়ে হয়? যকৃৎ দিয়ে দেওয়ার দেড় বছর পর তিনি হৃদয়টাও দিলেন হিদারকে। মানবিক কারণেই শরীরের অঙ্গ দান করেছিলেন ক্রিস। তখন তো তিনি হিদারের কাছে নিতান্তই অচেনা লোক। মোটেও জানতেন না হবু স্ত্রীকেই দিচ্ছেন যকৃৎটা। অন্যের ভালোর জন্যই বেঁচে থাকতে ভালোবাসেন তিনি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.