কথা ছিল রোববার বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবেন। দুই মেয়ে নতুন কাপড়ের জন্য বাবার পথ চেয়ে বসে ছিল। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হলো না অবুঝ দুই শিশুর। তার আগেই না ফেরার দেশে চলে যান তাদের বাবা, রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারির কুক সাইফুল ইসলাম চৌকিদার।
এ খবর শুনে শোকে পাথর হয়ে গেছেন সাইফুলের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী সোনিয়া আকতার। অনাগত সন্তানের মুখও দেখে যেতে পারলেন না সাইফুল।
গতকাল শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর সেকশনের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সেখানে তারা দেশি-বিদেশিদের জিম্মি করে রাখে। সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে রাতেই নিহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন এবং গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম। এ ছাড়া এ সময় আহত হন অর্ধশতাধিক পুলিশের সদস্য।
শনিবার সকালে জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। অভিযান শেষে ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী জানান, গুলশানের হলি আর্টিজান থেকে ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের সবাইকে গত শুক্রবারই রাতেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়। অভিযানে সাত সন্ত্রাসীর মধ্যে ছয়জন নিহত হয়।
এর পর নিহত যে পাঁচ জঙ্গির ছবি প্রকাশ করে পুলিশ, তাদের মধ্যে একজন সাইফুল বলে নিশ্চিত হয় পরিবার।
সাইফুলের স্ত্রী সোনিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এক মাস আগে সে বাড়ি এসেছিল। গত শুক্রবার বিকেলে আমার সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। ঘটনার সংবাদ পেয়ে বার বার তাঁকে ফোন করা হলেও রিসিভ করেনি। এরপর ঢাকায় থাকা আত্মীয়স্বজনরা খোঁজ নিয়ে জানায় সে মারা গেছে।’
‘আমার দুটি মেয়ে এবং অনাগত সন্তানের এখন কী হবে? ওরা কাকে বাবা বলে ডাকবে। কী করে আমি বাঁচব’, কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন সোনিয়া।
তবে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসনিকভাবে তাঁদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
সাইফুলের মৃত্যুর খবর শোনার পর আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীসহ শত শত মানুষ বৃষ্টি উপেক্ষা করে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামের বাড়িতে ভিড় করছে। বাড়িতে চলছে শোকের মামত। তিনি গ্রামের মৃত আবুল হাসেম চৌকিদারের ছেলে।
আজ বিকেলে সাইফুলের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী সোনিয়া আকতার (৩০) তাঁর দুই কন্যা সামিয়া (১০) ও ইমলিকে (৭) নিয়ে একটি কক্ষের মধ্যে আহাজারি করছেন। পাশের কক্ষে মা সমেরা বেগমের (৭০) আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। সন্তানের শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা সমেরা বেগম। তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী যাঁরা এসেছে তারাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না।
কলুকাঠি গ্রামের মৃত আবুল হাসেম চৌকিদারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সাইফুল দ্বিতীয়। তাঁর ছোট ভাই বিল্লাল মালয়েশিয়ায় থাকেন। তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। দীর্ঘ ১০ বছর সাইফুল জার্মানি ছিলেন। তারপর দেশে ফিরে দেড় বছর আগে হলি আর্টিজান বেকারিতে পিৎজা তৈরির কুক হিসেবে কাজ নেন সাইফুল।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.