রাজধানীর কল্যাণপুরের ‘জাহাজবাড়ি’ প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে নিস্তব্ধ। গত সপ্তাহে উঠে গেছে পুলিশি প্রহরাও। প্রধান ফটকের দু’টি দরজায় ঝুলছে তালা। তবে সামনের ৫ নম্বর সড়কটিতে ফিরেছে চিরচেনা ব্যস্ততা। পুলিশের পাহারা উঠে যাওয়ায় এখন স্থানীয়দের চলাচলও স্বতঃস্ফূর্ত। স্বাভাবিক হয়ে এসেছে আশপাশের জনজীবন। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ভূঁইয়া মাহবুব হাসান মানবজমিনকে বলেন, স্থানীয়দের মধ্যে যাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য জাহাজবাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। সমপ্রতি পুলিশ পাহারা উঠে গেছে। যেহেতু বাড়িটি জব্দ বা সিলগালা করা হয়নি সেহেতু হস্তান্তরের প্রয়োজনও পড়ছে না। বাড়িটি যাদের তারাই হয়তো তালা লাগিয়েছে। সরজমিন দেখা গেছে, জাহাজ বিল্ডিং নামে পরিচিত তাজ মঞ্জিলের প্রধান ফটক বন্ধ। পকেট গেটে ও মূল গেটে নতুন দু’টি তালা লাগানো হয়েছে। গত শুক্রবার দুপুরে গেটের ভেতরে দেখা যায়, প্রবেশপথে এলোমেলোভাবে চারটি নীল রংয়ের প্লাস্টিকের চেয়ার রাখা আছে। পাশাপাশি আরো দু’টি কাঠের চেয়ার রয়েছে। বাইরে থেকে ভেতরে নিচতলার একাধিক ফ্ল্যাটের দরজাও খোলা দেখা গেছে। গত ১লা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশে-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এরপরই সারা দেশে জঙ্গিবিরোধী ব্যাপক অভিযান শুরু হয়। গত ২৫শে জুলাই রাতে কল্যাণপুর এলাকায় ব্লক রেইড অভিযান চালায় পুলিশ। তখনই ভবনটির পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে জঙ্গি আস্তানা শনাক্ত হয়। অভিযানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সে রাতেই সরিয়ে নেয়া হয় ভবনটির বাসিন্দাদের। পরদিন সকালে পুলিশের স্পেশাল উইপনস অব টেকটিকস (সোয়াট) টিমের এক ঘণ্টার অপারেশন স্টর্ম-২৬ এ ৯ জঙ্গি নিহত হয়। পালাতে গিয়ে আটক হয় আরো একজন। ওই দিন নিহত জঙ্গিদের লাশ সরিয়ে নেয়ার পর থেকে ভবনটি পুরোপুরি খালি পড়ে আছে। এরপর ৫৩ নম্বর বাড়িটির ৫২ বাসিন্দাকে আটক করে পুলিশ। পরে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে প্রবাসী বাড়ি মালিক আতাহার উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী মমতাজ পারভীন ও ছেলে মাজহারুল ইসলামকে ভাড়াটিয়াদের তথ্য না দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় কারাবরণ করতে হয়। পরের মাসে এ বাড়ির ভাড়াটিয়ারা পর্যায়ক্রমে ওই বাসা থেকে নিজেদের মালামালও সরিয়ে নেন। গত শুক্রবার পরিদর্শনে গিয়ে বাড়িটির বাইরে তালা থাকায় ভেতরে প্রবেশ করা যায়নি। দ্বিতীয় তলায় থাকতেন বাসা মালিকের পরিবার। ওই ফ্ল্যাটের বেলকনিতে এখনো একটি পর্দা ঝুলতে দেখা গেছে। অপর সব ফ্ল্যাট ফাঁকা। জাহাজবাড়ির সামনে ও পাশে কয়েকটি ‘ঘর ভাড়া’র সাইন বোর্ড এখনো ঝুলছে। তবে নেই ভাড়া নিতে আগ্রহীদের দৌড়ঝাঁপ। আছে কেবল কৌতূহলী দৃষ্টির চাহনি। তবে কল্যাণপুরের আশেপাশের এলাকাসহ জাহাজ বিল্ডিংয়ের সামনের ৫ নম্বর সড়কে এখন আগের চিরচেনা ব্যস্ততা ফিরে এসেছে। ৫ নম্বর সড়কটি কল্যাণপুর আবাসিক এলাকার প্রধান সড়ক এবং ৩ নম্বর সড়কের সংযোগ সড়কও বটে। তাই দূরত্ব কমানোর জন্য স্থানীয়রা আগে এই সড়কটি ব্যবহার করতো। পুলিশি অভিযানের পর থেকে সড়কটিতে যান চলাচল একেবারে কমে গিয়েছিল। কেবল ওই সড়কের বাসা মালিক ও ভাড়াটিয়ারাই তা ব্যবহার করে আসছিলেন। পুলিশি অভিযানের পর থেকে তিনমাস ধরে জাহাজ বিল্ডিংয়ের প্রধান ফটকে পুলিশের অবস্থান থাকাকালেও স্থানীয়রা সড়কটি এড়িয়ে চলতেন। সমপ্রতি পুলিশ পাহারা উঠে যাওয়ার পর থেকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আশেপাশের বাসিন্দারা সড়কটি ব্যবহার করছেন। চলাচল করছে রিকশা থেকে শুরু করে প্রাইভেট কারও। জাহাজ বিল্ডিংয়ের সামনের ভবনের মুদি দোকান নিউ শাহীন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শাহীন আল হাসান বলেন, ঘটনার পর থেকে জাহাজবাড়ির মালিক ও তাদের স্বজনদের এই বাসায় আসতে দেখিনি। কয়েকদিন আগ পর্যন্ত পুলিশি পাহারা ছিল। এখন পুলিশ ভবনের গেটে তালা লাগিয়ে চলে গেছে। মাঝে মাঝে এসে তদারক করছে। ধীরে ধীরে এলাকার পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। গত সপ্তাহ থেকে এই সড়কের আগের চিত্র ফিরে এসেছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.