মেয়ের নাম রিমা, বয়স ১৭। চাদপুর জেলায় মেয়ের বাসা। বাসায় বাবা,মা আর ছোট ভাই আছে। ছোট থেকেই রিমা তেমন কারো সাথে মিশত না। একা একা থাকত। তার নিজের আলাদা একটা পৃথিবী আছে। সেখানে একটা রাজপুত্র ছিল।কল্পনায় কত কিছু ভাবত। এভাবেই আস্তে আস্তে রিমা বুকের ভিতরে ভালবাসার বিশাল একটা পৃথিবী নিয়ে বড় হতে থাকে। তখন ২০১১ সাল, রিমা এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে। এসএসসির পরে তার স্বপ্ন সে ইঞ্জিনিয়ারিং পরবে। সেই স্বপ্ন নিয়ে সে ঢাকা আসে। তার চাচাত ভাই তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এ ভর্তি করিয়ে দেয়। কেমিক্যাল বিভাগে ঢাকা পলিটেকনিক এ ভর্তি হয়। ঢাকা আসার পরে সে কলেজ হোস্টেল এ ওঠে। কলেজ এ যায়,তার বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য মন দিয়ে পড়াশুনা করে। পড়াশুনার পাশাপাশি সে নাচ, বিতর্ক, বিভিন্ন ক্যাম্প, রোভার আরও বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করত। ২০১১ তে সেরা খুদে বিজ্ঞানী হিসেবে অ্যাওয়ার্ড ও পেয়েছে। এমন করে ই কাটতেছিল তার দিন।
একদিন রিমার বাবা তার জন্য বিদেশ থেকে একটা ফোন পাঠায়। এটাই রিমার জীবনের প্রথম ফোন। সে ত অনেক খুশি ফোন পেয়ে। তখন ২০১২ রিমা প্রথম ফেসবুক এ আইডি খোলে। একটা ছেলের সাথে ফেসবুক এ পরিচয় হয়। ছেলেটা তারি কলেজ এ পরত। মামুন তার নাম।অনেক সুন্দর আর স্মার্ট ছিল।কিন্ত রিমা তখনও গ্রামের পরিবেশ কাটিয়ে শহরে হয়ে ওঠতে পারেনি। তাই মামুন তাকে সবার সামনে চিনেও না চিনার ভান করত। আস্তে আস্তে রিমা আর মামুন দুই জন দুই জনকে ভালবেসে ফেলে। রিমা যদিও সত্যি ভালবাসত মামুন বাসত না। মামুন অনেক মেয়েদের সাথে রাত ভরে কথা বলত।রিমাকে সময় দিত না বললে ই হয়। তাও রিমা অনেক খুশি ছিল।ভাবত এত সুন্দর একটা ছেলে আমার বয়ফ্রেন্ড। কিন্ত দিন দিন মামুন রিমা কে আরও বেশি দূরে সরিয়ে দেয়। রিমা আশায় থাকে কিন্ত মামুন ফিরে আসে না। একদিন রিমার এক ক্লাসমেট সারমিন তাকে ইনবাইট করে তার নতুন বয়ফ্রেন্ড এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে বলে পার্টি দিচ্চে তাই। বিকেল ৩ টা, জিয়া উদ্যান এ রিমা সহ আরও অনেক ক্লাসমেট আসে।
একটু পরেই সারমিন আর তার বয়ফ্রেন্ড আসে। রিমার চোখ দুইটা ছল ছল করছে। কেননা সারমিন এর বয়ফ্রেন্ড আর কেউ না ,তারি মামুন। অথচ কেউ জানেই না মামুন রিমার ভালবাসা। মামুন ভয় পাচ্ছে রিমা যদি সবাইকে বলে দেয়।তাই সে রিমাকে ডেকে বলে দিয়েছে সে যেন কাউকে কিছু না বলে।কারন মামুন রিমার মত এমন গাইয়া একটা মেয়ের সাথে থাকতে রাজি না।রিমা চুপ করে মামুন কে দেখছিল,যেই ছেলেটাকে সে এততা ভালবাসে তার হাতটাও কখনও তার ধরা হয় নি।চোখ মুছতে মুছতে রিমা সেখান থেকে চলে আসে। হাঁটতে হাঁটতে ভাবতেছে কেন এমন করল মামুন। সে দেখতে স্মার্ট না তাই নাকি রিমাই তাকে ভালবাসতে পারে নাই। কাঁদতে কাঁদতে রিমা বাসায় চলে আসে। তার রাত দিন কেঁদে কেঁদে যায়।
এভাবে অনেক দিন কেটে যায়। রিমা সব সময় মন মরা হয়ে থাকত। তার ক্লাস এর সব থেকে ভাল ছেলে ছিল অভি। সে রিমার বন্দুর মত ছিল। সে রিমাক বলে এভাবে মন মরা না থেকে তোকে ভাল একটা জিনিস দেই। দেখবি আর মন খারাপ থাকবে না।সে রিমার ফোন এ উইচ্যাঁট নামে একটা সফটওয়্যার দেয়। আর আইডি ও খোলে দেয়। রিমাকে দেখিয়ে ও দেয় কিভাবে ব্যবহার করবে। রিমা বাসায় এসে প্রথম সার্চ দেয়। লিস্ট এর প্রথম এই আসে অনেক সুন্দর আর ইনোসেন্ট দেখতে একটা ছেলে। সে অনেক ভেবে তাকে এড পাঠায়। কিছুক্ষন পরে ছেলেটি তাকে এড করে। মেয়ে ত অনেক হ্যাপি। তার পর থেকে রিমার জীবন যেন বদলাতে থাকে। ছেলেটির নাম ইমন। রিমা আর ইমন এখন সারাদিন চ্যাট করে। রিমার একার পৃথিবীতে আস্তে আস্তে ইমন ডুকে যায়। এখন রিমা সারাদিন চ্যাট নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। আস্তে আস্তে দুইজন দুইজনকে অনেক ভালবেসে ফেলে। ইমন অনেক ভাল ছেলে।সে রিমাকে অনেক পছন্দ করে। রিমা মাঝে মাঝে ইমনকে বলে রাতে কথা বলার জন্য।কিন্ত ইমন বলে তার বাসায় প্রবলেম আছে,তাই বলা যাবেনা।রিমাও মেনে নেয়।রিমা আর ইমন উই চ্যাট ছারা আর কিছুতে চ্যাট করেনা।ইমন কখনও তাকে ফেসবুক এ অ্যাড করে না। রিমাও কিছু বলে না।এমনি করে দিন যায়।ইমন এর বাসা নওগা। সে মাঝে মাঝে ঢাকা আসে আবার চলে যায়।
তারি মাঝে রিমার সাথে দেখা হয়। রিমার ভাললাগে কারন ইমন তাকে নরমাল ভাবে এ পছন্দ করে। রিমা আস্তে আস্তে নিজেকে বদলাতে থাকে। একটু একটু স্মার্ট হতে থাকে। ইমন তাকে অনেক স্বপ্ন দেখায়। বিয়ে করার স্বপ্ন।রিমা ও তার পৃথিবী জুড়ে শুদু ইমকেই ভাবে। এমন ভাবে ৬ মাস কেটে যায়। ইমন রিমাকে এক ঝোড়া নূপুর দেয়। রিমা ত সেই খুশি। তার সব থেকে পছন্দ হল নূপুর। আরও অনেক কিছু পাঠায়।পুতুল,চকলেট,চাবি রিং আরও অনেক কিছু। রিমার মনে হতে লাগল ইমন ছারা ওর জীবন অন্ধকার। তাই রিমা সিদ্দান্ত নেয় ইমন কে যত তারাতারি পারে বিয়ে করে নিবে।
এই ভেবে সে ইমন কে একদিন ঢাকা আসতে বলে। ইমন বলে আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা কর। তারি মাঝে হটাত করে ইমন রিমা কে মেসেজ করা বন্ধ করে দেয়।রিমা ফোন দিতে দিতে পাগল হয়ে যায়। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রায় ১০ দিন পরে ইমন তাকে মেসেজ দেয় তার দাদু অসুস্থ ছিল। রিমা ইমন এর সব কথা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করত।
ইমন আর রিমা সব প্লান করে ফেলে।তারা বিয়ে করে বাইরে চলে যাবে। সব পেপার জমা দেওয়া শেষ। হঠাৎ একদিন রিমার এক বন্ধু তাকে ফোন দিয়ে বলে কিরে তর বয় ফ্রেন্ড এর নাম ইমন না।রিমা বলে হম কেন। সে বলে রিমা তুই আবারও ঠকে গেলি রে। ইমন ত বিবাহিত। কিছুদিন আগে তার বেবি হয়েছে। রিমা ফোন হাতে ই পরে যায়। তার একার পৃথিবীটা একাই থেকে গেল। সে ইমনকে কিছু বলে না। তার কিছুদিন পরে ইমন ঢাকা আসে। রিমার সাথে দেখা করে। রিমা ইমনকে যতই দেখে চোখ যাপসা হয়ে যায়।ইমন বলে আমার পাগলিটার কি হয়েছে। রিমা ইমনকে শক্ত করে আগলে ধরে। বলে ইমন একটা কথা রাখবা। ইমন বলে বল কি কথা, রিমা বলে একবার বউ বলে ডাকবা। ইমন বলে একবার না হাজার বার বলব আমার বউ,লক্ষি বউ। রিমার শুদু একটাই কথা বলে। মরার পরে তুমি আমার হবা ত। এই জীবনটা না হয় অপেক্ষা করলাম। দেখতে দেখতে কেটে যাবে। ইমন আর কিছু বলতে পারে না। পরের দিন সকাল ৭ টা। ইমন স্টেশনে, রিমা বোরখা পরে আসে। ইমন রিমার কোলে তার বাচ্চকে দেয়। রিমা তার কপালে একটা চুমু দেয়। একটু পরে ট্রেন ছেরে দেয়। ইমন পাগলের মত রিমা কে খুঁজে। রিমা লুকিয়ে ইমনকে দেখে। ট্রেন যাওয়ার সাথে সাথে রিমার কলিজাটা চিরে যায়। তার সব থেকে পছন্দের জিনিসটাও আল্লাহ নিয়ে গেল। আজও রিমা ট্রেন আর শব্দ শুনলে ভয় পায়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.