শত প্রতিকূলতার মাঝেও বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে টিভি চ্যানেলগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু বিদেশি চ্যানেলের নামে টাকা পাচারের এক অশুভ তৎপরতায় গোটা শিল্পই এখন হুমকির মুখে। অনুমোদন ছাড়া ভারতীয় চ্যানেলের নামে দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি কিছু চ্যানেল ডাউনলিংক হচ্ছে। যেগুলোর ভারতে কোনো প্রদর্শন নেই। পাশাপাশি বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন প্রচারের ফলে বড় একটি ক্ষতির মুখে ধাবিত হচ্ছে দেশের মিডিয়া। আর সে সঙ্গে বিদেশি সিরিজগুলো একে একে বাংলাদেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচার শুরু হওয়ায় টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংসের পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। এসব নিয়ে দেশের বিনোদনের সবচেয়ে বড় এ মাধ্যমটির সঙ্গে কাজ করা সংশ্লিষ্ট সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন অনেক দিন থেকেই। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সংকটের কথা সবার মুখেই শোনা গেছে। কিন্তু উত্তরণ নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি। তবে এবার সেই হাল ধরা হয়েছে। টেলিভিশন মাধ্যমের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবার একাত্মতায় সমপ্রতি গঠিত হয়েছে ‘মিডিয়া ইউনিটি’ নামের একটি সংগঠন। দেশীয় সংস্কৃতিকে বাঁচাতে গত ৫ই নভেম্বর ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবুকে আহ্বায়ক ও দেশটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান আরিফকে সদস্য সচিব করে এ সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। সেদিনই সে সংবাদ সম্মেলনে দেশীয় সংস্কৃতিতে রক্ষার আহ্বান জানান তারা। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল একই স্থানে টেলিভিশন মিডিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই এক হয়েছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দেশীয় টেলিভিশন মাধ্যমের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করে আসা ব্যক্তিত্বরা। মিডিয়া ইউনিটির এই আন্দোলনের ডাকে সাড়া দেন তারাও। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর উপদেষ্টা ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বলেন, আজ যে সমস্যা আমাদের মাঝে দেখা দিয়েছে সেটা শুধু মুষ্টিমেয় কিছু লোকের না। আমাদের সবার। এটা আমরা সবাই মিলে বসে সমাধান করতে পারি। এ বিষয়ে আমাদের মাঝেও ভুল-ভ্রান্তি রয়ে গেছে। আমার মনে হয় না এটা নিয়ে মন্ত্রীদের কাছে যেতে হবে। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে এসব রুখে দেয়া সম্ভব নয়। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা কোন ব্যাপার না। কারণ, শেখ হাসিনা এমন একজন প্রধানমন্ত্রী যার সঙ্গে যে কোনো ব্যক্তি দেখা করতে পারেন। তার দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। এই সমাবেশে উপস্থিত হয়ে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত বলেন, মিডিয়ার এই সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। এ পরিস্থিতি এমন ভয়াল রূপ নেবে সেটা আগেও বলেছি। আমি আমার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেছি বিভিন্ন সময়। একটা কথা ঠিক আমরা দিন দিন পর নির্ভরশীল হয়ে গিয়েছি। মিডিয়া ইউনিটির আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক বাবু বলেন, ডাউনলিংকের মাধ্যমে দেশীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছেন এক ধরনের অপরাধী। দেশের মিডিয়া এখন একটি জালিয়াত চক্রের হাতে চলে গেছে। সেজন্য সবার ঐক্য দরকার। মিডিয়া ইউনিটির সঙ্গে সংহতি জানাতে আরও উপস্থিত হয়েছিলেন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান, সংসদ সদস্য ও আরটিভির চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম, একুশে টিভির সিইও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাভিশনের চেয়ারম্যান আবদুল হক, গাজী টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমান আশরাফ, নিউজ টুয়েন্টিফোরের সিইও ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েত, সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলীক, নাট্যকার সংঘের সভাপতি মাসুম রেজা, টেলিভিশন প্রোগ্রাম এসোসিয়েশনস অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার পাঠান, অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্য সচিব অভিনেতা আহসান হাবিব নাসিমসহ টেলিভিশন মাধ্যমের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়া অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ হাসান ইমাম, শহীদুজ্জামান সেলিম, মাহফুজ আহমেদ, আজিজুল হাকিম, জাহিদ হাসান, রোকেয়া প্রাচী, চঞ্চল চৌধুরী, তারিন, বন্যা মির্জা, সুইটি, নাদিয়া আহমেদ, জ্যোতিকা জ্যোতি, মীর সাব্বির, হিল্লোল, মাজনুন মিজান, আজমেরী হক বাঁধনসহ অনেকে। আগামী ৩০শে নভেম্বর শহীদ মিনারে মিডিয়া ইউনিটির পক্ষ থেকে আন্দোলন কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়েছে। এদিন সেখানে টিভি মাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে একাত্মতা প্রকাশ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.