ফুসলিয়ে জাহানারাকে উদ্দিনের টিলায় নিয়ে যায় ইকবাল। নানা প্রলোভন দেখিয়ে মোবাইল ফোনে তার অশ্লীল দৃশ্য ধারণ করে। এরপর মোবাইলে ধারণ করা জাহানারার সেই অশ্লীল দৃশ্য ছেড়ে দেয় বিভিন্ন মোবাইল ফোনে। একপর্যায়ে জাহানারার ভাইয়ের মোবাইলেও পৌঁছে যায় সেই ভিডিও ফুটেজ। আর এসব জানার পর আর নিজেকে সামলাতে পারেননি জাহানারা। ক্ষোভে-দুঃখে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন তিনি। দুই সন্তানকে রেখে পরপারে পাড়ি জমালেন সিলেটের জাহানারা। আলোচিত এ ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের শাহপরান এলাকার সিরাজনগরে। জাহানারার মৃত্যুতে শোকাহত মা কমলা বিবি দমে যাননি। বিচার চেয়ে বখাটে ইকবালের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে থানায় করেছেন মামলা। এদিকে মামলা দায়েরের পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ইকবাল। কিন্তু মামলা তুলে নিতে এখন কমলা বিবিকে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে ইকবালের সহযোগীরা। এ হুমকির ঘটনায়ও থানায় জিডি দায়ের করেছেন কমলা বিবি। সিলেট শহরতলির সিরাজনগর গ্রামের মেয়ে জাহানারা বেগম। প্রায় ৭ বছর আগে জাহানারা বেগমের বিয়ে হয় একই এলাকার শাহাবউদ্দিনের ছেলে আবদুর রবের সঙ্গে। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের সংসারে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। পরে আরো এক সন্তানের জন্ম হয়। প্রায় দুই বছর আগে আবদুর রবের সঙ্গে জাহানারা বেগমের বিরোধ বাধে। এই বিরোধের জের ধরে সন্তান ও জাহানারাকে রেখে এলাকা ছেড়ে চলে যায় আবদুর রব। এ ঘটনার পর দুই সন্তানকে নিয়ে জাহানারা বেগম আশ্রয় নেন মা কমলা বেগমের বাড়িতে। মায়ের কাছে আশ্রয় নিলেও সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জাহানারা বেগম ৯ মাস পূর্বে থেকে কাজ নেন গ্রামের পাশের বিসিক শিল্পনগরীর মধুবন ফ্যাক্টরিতে। প্রতিদিনই জাহানারা ওই ফ্যাক্টরিতে কাজে যেত। ফ্যাক্টরিতে যাওয়া-আসার পথে জাহানারার ওপর নজর পড়ে একই এলাকার ইকবালের। সে জাহানারাকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো। ইকবালের আচরণে জাহানারা রীতিমত আতঙ্কিত ছিল। জাহানারার মা কমলা বিবি জানান, গত ২৭শে অক্টোবর জাহানারা ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার জন্য বের হয়। ওইদিন ইকবাল জাহানারাকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলে নিয়ে যায় বিসিক শিল্পনগরীর পাশে উদ্দিনের টিলায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে প্রলোভন দেখিয়ে মোবাইল ফোনে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে। এরপর জাহানারা বাড়ি ফিরে এলেও কাউকে বিষয়টি জানায়নি। ওই ঘটনার দিন থেকে জাহানারাকে চিন্তিত দেখাতো। এদিকে, বখাটে ইকবাল উদ্দিনের টিলায় জাহানারার অশ্লীল দৃশ্যের ভিডিও ফুটেজটি কেবল তার মোবাইল ফোনেই রাখেনি। ছড়িয়ে দেয় এলাকার বিভিন্নজনের মোবাইল ফোনে। হাত ঘুরে ঘুরে ভিডিওটি চলে আসে জাহানারার ভাই আনোয়ার হোসেনের মোবাইল ফোনে। এরপর বিষয়টি জাহানারাকে জানানো হলে সে অঝোরে কাঁদতে থাকে। এরপর পরিবারের কাছে সে ইকবালের ব্ল্যাকমেইলের ঘটনাটি খুলে বলে। ভিডিও ধারণের পর ইকবাল কু-প্রস্তাব দিতো বলে জানায় জাহানারা। আর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এলাকার মানুষের কাছে অশ্লীল দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ার পর জাহানারা ২৭শে অক্টোবর রাতে ক্ষোভে-দুঃখে বিষপানে আত্মহত্যা করে। জাহানারার মৃত্যুকে কেবল একটি আত্মহত্যা বলে মেনে নেননি মা কমলা বেগম। তিনি তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন শাহপরাণ থানার সিরাজনগরের শাহাব উদ্দিনের ছেলে ইকবালকে। এ ঘটনার পরদিন কমলা বিবি বাদী হয়ে ইকবালের বিরুদ্ধে শাহপরাণ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৭, তারিখ ২৮-১০-২০১৬। ধারা ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি ৮(১)/৮ (২)/৮(৩) এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন। পুলিশ মামলা নিলে এখনও গ্রেপ্তার হয়নি ইকবাল। পুলিশ জানিয়েছে, ইকবালকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এদিকে, দায়ের করা মামলা তুলে নিতে ইকবাল ও তার সহযোগীরা কমলা বিবিকে হুমকি দিয়ে আসছে। এ ঘটনায় কমলা বিবি থানায় জীবনের নিরাপত্তা দাবি করে জিডি দায়ের করেছেন। ওই জিডিতে তিনি দাবি করেন, ইকবালের সহযোগী হয়ে এলাকার সিরাজ তালুকদার, পুতুল তালুকদার, সাহাব উদ্দিন তালুকদার, সুলতান, পাপ্পুসহ কয়েকজন তাকে হুমকি প্রদান করছেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.