চলতি বছরের ২০শে ডিসেম্বর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২য় নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচন কমিশন সম্ভাব্য সময় সামনে রেখে কাজ শুরু করেছে। তবে এই সময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করা নিয়ে দেখা দিয়েছে বেশ জটিলতা। সীমানা জটিলতায়ই আটকে যেতে পারে সিটি নির্বাচন। বিগত ২০১১ সালের ১০ই জুলাই ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভা একিভূত করে ৫৩ দশমিক ০৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর ২০১২ সালের ৫ই জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে নতুন করে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের এলাকা ৫৩ দশমিক ৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তন থেকে বাড়িয়ে ১৫০ বর্গ কিলোমিটার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। গত সপ্তাহে স্থানীয় মন্ত্রণালয়ে নতুন এ প্রস্তাবনা পাঠানোর পর চলতি বছরে নির্বাচন সম্পন্ন করা নিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। প্রস্তাবিত নতুন মাস্টারপ্ল্যান ৩ মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করে নির্র্বাচন দিতে হাইকোর্ট থেকে এক নির্দেশনা দেয়ার পর অনিশ্চয়তায় পড়েছে সিটি নির্বাচন। শনিবার দুপুরে উচ্চ আদালতের আদেশের কপি কুমিল্লায় এসে পৌঁছে। জানা যায়, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রস্তাবিত নতুন করে সীমানা বর্ধিতকরণ অংশে বিজয়পুর, চৌয়ারা, গলিয়ারা, পশ্চিম জোড়কানন, জগন্নাথপুর, পাঁচথুবি, দুর্গাপুর উত্তর ও দুর্গাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের আংশিক এলাকা যুক্ত করা হয়েছে। এতে সিটি করপোরেশনের সীমানা প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গত ১৫ই জুন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মাসিক সভায় সিটি করপোরেশনের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের এলাকা ৫৩ দশমিক ৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তন থেকে বাড়িয়ে ১৫০ বর্গ কিলোমিটার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার ৪ মাস পর সেই প্রস্তাবনা গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ নিয়ে গুঞ্জন চলছে। এতে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করা নিয়ে নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে বলে সচেতন মহলের অভিমত। এছাড়াও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কাজী মাহাবুবুর রহমান এবং নগরীর শুভপুরের বাসিন্দা খুরশিদ আলমের ছেলে হাবিব মিয়া গত ৫ই অক্টোবর হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন। এতে আগামী তিন মাসের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সিটি করপোরেশন এলাকা সমপ্রসারণ করে নির্বাচন করার জন্য নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে সিটি করপোরেশন সংলগ্ন এলাকা সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না এই মর্মে এলজিইডি সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৬ জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মো. এজারুল হক আকন্দ এই আদেশ দেন। রিটে এলজিইডি সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সহকারী পরিচালক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, কুমিল্লা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়েছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে পুরুষ ভোটার ৮৩ হাজার ১৯৯ জন ও নারী ৮৬ হাজার ৭৪ জন। প্রথম সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু ৬৫ হাজার ৫৭৭ ভোট পেয়ে বিজয় লাভ করেন। ৩৬ হাজার ৪৭১ ভোট পেয়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যক্ষ আফজল খান এডভোকেট। ওই নির্বাচনে ৯ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে অপর ৭ জনই জামানত হারিয়ে ছিলেন। সিটি করপোরেশনের নতুন প্রস্তাবিত সীমানা প্রসঙ্গে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ নুরুল্লাহ জানান, মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবিত নতুন এরিয়ার বিষয়টি একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা, তা হঠাৎ করেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, ইউনিয়নের যেসব এলাকা সিটিতে যুক্ত হবে সেসব এলাকার জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দাদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গণশুনানি ও মতামত নেয়ার পরই সব কিছু চূড়ান্ত হবে, নির্বাচন কমিশন পুরাতন ভোটার তালিকা অনুসারেই নির্বাচন করবে বলে। কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু জানান, ‘সীমানা জটিলতা নিয়ে কেউ উচ্চ আদালতে মামলা করে থাকলে এতে তার কিছুই করার নেই, মামলার বাদীই সব জানেন।’ জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, সিটি নির্বাচন সংক্রান্তে উচ্চ আদালতের যে আদেশ পাওয়া গেছে এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যেই কুমিল্লা সিটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে কমিশনের প্রস্তুতি রয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.