টানা তিনদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যে রাত পর্যন্ত আর্মি স্টেডিয়াম শ্রোতারা আবিষ্ট হয়ে ছিল লোকজ গানের সুরে। সান ইভেন্টসের আয়োজনে এ লোকজ গানের উৎসবের পর্দা নামলো শনিবার। দর্শকদের ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উপস্থিতির মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার শুরু হয় ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট-২০১৬’। উৎসবটির দ্বিতীয় এ আসরের উদ্বোধন ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এবার আগের বারের চেয়েও বেশি নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ উৎসব। সন্ধ্যা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত ফোক গানের রথী মহারথীদের পরিবেশনা উপভোগ করেছেন দর্শক। এবার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, স্পেন, কানাডার খ্যাতিমান শিল্পীরা অংশ নিয়েছিলেন এ উৎসবে। তিন দিন লোকসংগীত শিল্পীদের অনবদ্য পরিবেশনায় বুঁদ হয়েছিলেন দর্শক। অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে দর্শক আয়োজনটি উপভোগ করেছেন। গতবারের চাইতেও বেশি সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছিল দর্শকদের জন্য। বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্টল ছিল স্টেডিয়ামের চারপাশে। একটি বড় আকারের ফুড জোনও ছিল। গানের সঙ্গে হালকা খাবারের সম্মিলনে অন্যরকম তিনটি রাত অতিবাহিত করেছেন দর্শক। এবারের উৎসবে বাংলাদেশ থেকে সংগীত পরিবেশন করেছেন মমতাজ, বারী সিদ্দিকী, টুনটুন বাউল, শফি মণ্ডল, জালাল, আবদুর রহমানসহ অনেকে। এছাড়াও সংগীত পরিবেশন করেছেন ভারতের পবন দাস বাউল, কৈলাস খের, নুরান সিস্টার্স, পাকিস্তানের জাভেদ বশির, কানাডার প্রসাদ, স্পেনের কারেন লুগো অ্যান্ড রিকার্ডো মোরো, যুক্তরাজ্যের সুশীলা রহমান অ্যান্ড স্যাম মিলস প্রমুখ শিল্পী ও গানের দল। উৎসবের শেষ দিন শনিবার নিজেদের গানে ফোক ফেস্ট মাতিয়ে রাখেন বাংলাদেশের সুনীল কর্মকার, ইসলাম উদ্দিন কিসসাকার, বারী সিদ্দিকী, তাপস অ্যান্ড ফ্রেন্ডস, ভারতের নূরান সিস্টার্স, পবন দাস বাউল, যুক্তরাজ্যের সুশীলা রামান ও স্যাম মিলস। এর মাধ্যমে সফল সমাপ্তি ঘটে এবারের আসরের। শেষ দিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে গান পরিবেশন করেন বাংলাদেশের সুনীল কর্মকার ও ইসলাম উদ্দিন কিসসাকার। তাদের বেশ কিছু পরিবেশনায় মুগ্ধ ছিলেন দর্শক। এরপরই মঞ্চে আসেন শেষ দিনের মধ্যমণি খ্যাতিমান লোকসংগীত শিল্পী বারী সিদ্দিকী। কালো সাফারি স্যুট পরে মঞ্চে এসেই বাঁশিতে সুর তুললেন ‘পূবালী বাতাসে। উকিল মুন্সীর বিখ্যাত বিচ্ছেদী গান নিয়ে শুরু করলেন তার পরিবেশনা। এরপর মালিক ছাড়া কোনো গতি নাই, একমাত্র তোর প্রেমের কারণে, ও রজনী হস না অবসান, শোয়া চাঁন পাখি গানগুলো গেয়ে শেষ দিনে লোকগানের অন্যরকম আবহে ভাসান এ শিল্পী। রাত সাড়ে ১০টার দিকে মঞ্চে উঠেন ভারতের জনপ্রিয় ফোক শিল্পী জ্যোতি এবং সুলতানা, যারা নূরান সিস্টার্স নামেই সুপরিচিত। এরপর যৌথভাবে শুরু করেন মন মাতানো পরিবেশনা। একে একে তারা গেয়ে শোনান দামা দাম মাস্ত কালান্দার, আল্লাহু আল্লাহুসহ বেশ কিছু গান। তাদের গানের সঙ্গে আনন্দে ভেসে যায় আর্মি স্টেডিয়ামের কয়েক হাজার সংগীতপিপাসু দর্শক। এরপর মঞ্চে এসে পারফর্ম করে তাপস অ্যান্ড ফ্রেন্ডস। তদের পরিবেশনার পর যুক্তরাজ্যের সুশীলা রামান ও স্যাম মিলস কয়েকটি গান গেয়ে মাতিয়ে রাখেন দর্শক। সর্বশেষ ভারতের জনপ্রিয় শিল্পী পবন দাস বাউল মঞ্চে আসেন। একে একে নিজের জনপ্রিয় সব গানের জাদুকরি পরিবেশনায় আর্মি স্টেডিয়ামের দর্শকদের বুঁদ করে রাখেন তিনি। তিন দিনব্যাপী এ উৎসব সরাসরি সম্প্রচার করে মাছরাঙা টেলিভিশন। এছাড়া ফেসবুকের ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট’ ফ্যান পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে পুরো অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখা গেছে। ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের টাইটেল স্পন্সর মেরিল। এছাড়া নানা দিক থেকে সহযোগিতা করেছে জিপি মিউজিক, ঢাকা ব্যাংক, মাইক্রোসফট বাংলাদেশ, রাঁধুনী, বেঙ্গল ডিজিটাল, আমরা কোম্পানিজ, রেডিও দিনরাত, স্কয়ার হসপিটালস লিমিটেড, এইজিস সিকিউরিটি ফোর্স, দ্য ওয়েস্টিন ও সহজ ডটকম।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.