স্টাফ রিপোর্টার তৈরি পোশাকশিল্প প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবন ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’ ১৮ তলা ভবন অবিলম্বে ভেঙে ফেলতে বিজিএমইএকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। রায়ে বলা হয়েছে, বিজিএমইএ-কে নিজ খরচে ভবনটি ভাঙতে হবে। বিজিএমইএ এই নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ওই ভবন ভাঙতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এজন্য বিজিএমইএ’র কাছ থেকে খরচ নেবে। রায়টি দ্রুত কার্যকরের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে রাজউককে রায়ের কপি সরবরাহ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে ৩৬ পৃষ্ঠার এই রায় প্রকাশ পায়। ওই ভবন রক্ষার জন্য হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে বিজিএমইএ’র করা আবেদন গত ২ জুন খারিজ করেন সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ। আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী বিজিএমইএ আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করতে পারবে। আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়েছে, দুটি প্রাকৃতিক জলাধার বেগুনবাড়ি খাল ও হাতিরঝিল লেকের ওপর ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই জলাধার দুটি থেকে পানি ক্যানেলের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা নদীতে গিয়ে পড়ে। রাজধানী ঢাকাকে জলাবদ্ধতা ও বন্যা থেকে রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এ দুটি জলাধারের। এছাড়া এই দুটি জলাধারকে ঘিরে সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য সরকার এক হাজার ৪শ’ ৮০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে। এ অবস্থায় হাইকোর্টের রায় বাতিল করার বা হস্তক্ষেপ করা যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ দেখাতে পারেননি আবেদনকারীপক্ষ (বিজিএমইএ)। রায়ে বলা হয়, ভবনটি রক্ষার জন্য আবেদনকারীর আইনজীবীরা বলেছেন যে, এ সংগঠনের সঙ্গে ৪৫ লাখ শ্রমিকের স্বার্থ জড়িত। বিজিএমই-এর কারণে সারাদেশে ৪/৫ কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছে। জিডিপির হার বাড়ানোর জন্য এ সংগঠনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের এ বক্তব্য যুক্তিসঙ্গত হলেও আইন অনুযায়ী জমির মালিকানার যথাযথ কাগজপত্র দেখাতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা অনুপস্থিত। রায়ে বলা হয়, ভবন নির্মাণ আইন-১৯৯৬ অনুযায়ী রাজউক থেকে নকশা অনুমোদনের জন্য জমির মালিকানার প্রমাণপত্র দাখিল করতে হয়। জমির মালিকানা সঠিক হলে আইন অনুযায়ী রাজউক নকশা অনুমোদন করতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে আলোচিত জমিটি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে নিয়েছে বিজিএমইএ। অথচ ইপিবি এই জমির মালিকই নয়। রায়ে জমির মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে আরো বলেন, ভবন নির্মানের জন্য জলাধার আইন-২০০০ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ অনুযায়ী পরিবেশগত ছাড়পত্র নিতে হয়। এখানে সেটা অনুপস্থিত। অবৈধভাবে জমি হস্তান্তরের পর অবৈধভাবে ভহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ভবনটি দেশের সকল আইন লংঘন করে নির্মাণ করা হয়েছেÑ এটা বলতে আমাদের কোনো দ্বিধা নেই। হাইকোর্ট ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল ওই ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো’ উল্লেখ করে তা রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এ রায়ের কপি পাওয়ার পর আপিল বিভাগে আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে বিজিএমইএর। শুনানি শেষে এ আবেদন গত ২ জুন খারিজ করা হয়। অনুমোদন ছাড়াই বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা নিয়ে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি মনির উদ্দিন আদালতে উপস্থাপন করেন। পরদিন বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙার নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট হয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় দেন। ১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে বিজিএমইএ ভবনটি তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছে।
Copyright Daily Inqilab
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.