২৫শে ডিসেম্বর থেকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল। তবে চ্যালেঞ্জটা এবার দেশের মাটিতে নয়, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। অনেক দিন বিরতির পর অক্টোবর মাসটা বেশ ভালই কাটালো বাংলাদেশ দল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টেস্ট জয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী তারা। কিন্তু এবারের পালা ভিন্ন আঙিকে। প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে মাঠ ও পরিবেশ দুইই ভিন্ন। তাই প্রস্তুতিটা দরকার আগে ভাগেই। শুক্রবার রাতে ২২ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ইনজুরির থেকে তরুণ পেসার মোস্তাফিজুর রহমানকে রাখা হয়েছে প্রাথমিক দলে। এছাড়াও চমক হিসেবে দলে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন থেকে ঘরোয়া লীগ খেলা লেগ স্পিনার তানভীর হায়দার ও অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে আসা ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্তকে। কিন্তু বাদ পড়েছেন দলের পরীক্ষিত দুই পেসার রুবেল হোসেন ও আল আমিন হোসেন। এমনকি রাখা হয়নি অলরাউন্ডার নাসির হোসেনকেও। অবশ্য তাদের রাখা হয়েছে অপেক্ষমাণ তালিকাতে। তবে নাসির হোসেনের বদ পড়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা এখন তুঙ্গে। কিন্তু প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যুক্তিসঙ্গত কারণেই তাকে দলে রাখা হয়নি। প্রাথমিক দল নিয়ে তিনি তুলে ধরেছেন নিজেদের যুক্তি ও ব্যাখ্যা। নাসির হোসেনকে না রাখা প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘নাসিরকে নিয়ে বলতে হয় ও পেস খেলায় দুর্বল। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের মতো পেস-বান্ধব পরিবেশে এটি তাকে পিছিয়ে রাখবে। এছাড়া একই পজিশনের জন্য এখন বেশ কজন ক্রিকেটার আছে। ছয়-সাত নম্বর জায়গায়টায় ওয়ানডেতে এখন আমাদের মোসাদ্দেক এসে গেছে। টেস্টে সাব্বির ভালো শুরু করেছে। তার পর শুভাগতও আছে। আরও আছে সৌম্য সরকার। তাকে আমরা নিউজিল্যান্ড সিরিজে অলরাউন্ডার হিসেবেই চিন্তা করছি।’ নাসির হোসেন এ পর্যন্ত ১৭ টেস্টে ১টি সেঞ্চুরি ৬ ফিফটি হাঁকিয়েছেন। ৩৭.৩৪ গড়ে করেছেন ৯৭৪ রান। উইকেট পেয়েছেন ৮টি। এর মধ্যে তিনি দেশের বাইরে ৬টি টেস্ট খেলেছেন। ৩৪.৬০ গড়ে করেছেন ৩৪৬ রান। টেস্টে তার প্রথম ও একমাত্র সেঞ্চুরিটাও শ্রীলঙ্কার মাটিতে। নাসির হোসেন ওয়ানডেতেও খেলেছেন ৫৮টি ম্যাচ। টেস্টের মতো এখনেও তার একটি সেঞ্চুরি ও ৬টি ফিফটি। দেশের বাইরে খেলেছেন ১৪টি ম্যাচ। ৪টি ফিফটিতে ৪৫.৮৮ গড়ে করেছেন ৪১৩ রান। জাতীয় দলের হয়ে তার খেলা ৩১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ৯টি দেশের বাইরে। অপরাজিত একটি ফিফটি সহ করেছেন ২০.৪০ গড়ে ১০০ রান। ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই নাসির অবেহিলত। স্কোয়াডে থাকলেও তাকে দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবেই দেখা গেছে। নাসিরের তুলনায় শুভাগত হোমকে বেশ ভাগ্যবানই বলা চলে। মাত্র ৮ টেস্ট খেলে ২২.১৮ গড়ে করেছেন ২৪৪ রান। ৮ ওয়ানডেতে ৩৫ গড়ে মাত্র ৭০ রান। ৪ টি-টোয়েন্টিতে ১৭.৫০ গড়ে মাত্র ৩৫ রান করেছেন শুভাগত। সৌম্য সরকারের ফর্ম নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। তিনি আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ড সিরিজেও নিজের ফর্ম ফিরে পাননি। মোসাদ্দেকের ওয়ানডে অভিষেকটা দারুণ হলেও এখনও টেস্ট অভিষেক হয়নি। তবে সাব্বির ভাল ফর্ম দেখালেও তিনি এখন ওয়ানডে ও টি- টোয়েন্টি তিনে খেলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাকে তিনেই খেলাতে চাইছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে টেস্টে তাকে ৭ বা ৮ নম্বরে খেলানো হবে। তাই অন্যদের তুলনায় নাসির সুযোগতো আশা করতেই পারে। বিশেষ করে পারফরম্যান্স বিবেচনায়। অন্যদিকে দুই পেসার রুবেল হোসেন ও আল আমিন হোসেনও নেই এই সফরে। মাশরাফির সঙ্গে তাসকিন আহমেদ ও ইনজুরি থেকে ফেরা মোস্তাাফিজকে রাখা হয়েছে। রাখা হয়েছে আরেক পেসার মো. শহীদ ও অভিষেকের অপেক্ষাতে থাকা শুভাশিষ রায়। রবি পেসার হান্ট থেকে আসা নবাগত ইবাদত হোসেনও আছেন। মোস্তাফিজ নিউজিল্যান্ড সিরিজে ফিরবেন বলে আশাবাদী প্রধান নির্বাচক। তাসকিনও ফিট আছেন প্রাথমিক দলে। তাই ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে মাশরাফির পেস বিভাগের অন্যতম শক্তি হবেন এই দু’জন। যদি মোস্তাফিজ না ফেরেন তাহলে কে? সদ্য ইনজুরি কাটিয়ে ওঠা মোস্তাফিজ কি টেস্টের জন্য ফিট থাকবেন? তাহলে টেস্টে মোহাম্মদ শহীদের সঙ্গী কে হবেন? তাসকিনকে টেস্ট খেলাতে চান না প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে। তাই পেস বিভাগে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। রুবেল হোসেনের বাদপড়া নিয়ে প্রধান নির্বাচক বলেন, আফগানিস্তান সিরিজে ওর বোলিং আহামরি ছিল না। বোলিং ফিটনেসে ওর ঘাটতিটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। মানে ছন্দে থাকা, লম্বা সময় বোলিং করা, এসবে ঘাটতি চোখে পড়েছে।’ আর আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে অজানা কারণে নেই অরেক পেসার আল আমিন হোসেন। তাদের বিকল্প হিসেবে ইবাদত বা শুভাগত কতটা কার্যকর হবেন- প্রশ্নটা বোদ্ধাদেরই। ধারনা করা হচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্ত ও পেসার ইবাদতকে ভবিষ্যতের চিন্তাতেই দলে রাখা হয়েছে। স্পিনার তানভীর হায়দারকে রাখা হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাতে। হঠাৎ আলোতে আসা আরেক স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন পারফরম্যান্সের কারণে প্রধান কোচ হাথুরুসিংহের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। দলে বাঁহাতি ও অফ স্পিনার নিয়ে অবশ্য চিন্তা নেই। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে আছেন তাইজুল। ইংল্যান্ড সিরিজে চমক দেখানো অফ স্পিনার মিরাজও আছেন। দলের প্রয়োজনে বল করতে পারেন সাব্বির রহমান, মাহমুদুল্লাহ এবং মোসাদ্দেকও। আগামী ৯ই ডিসেম্বর ২২ সদস্য নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে অনুশীলনে যাবে বাংলাদেশ দল। সেখান থেকে প্রস্তুতি শেষে নিউজিল্যন্ডের জন্য দল ঘোষণা করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে ১৮ জন ক্রিকেটার নিয়ে নিউজিল্যান্ড যাবে দল।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.