চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো ও একই সঙ্গে রপ্তানি ও দেশের চায়ের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চা শিল্পের কৌশলগত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশের ‘চা শিল্পের উন্নয়নের পথ নকশা’ করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ নিয়ে এখন কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। রফতানি বৃদ্ধির হার চায়ের উৎপাদন ৬৭ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন কেজি থেকে ১০০ মিলিয়ন কেজিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আর সে জন্য ৯৬৭ কোটি ব্যয়ে ১২ বছর মেয়াদি একটি উন্নয়ন কর্মকৌশল তৈরি করা হয়েছে। উন্নয়ন কর্মকৌশল বাস্তবায়নের জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তির জন্য ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। বাস্তবায়নযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপে রয়েছে বৃহত্তর পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায় চা চাষের সম্প্রসারণ। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এই প্রকল্পটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের ১০ই নভেম্বর অনুমোদন দিয়েছে বলে বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। চলতি বছর ২২শে ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্পের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৩৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার ছাড় করার অনুমোদন দেয়। লালমনিরহাট জেলায় ক্ষুদ্রায়তন চা চাষ সম্প্রসারণের জন্য ৪৪৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকার ব্যয় সাপেক্ষে আরো একটি প্রকল্প বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের ১৭৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পার্বত্য চটগ্রামে চা চাষ সম্প্রসারণের জন্য ৯৯৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব আকারে দেয়া হয়। কিন্তু সেই প্রস্তাবনা আবার সংশোধন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তাছাড়া শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটকে আরো আধুনিকায়নের জন্য ৬৯৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ চা বোর্ড চা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের স্বার্থে আরো একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ১০০ কোটি ঋণ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে দেয়ার জন্য একটি প্রশাসনিক আদেশ জারি করেছে। এই ঋণের সুদের হার মাত্র ৯ শতাংশ। বর্তমানে চা শিল্পে গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ১৮টি উচ্চ ফলনশীল ক্লোন, ৪টি বাই ক্লোনাল ও ১টি পলি ক্লোনাল বীজ অবমুক্ত করেছে। শিগগিরই অবমুক্তির পথে রয়েছে বিটি-১৯ ও বিটি ২০। এছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন ডিসিপ্লেনে ৫৫টি গবেষণার কাজ চালু রয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের চায়ের মান বাড়ানোর জন্য বায়োটেকনোলজি তথা টিস্যুকালচার গবেষণাগারের যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। চা বাগানে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ন্যায্য মূল্যে ১৩ হাজার ১৪ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার, ৩ হাজার ১৮১ টন টিএসপি, ৬ হাজার ৭৪২ টন এমওপি ও ৫৮২ টন ডিএপি সার চায়ের বাগানে অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয় বলে জানা গেছে। এদিকে দেশে চলতি বছরের জুন ও জুলাইয়ে চা উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৫ সালে জুনে চা উৎপাদন হয়েছিল ৬৯ লাখ ৪৫ হাজার কেজি। আর এ বছর উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ ২৭ হাজার কেজি। উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মৌসুমে চা উৎপাদনে রেকর্ড হতে পারে বলে চা বোর্ড সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। চা উৎপাদন বাড়াতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, হ্যাঁ চা শিল্পের উন্নয়নের পথ নকশা একটা ছক আমাদের আছে। যেটি আমরা পরিকল্পনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। পরিকল্পনা কমিশন পর্যন্ত গিয়েছে। উনারা কিছু অবজারভেশন দিয়ে চা বোর্ডে পাঠিয়েছেন। আর এগুলো নিয়ে কাজ করছি। চা শিল্পের উন্নয়নের পথ নকশা বানানো হয়েছে। এটা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.