আগের দিন রাত থেকেই সাজ সাজ রব। বিসিবির একাডেমি ভবনের সামনে বিশাল শামিয়ানা। আধুনিক ধাঁচে তৈরি। স্টিলের কাঠামোতে প্লাস্টিকের কভারে ঢাকা ঘরের মধ্যে প্রায় তিন হাজার মানুষের বসার ব্যবস্থা। তার পাশে দুটি ত্রিপল খাটিয়ে রান্নার আয়োজন। সাদা ভাত, মুরগির রেজেলা, গরুর কালো ভুনা, চট্টগ্রামের বিখ্যাত মেজবানি গোশত আর ডাল রান্নার ধুম। সকাল থেকে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে নিরাপত্তায় কড়াকড়ি। এরই মধ্যে বাবুর্চি আর বেয়ারাদের ছোটাছুটি। শামিয়ানার ভিতরে টেবিলগুলো সাজানো ফুলে। মঞ্চে তিন তিনটি বিশাল এলইডি টিভি। এই বিশাল মেজবান আয়োজনের নেপথ্য কারণ কী! শুধুই কি তিন বছরের সাফল্যগাথা তুলে ধরা! নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য! গুঞ্জন রয়েছে, এই মেজবান বিসিবির আসন্ন নির্বাচনের প্রচারণার অংশও। দুপুর একটায় দেখা হলো অনুষ্ঠান শুরুর তোড়জোড়। দেড়টার মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হলেন। এর আগেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে তিন বছরের ক্রিকেট সাফল্যের প্রমাণ্যচিত্র দিয়ে। মঞ্চে উঠে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান জানালেন, তিন বছরের সাফল্যের জন্য বিসিবির সঙ্গে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ ও সম্মান জানাতেই এ আয়োজন। এখানে তাদের কমিটির সাফল্য নিয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। কিন্তু বিশেষ অনুরোধে তিনি বিশাল টিভি মনিটরের মাধ্যমে একে একে তুলে ধরেন তার নির্বাচিত কমিটির সাফল্যের চিত্র। নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমি যখন বোর্ডের দায়িত্ব নিই তখন দেশে এসে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলাম এখানে সব আছে। আমি যে কাজটি করতে চাই তা হলো ক্রিকেটারদের মধ্যে পেশাদারিত্ব আনা। সেটিই করেছি। এখানে আমি কোনো প্রেজেন্টেশন করতে রাজি ছিলাম না। কিন্তু সবার অনুরোধে আমাদের কিছু বিষয় তুলে ধরছি।’ অনুষ্ঠানে শুরুতেই উপস্থিত থাকার কথা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। কিন্তু তিনি আসেন অনেক পরে। তিনি এলে তার হাতে সম্মাননার ক্রেস্ট তুলে দেন বিসিবি সভাপতি। এর আগে বিসিবির সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রামের মেয়র আজম নাসির উদ্দিন হাজির হন অনুষ্ঠানে। এসেছিলেন ঢাকা সিটি উত্তর-এর মেয়র আনিসুল হকও। উপস্থিত ছিলেন বিসিবির সব পরিচালক। অন্যদিকে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মতুর্জা থেকে শুরু করে সব ক্রিকেটারই চলে আসেন অনুষ্ঠানস্থলে। পুলিশ কমিশনার ও পুলিশের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, র্যাবের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, ক্লাব কর্মকর্তা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাবেক ক্রিকেটার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মঞ্চ থেকে নাজমুল হাসান ক্রিকেটারদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এখানে আমি ও আমার কমিটি যখন কাজ শুরু করে তখন সবই ছিল। কোনো কিছু যে আমরা নতুনভাবে শুরু করেছি তা নয়। আমাদের বিশ্ব সেরা ক্রিকেটার ছিলেন সাকিব আল হাসান। মাশরাফি, তামিম, মুশফিকদের মতো ক্রিকেটারও ছিল। আমি বলবো এই সফল্য আসলে তাদেরই হাত ধরে। আমি তাই বাংলাদেশের সকল ক্রিকেটারকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’ এরপর তিনি একে একে বিসিবিতে তাদের কমিটির নেয়া স্টেডিয়াম নির্মাণ থেকে শুরু করে সব ধরনের উন্নয়ন ও কার্যক্রমের বর্ণনা দেন। সব শেষে তিনি ক্রিকেটের সাফল্যের জন্য ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও। এরপরই শুরু হয় খাওয়ার ধুম। জানা যায়, বিসিবি আমন্ত্রণ জানিয়েছিল যতজনকে তার চেয়ে বেশি মানুষের আগমন ঘটে মেজবানে। একপর্যায়ে মিরপুর শেরে বাংলা মাঠের ফটকগুলোও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন মানুষের ঢল ঠেকাতে। এরপর বোর্ড সভাপতি পরিচালকদের নিয়ে যোগ দেন কার্যনির্বাহী কমিটির সভায়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.