-কি ? নার্ভাস লাগছে ? আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । আমার হাসি দেখে ভদ্রলোক মনে হয় প্রশ্রয় পেলেন । গলা কাঁপিয়ে হেসে উঠল ! এতো জোরে যে আমার কোথায় যেন এক পিচ্চি জোরে কেঁদে উঠল । ভদ্রলোক আমার দিকে বড় রসিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল -আরে এটা কোন ব্যাপারই না ! এমন ভাবে এটা কোন ব্যাপার না বলল আমার কাছে মনে হল এই ভদ্রলোক দিনে দুতিনটা বিয়ে করে আর দুতিনবার বাসর ঘরে ঢুকে ! ভদ্রলোক আবার বলল -শুন ! একদম চিন্তা করবা না ! আর বউ এর সামনে একদমই নার্ভাস হবা না । আমি মনে মনে বললাম বেটা জীবনের প্রথম বিয়ে করছি প্রথমবারের মত বাসর ঘরে ঢুকবো নার্ভাস হব না তো কি করবো ? আমার পাশে বন্ধু সুমন ছিল ! আমার কানে কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল -অপু এই লোক মনে হচ্ছে বাসর রাত এক্সপার্ট ! এমন ভাবে কথা বলছে যেন কত গুলো ….. আমি সুমন কে থামিয়ে দিয়ে বললাম -চুপ থাক ! ভদ্রলোক আবার বলল -আমার শ্যালিকাকে তো আমি চিনি ! টিয়া যদি বুঝতে পারে যে তুমি নার্ভাস হয়ে গেছ তাহলে কিন্তু সারা জীবনের জন্য তোমাকে বউয়ের সামনে নার্ভাস হয়েই থাকতে হবে । আমি আবার একটু হাসলাম । বললাম -না । নার্ভাস হব কেন ? সুমন বলল -চল অনেক রাত হয়ে গেছে ! এবার বাসর ঘরের ভিতর যা । ভাবী ওয়েট করছে ! সুমনই আমাকে আমার ঘরের দরজার কাছে নিয়ে গেল । কিন্তু আমি ঠিকই বুঝতে পারছিলাম ঘরের প্রতিটি চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে । কি অস্বস্থিকর !! বিয়ে করার সময়ও ঠিক একই অনুভুতিটা হয়েছিল । যখন টিয়াদের বাড়িতে হাজির হলাম তখন থেকেই বাড়ির প্রতিটা চোখা কেবল আমার দিকেই তাকিয়ে আছে ! আর যখন স্টেজের উপর বসে ছিলাম নিজেকে কেমন জানি কোরবানীর পশুর মত মনে হচ্ছিল । কেউ এদিকে আসছি ! আমার দিকে তাকাচ্ছে ! দেখছে আমার সব কিছু ঠিক আছে কি না !! এইজন্য আমি এভাবে বিয়ে করতে রাজি ছিলাম না । বিয়ে করবো আমরা দুজন । কাজী অফিসে যাবো কবুল বলবো সই করবো ব্যাস !! ঝামেলা শেষ ! কিন্তু এখানে যাও ! ওখানে যাও ! একে সালাম কর ওকে সালাম কর ! কি ঝামেলার কাজ !! আর এখন আবার ঝামেলা বাসর রাত !! আল্লাহ জানে ভিতরে কি হবে !! সুমন আমার সাথে আমার ঘরের দরজা পর্যন্ত এল । তারপর বলল -বন্ধু আমার যাত্রা এখানেই শেষ ! এবার তোকে একাই যেতে হবে ! আর শোন ঠিক ঠাক মত বিড়াল মারবি কিন্তু ! -বিড়াল মারবো মানে ? -আরে বেকুব শুনিশ নাই ! বিড়াল কিন্তু বাসর রাতেই মারতে হয় তা না হলে সারা জীবন বউ এর সামনে বিড়াল হয়ে থাকতে হয় ! ওকে যা বেষ্ট অব লাক ! আমি জোরে একটা দম নিলাম । দরজা বন্ধ ছিল । ঠিক বন্ধ না ভেড়ানো ছিল । আমি নক করতে যাবো পেছন থেকে সুমন বলল -কি করছিস ? -নক করছি ? -নক করবি ক্যান ? -আশ্চার্য ! একটা মেয়ে ভেতরে আছে । নক না করে কিভাবে ঢুকে পড়ি ? -ভিতরের মাইয়া তোমার ম্যাডাম লাগে যে বলতে হবে আসতে পারি ! বেটা ঐটা তোর বউ ! ভেতরে ঢুক বেটা ! এবার সুমন আমাকে প্রায় ধাক্কা দিয়েই আমার ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে দিল !
আমি এতো দিন আমি জানতাম বাসর ঘরে মেয়েরা ঘোমটা দিয়ে থাকে । তারপর বর আসে তার ঘোমটা তুলে ! নতুন বউ তবুও লজ্জায় মাথা তুলে না । বর তার হাত দিয়ে নতুন বউয়ের মুখ তুলে ধরবে ! বাংলা সিনেমা গুলোতে তো এই ই দেখে এসেছি ! কিন্তু টিয়া তো দেখি ঘোমটা তুলেই বসে আছে ! খাটের ঠিক মাঝখানে বসে আছে ! অবশ্য মাথায় কাপড় দেওয়া ! আমার সাথে চোখাচোখি হতেই টিয়া একটু হাসলো ! লজ্জা মিশ্রিত হাসি ! আমিও হাসলাম ! ঐ লজ্জা মিশ্রিত হাসি ! এই মেয়েটার সাথে এখন আমার বাকীটা জীনব কাটা্যে হবে ! অদ্ভুদ না ? কদিন আগেও আমি টিয়াকে ঠিক মত চিনতামও ! আর আজ থেকে টিয়া আমার জীবন সঙ্গি ! আমার বিয়ে করা বউ !
আমার মনে আছে প্রথম টিয়ার ছবি যে দিন দেখেছিলাম । চিকন মত একটা মেয়ে ! কিন্তু চেহারায় কেমন একটা মোলায়েম আর মিষ্টি ভাবছিল । ভাবছিলাম বিয়ে যখন করতেই হবে তখন একেই নয় কেন ? আমি বিয়ের জন্য খুব উচ্চ বাচ্চ করি নি ! যা করার আমার মা আর ভাবীই করছিল । কদিন চলে যাবার পর একদিন অফিস যাচ্ছি ভাবি বলল আজ টিয়া তোমাকে ফোন করবে ? আমি ততদিনে টিয়ার নাম টা আসলে ভুলে গিয়েছিলাম । আমি বললাম -টিয়া কে ? ভাবি বলল -হায় হায় ! যে মেয়ের সাথে কয়দিন পরে তোমার বিয়ে হতে যাচ্ছে সে মেয়ের নাম ভুলে গেছ ! তোমার বউ যদি জানে !! -ও ! আমার মনে পড়লো ! যে মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে তার নামটা ভুলে যাওয়াটা অন্যায় ! মনে মনে বললাম বউ জানলে বলবে বিয়ের আগেই এই অবস্থা ! বিয়ের পরেতো ….
আমি ঐদিন একটু অস্থির ছিলাম । সত্যি বলতে কি টিয়ার ফোনের জন্য একটু অস্থির ছিলাম । যে মেয়েটার সাথে বিয়ে হতে যাচ্ছে কদিন পরে তার সাথে আজ কথা হতে যাচ্ছে ! তাও আবার প্রথম বারের মত ! টিয়ার ফোন আসলো লাঞ্চ লাইমে । কাজ কর্ম রেখে বাইরে যাবো ঠিক তখন ! আমি ফোন রিসিভ করে বললাম -হ্যালো ! ওপাশ থেকে খানিক নিরবতা ! তারপর মৃদু কন্ঠে বলে উঠল -অপু…..বলছেন ? অপুর মাঝে একটু আবার গ্যাপ ! -জি বলছি ! আবার খানিক ক্ষন নিরবতা ! তারপর বলল -আমি টিয়া ? -টিয়া ? পাখি ? ওপাশ থেকে যেন একটু হাসির শব্দ শুনতে পেলাম । নিজের ভিতরেই উপলব্ধি করছিলাম যে আমি নিজেও কেমন একটা নার্ভাস হয়ে যাচ্ছি । টিয়া বলল -এখন আপনার লাঞ্চ আওয়ার না ? -হ্যা ! কেন ? -আমি আপনার সাথে একটু দেখা করতে চাচ্ছিলাম ! যদি পসিবস হয় ! -হ্যা সমস্যা নাই ! বলুন কোথায় আসবো ? কোথাও আসতে হবে না । আমি আপনার অফিসের সামনেই আছি । আপন একট নিচে নামুন ! আমি একটু অবাক হলাম ! মেয়েটা নিচে দাড়িয়ে ! সেদিন টিয়ার সাথে বেশ খানিকক্ষনই কথা হল ! বলতে আমার পছন্দও হল টিয়াকে ! মনের ভিতর একটা টেনশন কাজ করছিল টিয়ার আবার পছন্দ হবে তো আমাকে !
সেদিনের টিয়া আর আজকের টিয়ার ভিতর একটু পার্থক্য তো আছেই ! আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে । বিয়ের সময় মুখ দেখাদেখি একটা পর্ব আছে যেখানে বর আর কনে কে একিই সাথে আয়নায় দেখতে হয় ! আজ আয়নায় মুখ দেখার সময় দেখছিলমা টিয়া সবসময় চোখ নিচু করে রেখেছিল । একটি বারের জন্যও আমার দিকে তাকাই নি ! এখনও অবশ্য আর আমার দিকে তাকিয়ে নাই ! অন্যদিকে তাকিয়ে ! আমি খাটের উপর বসতে বসতে বললাম -বিয়ে তাহলে হয়েই গেল ! -কেন আপনার সন্দেহ আছে ? আমি এতো জলদি উত্তর আশা করি নি ! আমি বললাম -আপনি ? -আমি তো তাও আপনি বলেছি ! তুমি তো তাও বল নি ! আশ্চার্য ফাজিল মেয়ে তো দেখতেছি ! লজ্জা শরম কিছু নাই ! বিয়ের রাতে মেয়েদের মুখ থেকে নাকি কথাই বের হয় না আর এই মেয়ের কথার খই ফুটতেছে ! আবার অন্য দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে । ঐ ভদ্রলোক ঠিকই বলেছিল । টিয়ার সাথে সাবধানে কথা বলতে হবে ! আমি ভাবছি টিয়ার সাথে কি নিয়ে কথা বলবো ঠিক তখনই টিয়া বলল -তোমার টুপি কোথায় ? -টুপি ? -টোপর ? টোপর কোথায় ? -বাইরে রয়েছে ! আসলে টোপর পড়তে কেমন জানি লাগছিল ! মনে হচ্ছিল মাথার উপর কেমন একটা তালগাছ নিয়ে ঘুরছি ! আমার কথায় টিয়া ফিক করে হেসে দিল । তারপর বলল -তোমাকে টোপর মাথায় কেমন লাগছিল জানো ? -কেমন ? -আগের দিনে বাংলা সিনেমায় কিছু কমেডি ভিলেন থাকতো না, সে রকম ? -কি রকম ? -এই যেমন মোল্লা টাইপের লোক ! আমার এমন হাসি আসছিল না তোমাকে দেখে !! -আচ্ছা ! বুঝলাম ! আর তোমাকে কেমন লাগছিল বলবো ? -কেমন ? -তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছিল ! এখনও সুন্দর লাগছে ! টিয়া একটু মুখ ভেঙ্গালো আমাকে ! বলল -সুন্দর না ছাই ! এসব হচ্ছে মেয়ে পটানো কথা ! -আচ্ছা মেয়ে পটানো কথা ! আচ্ছা কখন মেয়ে পটানো কথা বলে বলতো ? -কখন? আমি বললাম -মানুষ তখনই মেয়ে পাটানো কথা বলে যখন একটা মেয়ে তার বাগে আসতে চায় না ! তুমি তো অলরেডি আমার আয়ত্তে চলে এসেছো? -আচ্ছা ! তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমার আয়ত্তে চলে এসেছি ! আমি হেসে বললাম -আমার মনে হচ্ছে না । আমি জানি ! -তুমি কচু জানো ! আমাকে আয়ত্তে আনতে তোমার সারা জীবন লেগে যাবে ! এই !! কাছে আসবে না বলে দিচ্ছি ! আমি সত্যি এবার অবাক না হয়ে পারলাম না । আমি নিজের জায়গা থেকে একটুও নড়ি নি আর এই মেয়ে কয় কাছে আসবে না কিন্তু ! মানে আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আমার এখন কাছে যাওয়া দরকার ! এই মেয়ের মাথায় দারুন বুদ্ধি তো ! আমি হেসে ফেললাম আমাকে হাসতে দেখে টিয়া বলল -হাসছো কেন ? -এমনি হাসছি ! তোমার বুদ্ধি দেখে হাসছি ! টিয়ার সারা মুখে কেমন একটা দুষ্টামীর ছায়া লেগে আছে ! এই মেয়ের কাছ থেকে আসলেই সাবধান থাকতে হবে ! আমি ঘড়িতে সময় দেখলাম । একটার বেশি বাজে ! একটু আগে যে বাড়ির ভিতরে যে হইচই হচ্ছিল তা অনেকটাই শান্ত হয়ে গেছে ! আমি টিয়া কে বললাম -ঘুম আসছে তোমার এখন ? সারা দিন অবশ্য অনেক ধকল গেছে । টিয়া আবার কেমন দুষ্টামীর চোখে বলল -এতো ঘুম ? ঘুমাবা ? আবার হাসি ! -আরে বাবা আমার ঘুম আসছে না । তোমাকে বললাম ! খুব কি ঘুম আসছে ? -কেন ? -চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি ! আমাদের বাড়ির পেছনে একটা কানা পুকুর আছে ! ওখানে রাতের বেলা ভুত নামে ! -মিথ্যা কথা ! -চল ! গেলেই টের পাবা ! এখন জোছনা রাত না ? একদম পরিষ্কার দেখা যাবে ! নাকি ভয় পাচ্ছ ? টিয়া আবার আমাকে মুখ বাকিয়ে বলল -আমি ভয় পাই না ! কিন্তু বাসর রাতে কি কেউ ভুত দেখতে যায় ? বাসর রাতে তো …। টিয়া কথাটা শেষ করলো না ! আমার দিকে তাকিয়ে থেমে গেল । ওর চোখে আবারও সেই দুষ্টামী । -বাসর রাতে মানুষ কি করে শুনি ? -আমি কি করে বলবো ? আমি কি এর আগে বিয়ে করেছি নাকি ? -তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি কয়েকবার বিয়ে করেছি ! তোমার দুলাভাইয়ের কাছে জিজ্ঞেস কর নি ! তার কথা শুনে তো মনে হল সে এই সব ব্যাপারে বেশ এক্সপার্ট ! -বলেছে তোমাকে !
আমার ঘরের সাথে গ্রিলের বারান্দা । বারান্দা দিয়ে আমি আর টিয়া বের হয়ে এলাম । প্রথম প্রথম টিয়া ভয় পাবে না বললেও গেট দিয়ে যখন বের হলাম তখন মনে হল ও একটু ভয়ই পেল । চারিদিকে একদম সুনশান নিরবতা ! ঝিঝি ডাকাও বন্ধ হয়ে গেছে ! টিয়া আমার সাথে সাথে হাটতে লাগলো ! আমাকে বলল -আমি তোমার হাত ধরবো একটু ? -ভয় লাগছে ? টিয়া কোন কথা না বলে আমার হাত ধরলো । বিয়ের পর এই প্রথম আমি টিয়ার হাত ধরলাম । কি মোলায়েল একটা হাত যেন ! তার থেকেও বড় এই অনুভুতিটা ! আমি টিয়ার হাতটা আর একটু ভাল করে ধরলাম ! ও তো কেবল আমার হাতটা আলতো করে ধরেছিল আমি ধরলাম আরো ভাল করে ! আগে রাস্তা দিয়ে হাটার সময় প্রায়ই এমন কাপল দেখতাম হাত ধরে হাটতে । আমি অবাক হয়ে তাদের মুখের দিকে তাকাতাম । দুজনের মুখেই আনন্দের একটা আভা দেখতে পেতাম ! ঠিক কি কারনে তারা এতো আনন্দিত আমি বুঝতাম না । কিন্তু আজ যেন আমি কিছুটা হলেও তা উপলব্ধি করতে পারছি ! আমি টিয়াকে নিয়ে পুকুর পারে বসলাম । আগে তো টিয়া কেবল আমার হাত ধরে ছিল । এখন বসার পর আমার আরো কাছে এসে বসলো ! চারিদিকে জোঁছনার আলোতে একাকার । পুকুরের টলটলা পানি ! এক চমৎকার এক দৃশ্য ! মনে হচ্ছে যেন কোন স্বপ্ন দেখছি ! টিয়া বলল -এটা তো কানা পুকুর মনে হচ্ছে না । এখানে কি সত্যি কি ভুত নামে ? আমি হেসে বললাম -আরে বোকা নাকি ? আমি তো ফান করে বলেছি ! টিয়া যেন একটু চুপ করে গেল । আমার কাছে মনে হল তাই । বললাম -কি হল ? -কিছু না । টিয়ার কিছু না শুনে সত্যিই মনে হল কিছু হয়েছে ! কি এমন করলাম যে টিয়ার মুড অফ হয়ে গেল । আমি বললাম -কি হল বল ? এমন চমৎকার একটা রাত এভাবে নষ্ট কেন করছো ?বল প্লিজ ! টিয়া কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল -আমি না মিথ্যা একদম নিতে পারি না । বিশেষ করে প্রিয়া মানুষ গুলোর কাছে থেকে ! -আরে বাবা ! আমি তো জাষ্ট ফান করেছি ! -ফান করেও না । -আচ্ছা ঠিক আছে । এই দেখো তোমার হাত ধরে কথা দিচ্ছি আজকের পর তোমার কাছে আর কখনও মিথ্যা বলবো না । কখনও না ! টিয়া কেবল আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ! যদিও খুব বেশি আলো ছিল কিন্তু আমার কেন জানি মনে হল ওর চোখে পানি চলে এসেছে । আমি বললাম -আমি তো একটা কথা দিলাম । তাহলে তুমিও একটা কথা দাও ! -কি ? -আজকের পর থেকে তোমার চোখে যেন আমি কোনদিন পানি না দেখি ! ওকে ? ডিল ? টিয়া একটু হেসে ফেলল ! বলল -আচ্ছা ! ডিল । আর একটা কথা ! -কি -যখন ঝগড়া বাধবে তখন তুমি কিছু বলবে না । চুপচাপ শুনে যাবে ! তা না হলে কিন্তু তুমুল ঝগড়া বেধে যাবে ! আমি এখনও বিবাহিত জীবন শুরুই করতে পারলাম না এই মেয়ে আগেই ঝগড়ার কথা শুরু করে দিল ! আর মেয়ে বলছে যখন ঝগড়া বাধবে, যদি ঝগড়া বাধে এমন কথা বলে নাই । তারমনে এই মেয়ে আমার সাথে ঝগড়া বাধাবেই ! আমি বললাম -যখন ঝগড়া বাধবে, মানে কি ? তুমি কি আমার সাথে ঝগড়া করবাই ? আমার কথা শুনে টিয়া যেন আকাশ থেকে পড়লো । বলল -আশ্চর্য ঝগড়া করবো না ? বিয়ে করলাম তোমার সাথে আর আমি ঝগড়া রাস্তার মানুষের সাথে নাকি ? -আচ্ছা ! -জি হ্যা ! আজকে বাসর রাত বলে কিছু বলছি না । কালকে থেকে দেখো কথায় কথায় তোমার সাথে ঝগড়া বাধাবো ! এটা করলে কেন ? ওটা করলে কেন ? সেইটা করলে না কেন ? এরকম হাজার টা প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে তোমার জান শেষ করে ফেলবো ! বুঝেছ ? -আচ্ছা ! আমার শ্বশুর মশাই আমার কপালে এমন ঝগড়াটে বউ দিল ! তোমার ছোটা বোন কেই বিয়ে করা দেখি ভাল ছিল ! -কি বললা ? আবার বল ! – না না ! কিছু বলিই নি তো ! বললাম যে আমার শ্বশুর মশাই একদম ঠিক মেয়েটাই আমাকে দিয়েছে । -হুম ! এইটাই মনে রেখ ! আমি মনে মনে হাসলাম । টিয়ার সাথে এতো জলদি এতো সহজ হয়ে যাবো ভাবতে পারি নি । টিয়া আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলছে যেন আমার সাথে কত চিন-পরিচয় ওর । কত দিনের ভাব ! বিয়ের আগে কেবল অল্প কয়দিন আমাদের দেখা হয়েছে । তাও বেশির ভাগ সময়ে টিয়া চুপ করেই থাকতো লজ্জায় ! আর এখন ? মেয়েরা পারেও বটে ! টিয়া বলল -আর শোন ! তুমি কিন্তু আমার উপর রাগ করে থাকতে পারবে না ! মনে থাকবে তো ! আমি কেবল তোমার উপরর অভিমান করবো ! এবং তোমাকেই সেই রাগ ভাঙ্গাতে হবে কিন্তু ! -আচ্ছা ! আর কিছু ? -আর যখন আমার রাগ ভাঙ্গাতে আসবা অনেক গুলো চকলেট নিয়ে আসবা ! চকলেট দেখলে আমি কিছুতেই রাগ করে থাকতে পারবো না ! মনে থাকবে তো !! আমি হাসলাম ! আমার ভাবতেই ভাল লাগছে এই মিষ্টি মেয়েটা আমার বউ ! এর পর থেকে আমার জীবনের সব কিছুতেই এই মেয়েটার ছোঁয়া থাকবে ! সকালের ঘুম থেকে উঠে এই মেয়ে টার মিষ্টি হাসি আমি দেখতে পাবো ! আমি টিয়ার হাতটা আমার ঠোটের কাছে এনে আলতো করে একটু চুম খেলাম । এই জোঁছনার আলোতেও দেখলাম টিয়া একটু যেন লজ্জা পেল ! তারপর ও আমার কাধে মাথা রাখল আলতো করে । কি অদ্ভুদ সুন্দর একটা সময় ! চারিদিকে জোঁছনার আলো ! পুকুরের টলটলা আলো সেই জোঁছনা কে যেন আর সুন্দর করে দিয়েছে ! আমি জোঁছনার জল দেখছি টিয়া আমার কাধে মাথা রেখে আছে । দুজনের চোখেই সামনের অসম্ভব সুন্দর দিনের স্বপ্ন ভাবছে !
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.