প্রায় ২০ বছর ধরে সংগীত জগতের সঙ্গে যুক্ত শফিক তুহিন। এরই মধ্যে গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী হিসেবে কাজ করে পেয়েছেন সফলতা। অডিও থেকে চলচ্চিত্রের গানেও সুরকার ও শিল্পী হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন। সেরা গীতিকবি হিসেবে অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। গানের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বেশ ধীরে সুস্থে পথ চলে অবস্থান পোক্ত করেছেন তিনি। এক লাফে আকাশ ছুঁতে চাননি। এতটা সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছেন গান নিয়ে। এর মূলমন্ত্র কি? শফিক তুহিন হেসে বলেন, মন্ত্র আসলে কিছুই নয়। সত্যি বলতে আমি কখনও তাড়াতাড়ি পথ চলতে চাইনি। রাতারাতি তারকা হওয়ার বাসনা কখনও মনে উঁকি দেয়নি। গানকে ভালোবেসে কেবল ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছি। এক লাফে হয়তো আকাশ ছোঁয়া যায়, কিন্তু পর মুহূর্তেই মাটিতে পড়ে যেতে হয়। ধীরগতিতে পথ চলায় বিশ্বাসী আমি। এটাই আমার নীতি। আর গান তাড়াহুড়োর বিষয় না। প্রতিনিয়তি আমি সিনিয়রদের কাছ থেকে এ বিষয়টি শিখেছি। এখন আমি আমার জুনিয়রদের এ বিষয়টি সব সময় বলি। এদিকে শফিক তুহিন বর্তমানে গান নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। কদিন আগে প্রকাশিত তার ‘পরাণ’ গানটির মিউজিক ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। বেশ শ্রোতাপ্রিয়তাও পেয়েছে গানটি। আর ঈদে ‘চুপকথা রূপকথা’ নামে তার পঞ্চম একক অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে। এ অ্যালবামের গানগুলো বেশ প্রশংসিত হয়েছে শ্রোতামহলে। সব মিলিয়ে চলতি বছর করা গানগুলোর সাড়া কেমন পেয়েছেন? শফিক তুহিন বলেন, খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। এখন ‘পরাণ’ গানটির সাড়া পাচ্ছি অনেক। অডিও ভালো হলে অল্প বাজেটের ভিডিওতেও ভালো সাড়া পাওয়া যায়। ‘পরাণ’ গানটি এর উদাহরণ। এখন যে বিগ বাজেটের ভিডিও তৈরির একটা হিড়িক শুরু হয়েছে আমি এটার পক্ষে নই। প্রথমে অডিও ভালো হতে হবে। তার সঙ্গে অল্প বাজেটের মানসম্পন্ন ভিডিও হলেও সেটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে। আমি নিজের বেশ কিছু গান দিয়ে এর প্রমাণ পেয়েছি। বর্তমানে শফিক তুহিন লেমিস ও আয়েশা মৌসুমীর জন্যও গান তৈরি করেছেন। এর বাইরে তার কথা ও সুরে ‘আঁকিবুঁকি’ নামের একটি অ্যালবাম প্রকাশ হতে যাচ্ছে। এ অ্যালবামে তিনি নিজে ছাড়াও গেয়েছেন ন্যান্সি, কনা ও ইমরান। এছাড়াও নিজের কথা ও সুরে একটি ফোক মিশ্র অ্যালবামের কাজও করেছেন শফিক তুহিন। অ্যালবামের নাম ‘জনমে জনমে’। এখানে গান গেয়েছেন মমতাজ, চন্দনা মজুমদার ও সালমা। এর বাইরে সিনেমার গান নিয়েও ব্যস্ত শফিক তুহিন। বর্তমানে তিনি করছেন ‘আমি তোমার হতে চাই’, ‘ভালো থেকো’ এবং ‘বিজলি’ ছবির কাজ। নিজের কাজ প্রসঙ্গে শফিক তুহিন বলেন, আমি মানসম্পন্ন কাজ করার চেষ্টা করছি। সেটা সিনেমা হোক আর অডিও। পাশাপাশি সম্ভাবনাময় নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে আমার। এক্ষেত্রে একটা চ্যালেঞ্জও থাকে। এ সময়ে বেশ কিছু ছবির গান তৈরি করছি। আর কজন শিল্পীর জন্যও গান করছি। এগুলো আগামী কিছুদিনের মধ্যেই শ্রোতারা শুনতে পারবেন। এখন অডিও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে? শফিক তুহিন বলেন, চলতি বছর ডিজিটাল প্লাটফর্মে সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে। এখন শিল্পীরা কোনো কিছুর উপর র্নিভরশীল নয়। নিজের গান নিজেই প্রকাশ করতে পারছে। তবে সুখবর হলো পুরোনো কোম্পানিগুলোও যোগ দিয়েছে প্রকাশনায়। অনেক অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে এ বছর। এ ধারাবাহিকতাটা কতটুকু থাকবে আমি জানি না। থাকলে পুরো ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভালো। চলতি প্রজন্মের শিল্পীরা সংগীতে কেমন করছে? ভালো করছে। তবে এ প্রজন্মের অধিকাংশেরই গান শোনা ও বইপড়ার অভ্যাস কম। শোনা ও পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অধিকাংশ সময় চর্চা রেখে ফেসবুকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। আত্মপ্রচারণায় বেশি ব্যস্ত আমরা। এটা একটা খারাপ দিক। গানের ক্ষেত্রে কেবল ভিউ কাউন্ট করা হচ্ছে। মানুষের হৃদয়ে সত্যিকারভাবে কতটুকু জায়গা হলো সেটা নিয়ে ভাবছি না। এমন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।