গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ এলাকার ধানখেত থেকে গত সোমবার রাতে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁর নাম মঙ্গল মাড্ডি (৫০)। এলাকাবাসীর ধারণা, তিনি সাহেবগঞ্জে রোববার বিকেলে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানে পড়ে ছিলেন। পরে মারা গেছেন। মঙ্গল মাড্ডির বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার দান্দুপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত জ্যাঠা মাড্ডির ছেলে। এর আগে রোববার রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ সাঁওতাল শ্যামল হেমব্রম (৩৫) নামের এক ব্যক্তি দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। গোবিন্দগঞ্জ থানার পুলিশ সূত্র জানায়, স্থানীয় লোকজন সোমবার রাত ১০টার দিকে ওই এলাকার ধানখেতে লাশটি পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। থানার ওসি সুব্রত সরকার গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ বলা যাচ্ছে না। দুপুরে সরেজমিনে সাহেবগঞ্জ এলাকায় দেখা গেছে, একদিকে চিনিকলের উচ্ছেদ করা জমি পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। অন্যদিকে চিনিকল কর্মকর্তা ও পুলিশের উপস্থিতিতে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করা হচ্ছে। এখান থেকে সাহেবগঞ্জ-সংলগ্ন সাঁওতাল-অধ্যুষিত মাদারপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাঁওতাল পরিবারের কিশোরেরা তির-ধনুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকজন নারী-পুরুষ বাড়ির উঠানে বসে আছেন। বহিরাগত লোক দেখলেই তাঁরা আতঙ্কিত হচ্ছেন। গত রোববার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। এ ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক কল্যাণ চক্রবর্তী বাদী হয়ে রোববার রাতে ৪২ জনের নাম উল্লেখ প্রায় ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে মামলা করেন। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভ-প্রতিবাদ: সাঁওতাল হত্যার প্রতিবাদে বেলা ১১টায় গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডের আসাদুজ্জামান মার্কেটের সামনে মানববন্ধন করে সিপিবি, বাসদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গাইবান্ধা জেলা শাখা। প্রথম আলোর শেরপুর ও রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, শ্যামল হেমব্রমের হত্যার বিচার দাবিতে দুপুরে শেরপুর শহরের রঘুনাথ বাজার এলাকা এবং রাজশাহীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন হয়েছে। এতে বক্তারা সাঁওতালদের ওপর হামলা-নির্যাতন ও গুলির তীব্র প্রতিবাদ জানান। সেই সঙ্গে অধিগ্রহণ করা জমি প্রকৃত মালিকদের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানান।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.