মামলার রায় কী হবে, সেটা আগে থেকেই বলে দেওয়া সম্ভব? তা-ও আবার একটা যন্ত্রের পক্ষে? যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক বলছেন, হ্যাঁ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র বা রোবট ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের শতাধিক মামলার পরিণতি সম্পর্কে আগেই বলে দিতে পেরেছে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল), শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকেরা বলছেন, যন্ত্রটি বিভিন্ন মামলার রায় আগাম বলে দেওয়ার ব্যাপারে ৭৯ শতাংশ ক্ষেত্রে নির্ভুল ছিল। সাংবাদিকতা, আইন ও হিসাব বিজ্ঞানের জগতে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। সমালোচকেরা বলেন, আইনের সূক্ষ্ম মারপ্যাঁচ নাকি এ রকম যন্ত্র কখনোই ঠিকমতো বুঝতে পারবে না। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা দলের প্রধান নিকোলাওস অ্যালেট্রাস বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে অনেক ভুল ধারণা চালু আছে। শিগগিরই এমন দিন আসবে, যখন এ রকম যন্ত্রই বিচারক বা আইনজীবীর জায়গা নিয়ে নেবে। গবেষণায় তাঁরা দেখেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন-ব্যবস্থা খুব দ্রুত বিভিন্ন মামলার ধরন আঁচ করতে পারে। আর সেটার ভিত্তিতেই সম্ভাব্য রায় বা পরিণতি বলে দিতে পারে। গবেষকেরা ইংরেজি ভাষায় লেখা ৫৮৪টি মামলার কাগজপত্র ঘেঁটে দেখেছেন। সেগুলো মানবাধিকার সনদের তিনটি ধারার সঙ্গে মেলে। গাণিতিক একটি পদ্ধতির সাহায্যে তাঁরা দেখেছেন, কোথায় সনদের ‘লঙ্ঘন’ হচ্ছে আর কোথায় হচ্ছে না। পক্ষপাত বা ভুল ব্যাখ্যা ঠেকাতে তাঁরা একই সংখ্যক লঙ্ঘন এবং অলঙ্ঘনের নমুনা সংগ্রহ করেন। গবেষণা প্রতিবেদনের আরেক লেখক ভ্যাসিলিওস ল্যাম্পোস বলেন, আদালতের রায়ের পরিবর্তে উত্থাপিত আবেদনগুলো ব্যবহার করে তাঁরা সেই গাণিতিক পদ্ধতির কার্যকারিতা যাচাই করেন। এ ক্ষেত্রে আদালত থেকে প্রকাশিত সারসংক্ষেপের ওপর নির্ভর করেননি। পরবর্তী ধাপে গবেষকেরা আরও বেশি তথ্য-উপাত্ত দিয়ে ওই পদ্ধতি পরখ করেন। অ্যালেট্রাস বলেন, এবার যন্ত্রটির সাহায্যে বিভিন্ন মামলার সাক্ষ্য বা আইনজীবীদের নেওয়া বিবৃতিও যাচাই করে দেখতে হবে। আইনি অনেক প্রতিষ্ঠানও আজকাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে অনেক আইনি তথ্য ঘেঁটে দেখার কাজ শুরু করেছে। তবে কোনো তথ্যের নেপথ্যের অভিজ্ঞতা বা বিস্তারিত প্রেক্ষাপট সরাসরি বুঝে নেওয়ার সুযোগ কম। আর এখানেই যন্ত্রের সীমাবদ্ধতা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.